Thank you for trying Sticky AMP!!

বিসিএসে ৩ কারণে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে

ফাইল ছবি

সরকারি চাকরির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। এর পেছনে মূলত কাজ করছে চাকরির নিরাপত্তা, বেতনসহ আকর্ষণীয় সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি। ক্যাডারভুক্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষা দিতে হয়। এটি বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা নামে পরিচিত। গত ১০টি বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই সময়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণ।

২০০৮ সালে ২৮তম বিসিএসের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ১৬৪ জন। আর ২০১৮ সালে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৪ লাখ ১২ হাজার আবেদন জমা পড়ে।

সরকারি চাকরিতে তরুণদের আগ্রহের পেছনে তিনটি কারণের কথা বললেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন। তিনি বলেন, দেশে শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি চাকরিতে বেতন বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি না হওয়ায় বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

এখন ক্যাডার পদের পাশাপাশি বিসিএসে উত্তীর্ণ বিপুল পরিমাণ আবেদনকারী নন-ক্যাডার পদে চাকরি পাচ্ছেন। এটাও বিসিএসে আবেদন বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক।

ঢাকার শাহবাগে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যত পাঠক পড়তে যান, তার বড় অংশই মূলত বিসিএস পরীক্ষার্থী। দুটি গ্রন্থাগার সকাল আটটায় খুললেও তার আগে থেকেই বাইরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাঠক অপেক্ষা করেন। জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তে যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করা মাহবুবুর রহমান। এই তরুণ বলেন, সরকারি চাকরি করাই তাঁর লক্ষ্য। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (ফল প্রকাশ হয়েছে গত সপ্তাহে) হয়েছেন তিনি। এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

>

বিসিএসের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের
প্রতিবছরই বিসিএসে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে
সরকারি চাকরিতে আগ্রহের পেছনে ৩ কারণ

তরুণদের আগ্রহের কারণে বাজারে বিসিএস প্রস্তুতির বিভিন্ন গাইড বইয়ের বিক্রিও অনেক বেড়ে গেছে। রাজধানীর নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বিভিন্ন ধরনের বই। এই তথ্য সেখানকার বই বিক্রেতাদের। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা সহায়ক বই বিক্রি হয়।

বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য তরুণেরা কতটা ব্যাকুল, তা বোঝা যায় জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যেও। তিনিও প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগে যে পরিমাণ পাঠক আসতেন এখন তার তিন থেকে চার গুণ বেশি আসছেন। গণগ্রন্থাগারে ৬০০ থেকে ৭০০ জনের পড়ার ব্যবস্থা আছে। খুব কম আসনই খালি থাকে।

ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সরকারি চাকরির প্রতি ঝুঁকছেন। প্রতিবছরই বিসিএসে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তাসনিম সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘বড়দের দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে। আমরাও তাই ক্লাসের বন্ধুরা মিলে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন অনেক প্রতিযোগিতা হয়, তাই আগে থেকে না পড়লে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে।’

ব্র্যাক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে পরিচালিত যুব-জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষিত নারীদের মধ্যে ৫৭ ভাগ এবং পুরুষদের মধ্যে ৪২ ভাগ সরকারি চাকরি করতে চান। গত সপ্তাহে এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বললেন, আগে বিসিএস ক্যাডারদের কম বেতন ছিল বলে অনেকে ব্যাংকের চাকরিতে যেতেন। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে সেশনজটও কমে গেছে। এক শিক্ষার্থী একাধিকবার আবেদন করতে পারছেন। এটাও আবেদন বৃদ্ধির একটা কারণ হতে পারে।