Thank you for trying Sticky AMP!!

অপ্রত্যাশিত অবসরে

পুষ্পিতা প্রাপ্তি

আমার মনে হয় মানুষের জীবনে দুটো অধ্যায় আছে। একটা সুখের, আরেকটা দুখের। আহ্নিকগতির মতো জীবনে সুখ-দুঃখেরও পালাবদল হয়। কিন্তু আমরা মানুষেরা কেমন যেন অদ্ভুত স্বভাবের। ভালো সময়টা মনে-প্রাণে উপভোগ করি না, আবার খারাপ সময়ে সেই ভালো সময়টাকেই বড্ড মিস করি।

এত ভারী কথা যে আমি বলতে পারি, তা আমার নিজেরও আগে জানা ছিল না। আদতে পড়ালেখার চাপ সামলাতে গিয়ে চোখ-কান-মাথা সব তো ওই পাঠ্যবইয়ের কাছেই সঁপে দিয়েছিলাম। জীবন নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় আর হয়নি। স্কুলজীবনে টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস ছিল। কলেজে পা রাখতেই কোচিং, প্রাইভেটের ঝক্কি সামলাতে গিয়ে লেখালেখি ভুলে গেলাম। করোনাকালের এই অপ্রত্যাশিত অবসর আমাকে আবার লেখার সুযোগ করে দিল। এ ছাড়া গানের চর্চাও করছি টুকটাক।

একটা সময় ছিল, বৃষ্টি হলে ভীষণ মন খারাপ হতো। এই বুঝি বই-খাতা সব ভিজে একাকার হয়ে গেল। আর এখন রোজ রোজ বৃষ্টির অপেক্ষা করি। ঝুম বৃষ্টি শুরু হলেই এক পেয়ালা কফি নিয়ে বারান্দায় বসে যাই। শতরঞ্জি বিছানো মেঝেতে বসে, কুশনে হেলান দিয়ে চুপচাপ বৃষ্টি দেখি। বৃষ্টিভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নিয়ে, উপন্যাসের পাতায় মুখ গুঁজে সময়
কেটে যায়। আমার বারান্দা থেকে দূরের টিলা দেখা যায়। কোলাহল নেই। মানুষের ঢল নেই। মনে হয় সবুজ গালিচায় মোড়া টিলার সঙ্গে আমি যেন কোনো রেস্তোরাঁয় মুখোমুখি চেয়ারে বসেছি গল্প করতে।

তবে অনিয়ম যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। সকাল সকাল কাজে যাওয়ার তাড়া না থাকায় আমরা প্রত্যেকেই রাতজাগা পাখি হয়ে যাচ্ছি। ধুলোর নগরীতে সারা দিন ছোটাছুটি করে, ক্লাসের বোরিং লেকচার শুনে যখন হাত-পা অবশ হয়ে আসত, তখন বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিলেই দুচোখ ভরে ঘুম নেমে আসত। এখন সেই প্রশান্তির ঘুম আর আসে না।

হলো নাহয় একটু অনিয়ম। তবু মনের ওপর চাপ কমিয়ে শরীরটাকে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করছি। পৃথিবী যখন সুস্থ হবে, তখন আবার ছকে বাঁধা জীবনে ফিরব। এই কটা দিনে আমরা পরিবারের সদস্যদের সর্বক্ষণ পাশে পাচ্ছি। বৈকালিক চায়ের আড্ডায় খোশগল্পে মশগুল হচ্ছি। একে অন্যের প্রতি বোঝাপড়ার যে ঘাটতি ছিল, তা এই অসময়ে বেশ ভালোভাবেই পূরণ হচ্ছে।