Thank you for trying Sticky AMP!!

কেন পড়ব নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা

শুধু শহরের নকশা করাই নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার পাঠ্য নয়। ছবিটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালেয়র। ছবি: সংগৃহীত
ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা নিয়ে বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এই বিভাগের প্রভাষক সাদিয়া আফরোজ

কী পড়ানো হয়

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং—ইউআরপি) বিষয়টি পুরকৌশল বা যন্ত্রকৌশলের তুলনায় নতুন। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই এই বিষয়ের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। অনেকে মনে করে, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আদতে স্থাপত্যের একটি অংশ—যা একেবারেই ভুল।

যারা ইউআরপির সঙ্গে পরিচিত, তাদের মধ্যেও অনেকে মনে করে কোনো একটা শহরের নকশা তৈরি করাই এই বিষয়ের একমাত্র পাঠ্য। কিন্তু নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টা কিন্তু শুধু একটি শহরকে নিয়ে নয়, এমনকি শুধু নগরকেন্দ্রিকও নয়। গ্রাম, শহর, নগর, অঞ্চল, দেশ—সবকিছুর নানা উপাদানই এই বিষয়ের পাঠ্য; হোক ছোট বা বড় পরিসরে।

খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে মূলত যে বিষয়গুলো এই বিভাগে পড়ানো হয় তা হলো:

—হিউম্যান সেটেলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (কীভাবে পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, বর্তমান সময়ে এটা কেন আলোচ্য বিষয়, প্রভৃতি)

—হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট (গৃহায়ণ ও রিয়েল এস্টেটের ধারণা, বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণের ধরন কেমন হওয়া উচিত, নগর এলাকার উন্নয়ন কীভাবে হবে, ইত্যাদি)

—রুরাল অ্যান্ড রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট (গ্রাম ও অঞ্চল পরিকল্পনা কীভাবে করতে হয়, এ ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন প্রভৃতি)

—পরিবেশগত পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (পরিবেশসংক্রান্ত পরিকল্পনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি গুরুত্ব পায় জলবায়ু পরিবর্তনের নানা দিক।)

—পরিবহন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা (এই বিষয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বিষয় নিয়ে চলমান পরিস্থিতি)

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনার একজন শিক্ষার্থীকে চার বছর ধরে এই বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবিক প্রয়োগ হাতে–কলমে শেখানো হয়।

কারা পড়বেন?

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা তাদের জন্যই, যারা নিজের জ্ঞানকে প্রয়োগের মাধ্যমে দৃশ্যমান করতে আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই আমরা অনেক সময় ভাবি—আমাদের চারপাশ, আমাদের শহর কিংবা আমাদের দেশটা যদি এমন না হয়ে অমন হতো! এই ভাবনাগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার যোগসূত্র যারা দেখতে চায়, তাদের জন্যই এ বিষয়। অনেকেরই ক্লাসরুমের গণ্ডিতে বদ্ধ না থেকে জ্ঞানের পরিধি আরও বড় করার ইচ্ছা হয়। চারপাশ থেকে পাওয়া ধারণাগুলো নিয়ে অনেকে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে চায়। কেউ কেউ চান নিজের গ্রাম, নিজের শহরটাকে জেনে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে। এই ক্ষেত্রে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।

তবে এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে হলে অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হওয়া চাই। অনেকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসে এ রকম একটি বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলে, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাকে ভালোবেসে ফেলা সম্ভব। মাঝেমধ্যে ল্যাবের কাজগুলোর জন্য কিছু ফিল্ড ওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। গ্রামে, শহরে, পথেঘাটে ঘুরে বেড়ানো লাগে। সে ক্ষেত্রে একটু পরিশ্রমী হলে কাজটাকে উপভোগ করা সম্ভব। তাই আমি মনে করি, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

ভবিষ্যৎ কী?

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়টি বহুমাত্রিক। একজন শিক্ষার্থীর সামনে অনেক ধরনের রাস্তা খুলে দেয় এই বিষয়। কেউ যদি চাকরি করতে চায়, সেই সুযোগ আছে। আবার কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে চায়, উদ্যোক্তা হতে চায়—সে–ও পড়তে পারে। আবার এই বিষয়ে গবেষণার সুযোগও অনেক। কেউ যদি পরিবহন, পরিবেশ, শহর পরিকল্পনা, ভৌগোলিক তথ্য পদ্ধতি, রিমোট সেন্সিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়, সেই সুযোগও আছে এই বিষয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বিষয়গুলোর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ক্যারিয়ার কোথায়

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পাশাপাশি গবেষণা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ পায়। বিভিন্ন ধরনের সরকারি নগর উন্নয়ন সংস্থা যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, প্রভৃতিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া স্নাতক শেষ করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট এজেন্সি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি ও গবেষণার সুযোগ—একজন শিক্ষার্থীর সামনে নানা ধরনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।