Thank you for trying Sticky AMP!!

ছুটির ফাঁদে লেখাপড়া

শুক্রবার ক্লাস করতে হচ্ছে। স্কুল ছুটির পর অভিভাবকের অপেক্ষায় এই খুদে শিক্ষার্থী l প্রথম আলো

ব্রিটিশ আমল থেকেই ‘ছুটির বিভাগ’ (ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট) হিসেবে পরিচিতি শিক্ষা বিভাগ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আরও কিছু কারণে শিক্ষাব্যবস্থা এখন রীতিমতো ছুটির ফাঁদে পড়েছে। 
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরে সরকারি ছুটি কমবেশি প্রায় ৮৫ দিন। এর সঙ্গে সরকারি স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্রবার) ৫২ দিন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন সরকারি ছুটির মতো শুক্র ও শনিবার দুই দিনই বন্ধ রাখছে, সে ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি দাঁড়াচ্ছে ১০৪ দিন।
দেখা যাচ্ছে, স্কুলভেদে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৩৭ বা ১৮৯ দিন ছুটি। প্রায় দেড় মাস ধরে অবরোধ ও হরতালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা কার্যত বন্ধ। বরং উল্টো ঘটনা হিসেবে এখন কোনো কোনো স্কুল-কলেজ সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এসএসসি ও এইচএসসি—এই চারটি পাবলিক পরীক্ষা চলার সময় যেসব স্কুল-কলেজে কেন্দ্র থাকে সেগুলোতে ক্লাস হয় না।
নিয়ম অনুযায়ী, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক যেকোনো একটি পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুটি পরীক্ষা নেওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে, এরপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও হবে সেখানে। ফলে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দুটি পাবলিক পরীক্ষার কারণে বছরের প্রথম চার থেকে পাঁচ মাস স্কুলটিতে ২০-২৫ দিন ক্লাস হচ্ছে।
ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয়ে এ বছরে ক্লাস হয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন। বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির কারণে বিদ্যালয় খোলা থাকলেও ক্লাস হয়নি। এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে ছুটির দিনে।
তবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, সেন্ট যোসেফ ও হলিক্রসের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
২০১৪ সাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ থাকলেও চলতি বছরটির লেখাপড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই উৎকণ্ঠায় আছেন।
ঢাকার বাইরের একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ৪১ থেকে ৪৫ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় কমিয়ে আনা জরুরি। এসব পরীক্ষা তিন সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের উচ্চমাধ্যমিক ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি পরীক্ষার মাঝে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সুপারিশ করলে মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে তারা সেখান থেকে সরে আসেন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগমও পরীক্ষার সময় কমিয়ে এনে ক্লাসের সংখ্যা বাড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আলাদাভাবে পরীক্ষার কেন্দ্র করা যাচ্ছে না। ফলে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে পরীক্ষার সময়ও কীভাবে ক্লাস নেওয়া যায়, সে জন্য চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে কেন্দ্র থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস নিচ্ছে।