Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন স্বাভাবিক রোজনামচা

এস এম ফুয়াদ হাসান

গত ১৮ মার্চ রাতের ট্রেনে যখন দিনাজপুর ছাড়ি, জানতাম না আবার কবে ফিরব। এখনো জানি না। দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণ নিশ্চয়ই দেশের সবচেয়ে সুন্দর মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে একটি। এ কলেজ প্রাঙ্গণ মানে কারও কাছে সাড়ে সাতটা-আড়াইটার ক্লাস, কারও কাছে লাইব্রেরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লাইব্রেরিতে বসে থাকা, বিকেল হওয়ার আগেই খেলার মাঠে দলবল নিয়ে নেমে পড়া, আনন্দ সরোবরে নিরর্থক বসে থাকা, মাঝরাতে ছাদে গিয়ে আকাশ দেখা অথবা অকারণে হাসপাতাল গেটের কাছে মনজু মামার দোকানে হরেক রকমের চা খেতে যাওয়া। মিছিলের গগনবিদারী স্লোগান, অসহায় মানুষের রক্তের ব্যবস্থা করার জন্য ছুটে বেড়ানো, রাত জেগে ক্যাম্পাসের সংগঠন ঐকতানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, আবার সেই অনুষ্ঠানে পেছনের সারিতে গিয়ে সবাই মিলে উত্তাল ‘দলীয়’ নৃত্য, এ সবই আমাদের ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক চিত্র।

তবে কোভিড-১৯ মহামারি এক ‘নতুন স্বাভাবিক’ অবস্থার জন্ম দিয়েছে। আমি ও আমার মতো অনেকেই মহামারির আগে অভিযোগ করতাম, সময় নেই। সব সময় কিসের যেন তাড়া। এখন আমাদের হাতে অফুরন্ত সময়। আইটেম, কার্ড, টার্ম, প্রফের—ঝক্কি নেই। 

তাহলে কীভাবে কাটছে আমার দিনগুলো? এক কথায় বলতে গেলে, মেডিকেল জীবনের ‘সুমধুর’ পড়াশোনার চাপে এত দিন যে কাজগুলো করতে পারিনি বা শিখতে পারিনি, সেসবই করার বা শেখার চেষ্টা করছি। প্রকৃতির ছবি তোলার শখ উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় থেকেই ছিল। নিজের তোলা ছবিগুলো সম্পাদনার জন্য ইউটিউব দেখে দেখে টুকটাক অ্যাডোবি লাইটরুম আর ফটোশপের কাজ শিখেছিলাম। ছবি সম্পাদনার কাজ আরও ভালোভাবে গুছিয়ে শেখা ও জানার জন্যই মূলত লিন্ডা ডটকমের (বর্তমানে যেটি লিংকড–ইন লার্নিং) সদস্যপদ নিই। মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক সংগঠন মেডিসিন ক্লাবের সদস্য হওয়ায় ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারটির সঙ্গে খানিকটা পরিচিত ছিলাম। মেডিসিন ক্লাবের বিভিন্ন ধরনের পোস্টার বা ব্যানার শুধু ইলাস্ট্রেটরের কাজ না পারার কারণে বাইরের লোকদের দিয়ে করাতে হতো। অনেক সময় দেখা যেত, কাজটা মনের মতো হয়নি।

এবার সুযোগ পেয়ে নিজেই শেখা শুরু করে দিয়েছি। এরই মধ্যে দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য অনুদান সংগ্রহের পোস্টার থেকে শুরু করে মেডিসিন ক্লাব থেকে স্বাস্থ্য দিবস, বাংলা নববর্ষ, ঈদ সবকিছুর জন্যই পোস্টার তৈরি করেছি। বর্তমানে মেডিসিন ক্লাব, এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ শাখার পক্ষ থেকে প্রতিদিন দিনাজপুর জেলার ‘করোনা সর্বশেষ’ প্রকাশিত হয়, সেটিও আমার তৈরি।

টম অ্যান্ড জেরির পাঁড় ভক্ত আমি। ‘কীভাবে বানায়?’ জানার আগ্রহ থাকলেও ‘আমিও এ রকম বানাব’ ভাবিনি। এখন ভাবতে দোষ কী? অ্যানিমেশনের প্রাথমিক কাজও শেখা শুরু করলাম। একদম শূন্য থেকে অ্যানিমেশনের মতো জটিল কাজ হঠাৎ করে শিখতে গিয়ে যা হওয়ার তা–ই হচ্ছে, মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগছে। তারপরও মেডিসিন ক্লাবের হয়ে ‘মাস্ক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম’ নিয়ে সহজ একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও বানিয়েছি। ইচ্ছা আছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে বাংলায় যতটুকু সহজভাবে পারা যায় অ্যানিমেশনের মাধ্যমে বর্ণনা করব। কাজ শুরুও করেছি।

নানা কাজে এভাবে সময় কেটে যাচ্ছে। মার্কিন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ বারবারা জর্ডান বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে তো আমরা এর থেকে পালাতে পারি না।’ অতএব, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকাই শ্রেয়।

চতুর্থ বর্ষ, এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর