Thank you for trying Sticky AMP!!

পা দিয়ে লিখে এগিয়ে যাচ্ছে জসীম

>

পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে জসীম মাতুব্বর। গতকাল ফরিদপুরের নগরকান্দার এম এ শাকুর মহিলা কলেজ কেন্দ্র। ছবি: প্রথম আলো

জন্ম থেকেই জসীমের দুটি হাত নেই। তার বাবা ঢাকায় হকারি করেন। কোনো রকমে তাদের দিন চলে। পড়ালেখা শিখে জসীম অভাব ঘুচাতে চায়।

জন্ম থেকেই জসীমের দুটি হাত নেই। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখেই সে এগিয়ে যাচ্ছে। এবার সে ফরিদপুরের নগরকান্দার লমা নাজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

জসীম মাতুব্বর (১৬) উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের হানিফ মাতুব্বর ও মা তাছিরন বেগমের ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে জসীম বড়। তার অন্য চার ভাইবোনও পড়ালেখা করছে। এর আগে সে এভাবেই পা দিয়ে লিখে ২০১৩ সালে পিইসি ও ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। পিইসি পরীক্ষার সময় তাকে নিয়ে প্রথম আলোয় ‘শেখাতে চায় জসীম’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জসীমের পরিবারকে ২৬ শতাংশ খাসজমি দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। জসীম তালমা ইউনিয়নের মনোহরপুর এম এ শাকুর মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। এ কেন্দ্রে চারটি বিদ্যালয়ের ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে কেন্দ্রের ১০২ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের ৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৯ জন লিখছে হাত দিয়ে। কেবল জসীম মাতুব্বর লিখছে পা দিয়ে। কক্ষের সামনের দিকে ডান পাশে বেঞ্চের জায়গায় চার পায়ার একটি টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার ওপর বসে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলসহ দুই আঙুলে কলম ধরে লিখে যাচ্ছে সে। তার পরনে নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং সাদা শার্ট ও মাথায় সাদা ক্যাপ।

ওই কক্ষের কর্তব্যরত তিন পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, আজিজুর রহমান ও আবদুস সোবাহান বলেন, জমীম ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। কারও সাহায্য নেয়নি। নিজের মনের মতো লিখেছে। পা দিয়ে দ্রুতই লিখতে পারছে। লেখাও বেশ স্পষ্ট।

মনোহরপুর এম এ শাকুর মহিলা কলেজে কেন্দ্রের সুপার রামনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়সহ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে জসীম মাতুব্বরই একমাত্র ব্যতিক্রম। তার দুটি হাত নেই, পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা ওর প্রতি বিশেষ নজর রাখছি।’

পরীক্ষা শেষে কথা হয় জসীমের সঙ্গে। সে জানায়, তারা দিন আনে দিন খায়। তার বাবা ঢাকায় ছোট ব্যবসা করেন। প্রতি মাসে বাড়িতে অল্প কিছু টাকা পাঠান। তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। সে মাসে সরকারিভাবে ৩০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়।

জসীম আরও জানায়, পড়ালেখা শিখে সে সরকারি চাকরি করতে চায়। চাকরি করে সে তার পরিবারের অভাব দূর এবং এলাকায় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। যাতে এলাকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। যাতে তারা নিজেরাই আয় করে খেতে পারে।

জসীমের মা তছিরন বেগম মুঠোফোনে বলেন, ছোটবেলা থেকেই জসীম একটু আলাদা। তার হাত ছিল না। পায়ে চামচ ধরে খাওয়া শিখিয়েছেন তার দাদি। জসীম সব কাজ নিজেই করতে চায়। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে পারে। সে বড়শি দিয়ে মাছও ধরতে পারে।