Thank you for trying Sticky AMP!!

শতবর্ষী ১৬ কলেজের মান উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ১৯, সেখানে একই স্তরের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠদানকারী দেশের শতবর্ষী ১৬টি সরকারি কলেজে এই অনুপাত ১: ১২৭। আছে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট। সুযোগ না বাড়িয়ে ভর্তি করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী। ফলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বছরজুড়ে পরীক্ষার চাপে ক্লাস আরও কমে যায়।

এমন শত সমস্যায় জর্জরিত শতবর্ষী ১৬টি সরকারি কলেজ। কলেজগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পৌনে দুই শ বছরও হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী বাড়লেও সেভাবে সুযোগ বাড়েনি। নানামুখী সংকট আর অপরিকল্পিত কার্যক্রমের ফলে এসব কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে আছে প্রশ্ন।

এখন সরকার ঐতিহ্যবাহী এই কলেজগুলোর শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই সব কলেজের শ্রেণিকক্ষের মানোন্নয়ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করাসহ আরও বেশ কিছু কর্মকাণ্ড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে এই কার্যক্রমটি চলবে। গত বুধবার ওই ১৬টি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা করে বিস্তারিত সমস্যা ও সমাধানে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষার অর্ধেকেরও বেশি হয় এই কলেজগুলোর মাধ্যমে। বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কলেজগুলোতে আরও উন্নতমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মাউশির সূত্রমতে, ‘শতবর্ষী কলেজ উন্নয়ন’ নামের ওই প্রকল্পের জন্য কমবেশি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে। আর্থিক হিসাবসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো ঠিক করে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে।

>* শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৩৩ হাজার, শিক্ষক ২,৬২২ জন
* ‘শতবর্ষী কলেজ উন্নয়ন’ নামে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে


শতবর্ষী এই ১৬টি কলেজ হলো রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, রাজশাহী কলেজ, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, খুলনার ব্রজ লাল (বিএল) কলেজ, বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ও নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজ। এই কলেজগুলোতে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ২২৬ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। শিক্ষক আছেন ২ হাজার ৬২২ জন। একেকটি কলেজে ২০ থেকে ৩৫ হাজার করে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যেমন ১৮৭৩ সালের প্রতিষ্ঠিত ইডেন মহিলা কলেজে ৩৫ হাজার ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ২৭৫ জন। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ২২ হাজার ১৪৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য শিক্ষক আছেন সংযুক্তিসহ (অন্য জায়গায় পদায়ন হলেও সাময়িকভাবে এখানে ক্লাস) ১৯৪ জন। বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য এই শিক্ষক যথেষ্ট নয়। কমবেশি সবগুলো কলেজেই শিক্ষকের সংকট রয়েছে।

মাউশির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কলেজগুলোতে ন্যূনতম যে পরিমাণ শিক্ষক থাকার কথা, তা–ও নেই। কলেজগুলো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই অনুপস্থিত থাকেন।

গত দেড় বছরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকেও এই কলেজগুলোর অধিকাংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কলেজগুলোতে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট, মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, ঠিকমতো ক্লাস না করে শুধু পরীক্ষা নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বিরাজ করছে। কলেজগুলোর সমস্যা নিয়ে প্রথম আলোয় ধারাবাহিক প্রতিবেদনও করা হয়েছে।

মাউশির উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের লক্ষ্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে এই কলেজগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলা।

জানতে চাইলে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, যুগ যুগ ধরে এই কলেজগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু এগুলোতে নানা সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে কলেজগুলোর উন্নয়নের উদ্যোগকে তাঁরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন।