Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো

প্রথম আলো ফাইল ছবি।

করোনাভাইরাসের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সময় বলা হয়েছিল এপ্রিলের শুরুতে পরবর্তী সময়সূচি জানানো হবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এখন এই পরীক্ষা কবে শুরু হবে, তা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলতে পারছেন না। ফলে ১৩ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় আছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরুর কথা ১৫ এপ্রিল থেকে। সেটিও এই সময়ে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে পুরো শিক্ষাপঞ্জিই এলোমেলো হয়ে গেছে। কেবল এইচএসসি পরীক্ষাই নয়, আগামী এসএসসি, জেএসসি ও অন্যান্য বার্ষিক পরীক্ষার ওপরও এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এসএসসির ফল প্রকাশ পিছিয়ে গিয়ে একাদশ শ্রেণির ভর্তিও পিছিয়ে যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাড়বে সেশনজট। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হবে।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিপক্ষে থাকলেও ১৬ মার্চ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আলোকে ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। পরে ছুটির মেয়াদ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আগামী পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হওয়ার আগে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

 এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরুর কথা থাকলেও গত ২২ মার্চ তা স্থগিত করা হয়। এই পরীক্ষা কবে শুরু হবে, জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কমপক্ষে ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা শুরু করতে হবে। সরকারি ছুটি পর্যন্ত (১১ এপ্রিল) অপেক্ষা করে পরিস্থিতি দেখে করণীয় ঠিক করা হবে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে স্থগিত হওয়া একাদশ শ্রেণির বর্ষ পরীক্ষাও অশ্চিয়তায় পড়েছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের কথা। এখন সেটাও অনিশ্চিত। এ বিষয়ে মু. জিয়াউল হক বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কমপক্ষে ২০ দিন পর প্রকাশ করতে হবে।

ক্লাস না হওয়ায় নানা সমস্যা

সাধারণত জানুয়ারিতে নতুন বই, ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করতেই বেশ কিছুদিন চলে যায়। আর ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কারণে বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হয় না। এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় এই সময়ে কলেজে ক্লাস কম হয়। মূলত মার্চেই স্কুল-কলেজে বেশি ক্লাস হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকেই ক্লাসের সমস্যা শুরু হয়। ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলেও কার্যত এর কিছুদিন আগে থেকেই অনেক অভিভাবক সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দেন। আবার কবে ক্লাস শুরু হবে, কেউ বলতে পারছেন না। ফলে সিলেবাস শেষ হবে না। 

>

এইচএসসি পরীক্ষা কবে, কেউ জানে না।
একাদশ শ্রেণির বর্ষ পরীক্ষাও অনিশ্চিত।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, চরম এক অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। কোর্স শেষ না হওয়ায় মাধ্যমিকে জুনে অনুষ্ঠেয় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, তা–ও বলা যাচ্ছে না। সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি ভালো হলে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হয়তো বইয়ের ‘চ্যাপ্টার’ কমিয়ে কোনো রকমে একটি মূল্যায়ন করে ওপরের ক্লাসের সুযোগ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এসএসসি ও জেএসসিতে সেটি সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে বিশেষ কিছু ভাবতে হবে।

এই অধ্যক্ষ মনে করেন, যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে ঈদুল ফিতরের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন না। কারণ, এখন পর্যন্ত ১১ তারিখ পর্যন্ত ছুটি। এর কয়েক দিন পর রমজান শুরু হবে। তার আগে পরিস্থিতি ভালো হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। আবার রমজানের শুরু থেকে ঈদের ছুটি মিলিয়ে প্রায় দেড় মাস ছুটি থাকে। ফলে লম্বা সময় ধরে বন্ধের মুখে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ বা ২৫ এপ্রিল রমজান শুরু হতে পারে।

এদিকে মাধ্যমিক স্তরে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস শুরু হলেও সেটি খুব বেশি কার্যকর হচ্ছে না বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকার একটি পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ।

প্রাথমিকে সমস্যা বেশি

মাধ্যমিকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে রেকর্ডিং করা ক্লাস শুরু করা হলেও প্রাথমিকে তা এখনো শুরু করা যায়নি। যদিও প্রাথমিকে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে আলোচনা আছে। কারণ, প্রাথমিকের শিশুরা একে তো বয়সে ছোট, তার ওপর সারা দেশে সবার ঘরে টেলিভিশনও নেই। এর মধ্যে শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, যে অবস্থা চলছে, তাতে হয়তো নির্ধারিত সময়ে প্রথম সাময়িকী পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না–ও হতে পারে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি জানান, বন্ধের মধ্যে টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে সমন্বিতভাবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভুলত্রুটি মিলিয়েও শিক্ষায় একটি গতি এসেছিল। সেটি হোঁচট খাবে। শ্রমজীবী অনেক পরিবারের সন্তানদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে। আরও নানা সমস্যা হবে। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।