Thank you for trying Sticky AMP!!

‘শিক্ষার জন্য নৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন দরকার’

শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সিপিবির শিক্ষা শাখা আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক তাজুল ইসলাম। ঢাকা, ১১ জুন

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খাতে বরাদ্দে অনীহা থাকলেও বড় বড় স্থাপনায় বেশি উৎসাহ দেখা যায়। এসব উন্নয়নকাজে ভাগ–বাঁটোয়ারার খবরও বের হচ্ছে। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক সকালে কোনোরকমে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করিয়ে চলে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের অনেকে কোচিং-প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত। এমন বাস্তবতায় শিক্ষার জন্য নৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন একসঙ্গে করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শিক্ষক শাখা আয়োজিত ‘শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের গতিধারা ও তার পরিণতি’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে শিক্ষকেরা এসব কথা বলেছেন। সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষকদের অধিকাংশই সিপিবির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর পল্টনে মুক্তিভবনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সদস্য অধ্যাপক তাজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, সবচেয়ে কম বরাদ্দের দেশটি হলো বাংলাদেশ। জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকলে কমের দিকে বরাদ্দ থাকে শিক্ষায়। এ সময় তিনি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় দুই ধরনের সমস্যা ঢুকে গেছে। নৈতিক সমস্যাও ঢুকেছে, আবার অর্থনৈতিক সমস্যাও ঢুকেছে। এ জন্য নৈতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলন করতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক আন্দোলন করে শিক্ষাব্যবস্থা বদলানো যাবে না। আবার খালি নৈতিক আন্দোলন করেও শিক্ষাব্যবস্থা বদলানো যাবে না।

নৈতিক সমস্যা বোঝাতে গিয়ে এম এম আকাশ বলেন, খারাপ শিক্ষক হলে তিনি যে ছাত্রকে পড়াবেন, সে হবে খারাপ ছাত্র। সেই খারাপ ছাত্রই আবার শিক্ষক হবেন। কারণ বাইরে থেকে তো আর শিক্ষক আনা হবে না। সুতরাং আরও খারাপ শিক্ষক হবেন।

আরও খারাপ শিক্ষক থেকে আরও খারাপ ছাত্র হবে। আরও খারাপ ছাত্র থেকে আরও খারাপ শিক্ষক হবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা চাই। এ জন্য দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। একটি হলো সমৃদ্ধ শিক্ষক ও সমৃদ্ধ ছাত্র। আবার এটি অবশ্যই অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতি অসমৃদ্ধ থাকবে আর আপনি একটি সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা পাবেন, এটা হয় না।’

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে কমেছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সিপিবি নেতা কাবেরী গায়েন। গবেষণার চেয়ে স্থাপনা নির্মাণে কর্তৃপক্ষ বেশি উৎসাহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গগনচুম্বী বস্তি বানিয়ে রাখা হয়েছে অনেক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সময় দায়িত্বের কথা বলতে শিক্ষা দেওয়া ও গবেষণা করার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষকদের গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। শিক্ষকেরা নানাভাবে গবেষণার সুযোগ করে নেন।

সভাপতির বক্তৃতায় সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ এন রাশেদা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে তলানিতে নেমে গেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা চলছে। এগুলো দূর না করলে আরও খারাপের দিকে যেতে হবে। কিন্তু জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

প্রাথমিক উপবৃত্তিতে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে মন্তব্য করেন প্রাথমিকের শিক্ষক নেতা পতিত পাবন। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, শিক্ষক নেতা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, আকমল হোসেন প্রমুখ।