Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষা প্রশাসনে গতি নেই

তিন মাস ধরে নিয়মিত উপাচার্য নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় চার মাস ধরে উপাচার্য নেই। ছাত্র আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে টানা অস্থিরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেমে থেমে উত্তপ্ত হচ্ছে।

এ তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা, সামগ্রিক শিক্ষা প্রশাসনের অবস্থাও অনেকটা স্থবির। জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে অপরিহার্য ‘শিক্ষা আইন’ আটকে আছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করাসহ শিক্ষানীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা কমিশন করার কাজও আটকে আছে। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন হলেও কাজকর্ম দৃশ্যমান নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বারবার সময় দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত গেছে মাত্র ২০টি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিবিষয়ক অভিন্ন নীতিমালার খসড়া নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকঢোল পেটালেও এখনো নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি।

দেশের ৩০১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু এখনো এসব কলেজের প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি সরকারি হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পরিচালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এক মাস খালি রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলছেন, এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজে এখন গতি কম। বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন দীপু মনি। আর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি নেই, এ কথা মানতে নারাজ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়; কাজ হচ্ছে। শিক্ষা আইনের খসড়া পর্যালোচনা করতে সাবেক একজন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্তির কাজে ‘ছোটখাটো’ কিছু ত্রুটি ঠিক করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি

আগের উপাচার্যের মেয়াদ শেষে গত ১৩ জুন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য এস এম ইমামুল হক ছুটিতে যাওয়ার পর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত উপাচার্য নেই কার্যত ১১ এপ্রিল থেকে। কারণ, ওই সময় থেকে ২৬ মে পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকতে বাধ্য হন। ২৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়মিত উপাচার্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মাহবুব হাসান গত ২৫ জুন থেকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, নিয়মিত কাজে অসুবিধা হচ্ছে না। তবে বড় কাজ করা যাচ্ছে না।

অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন বলেছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

>

চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই
আরও দুজন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে
শিক্ষা আইনে আটকে আছে
শিক্ষানীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন নেই
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পরিচালকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এক মাস খালি

এদিকে উপাচার্য প্যানেল মনোনীত করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আড়াই মাসেও ওই প্যানেল থেকে কাউকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। সরকার-সমর্থক বলে পরিচিত নীল দলের ভোটাভুটিতে প্রথম হয়েছেন সহ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ। অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের অবস্থান দ্বিতীয় এবং তিনি অনির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করলেও মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে অস্থিরতা।

শিক্ষা আইন আর কবে

২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজটি চলছে ধীরগতিতে। এখন আবার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা আইন করার কাজ আরও দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে। বিদায়ী সরকারের আমলে তৈরি শিক্ষা আইনের খসড়াটি আবার পর্যালোচনার জন্য সাবেক সচিব হাবিউল আওয়ালকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ খসড়ায় কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য কোচিং, গাইড ও প্রাইভেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি গোষ্ঠী আইনটি ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ সব ধরনের কোচিং-প্রাইভেট বন্ধের বিপক্ষে।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা থাকা উচিত, যাতে মেয়াদ শেষেই আচার্যের কাছে নতুন উপাচার্যের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারে। আর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হওয়ার এত দিন পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়াটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অনেকটা ক্ষোভের সুরেই অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আইনের খসড়া একাধিকবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পরও ফেরত আসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।