Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষা বাজেটে আছি জিডিপির তিনে, যেতে হবে ছয়ে

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি

শিক্ষায় বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ছয় ভাগে যেতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হলে শিক্ষাই হবে সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

শিক্ষায় বরাদ্দ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ছয় ভাগে যেতে হবে। আমরা তিন ভাগে আছি। তবে ২০০৬ সালে দেশের যে বাজেট ছিল এখন শিক্ষা বাজেটই তার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষায় আমরা অনেক বিনিয়োগ করছি। আরও অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বড় বড় মেগা প্রকল্প হচ্ছে, যেগুলো আমাদের যোগাযোগের জন্য, দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার। তেমনি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা। সেটিই হবে বড় মেগা প্রকল্প।’

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে শিক্ষকেরা ‘গাইড’ হবেন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, কীভাবে আনন্দের সঙ্গে পড়া যায়, শেখা যায়, বোঝা যায় এবং শিক্ষাকে সবার জন্য সহজ ও আনন্দময় করে সেই লক্ষ্যে এই পরিবর্তন প্রয়োজন। শিক্ষকের জায়গাতেও (ভূমিকায়) পরিবর্তন আসছে। আর এই পরিবর্তনটি হবে অনেকটা এ রকম—শিক্ষক এখন ফ্যাসিলিটেটর হবেন, গাইড হবেন। শিক্ষার্থীর আনন্দের অংশীদার হবেন। শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার জগৎটাকে শিক্ষক তৈরি করে দেবেন। অনেক যত্ন করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে, যেন শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্যে শিক্ষার জগৎটা খুঁজে নিতে ও পূরণ করতে পারে।

Also Read: ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ

গত ৩০ মে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। এর মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের আইনি ভিত্তি তৈরি হলো। অবশ্য ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) বাস্তবায়ন শেষে আগামী বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাই থাকবে না। পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে। এ ছাড়া এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট এবং সমমানের পরীক্ষার কথাও নেই নতুন শিক্ষাক্রমে। একেবারে দশম শ্রেণিতে গিয়ে হবে পাবলিক পরীক্ষা। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে। আর শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সেই বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি হবে দুই দিন। নতুন শিক্ষাক্রমের বড় একটি বিষয় হলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন, যার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবেন শিক্ষকেরা।
নতুন শিক্ষাক্রমে এখন থেকে শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন সিলেবাসে পড়বে। আর শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক না বাণিজ্য বিভাগে পড়বে, সেই বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে।

Also Read: এনটিআরসিএর মাধ্যমে অধ্যক্ষ–প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিবেচনা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিখতেই হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে তিনটি শিল্প বিপ্লব পার হয়ে গেছে, সেই বিপ্লবকে আমরা ধরতে পারিনি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবটি শুধু ধরতে পারা নয়, এর সফল অংশীদার হতে হবে আমাদের। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর অনেক বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে আমি এ কথাও বলতে চাই—বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, গণিত, পরিসংখ্যান, প্রকৌশল পড়তে হবে। কিন্তু সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্বের বোধ যদি তৈরি না হয় তাহলে শুধু বিজ্ঞান, গণিত তথ্যপ্রযুক্তি পড়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি হবে না। তাই সাহিত্যও পড়তে হবে। আমরা যেন এর সবকিছু মেলাতে পারি, সে চেষ্টা করছি।’