Thank you for trying Sticky AMP!!

সেনীনের বৃত্তির ঝুলি

ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সেনীন

জীবনে কখনোই নাকি কোনো দুষ্টুমি করেননি সেনীন মেহনাজ। স্কুলে শিক্ষকদের কাছে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায় পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানে স্নাতক করছেন। এই তো ‘মাত্র’ তৃতীয় বর্ষ। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘আমি তো এখনো ছোট!’

সে যা-ই হোক। সেনীনের গল্পটা বলার কারণ হলো সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন থেকে ‘স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ নামের একটি পুরস্কার পেয়েছেন। বেশ জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে নানা দেশের মানুষের সামনে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন তিনি। ‘এই প্রথম ঘটা করে বড় পরিসরে কোনো সম্মাননা পেলাম। খুব ভালো লেগেছে’, মেসেঞ্জারে জানালেন সেনীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই কি আপনার প্রথম অর্জন? জানতে চাইলে সেনীন এক বিশাল তালিকা ধরিয়ে দিলেন! পড়াশোনায় ভালো করার জন্য পেয়েছেন ‘আ ফ্যাকাল্টি অব অ্যাগ্রিকালচার, লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস এক্সিলেন্স স্কলারশিপ’, ‘অ্যান ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’, ‘আ ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি স্কলারশিপ’। পড়ার বাইরে নানা কার্যক্রমের জন্যও পেয়েছেন ‘আ বার নান আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, ‘দ্য মেরি (ড্যাভিডসন) হওয়ার্ড বার নান অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়া ‘রিহ্যাব মেডিসিন’ অনুষদের একটি রোবটিকস গবেষণাগারে কাজ করার জন্যও বৃত্তি পেয়েছেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথলেটিকসে, স্নাতকের গবেষণা দপ্তরে, ‘ফুড সায়েন্স’ গবেষণাগারে। আরও আছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনটা চাকরি করছেন সেনীন। এ বছর নিজ ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায় সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করেছেন।

বাপরে! এত কিছু একসঙ্গে কীভাবে? হাসির ‘ইমো’ দিয়ে সেনীন লিখলেন, ‘যতটা সম্ভব সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেষ্টা করি। সত্যি কথা বলতে আমার কাজ বা স্বেচ্ছাসেবা করতে আর ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে।’ বটে। ভালো লাগা, ভালোবাসা থাকলে তো যেকোনো কাজের জন্যই সময় বের করা যায়। সেনীন এ বিষয়ে একমত।

আবার একটু সাম্প্রতিক ঘটনায় ফিরতে হয়। সেনীন জানালেন, কিসের ভিত্তিতে স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সনদটা পেলেন। স্বেচ্ছাসেবা, ক্যাম্পাসে নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ততা, পড়াশোনা—এ সবকিছু বিবেচনা করেই সেনীনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তিনি কিন্তু শুধু এই লেখাপড়া আর ছোটাছুটিই করেননি। ছায়ানট থেকে ভরতনাট্যম আর ভারতীয় হাইকমিশন থেকে কত্থক শিখেছেন। নাচে পারদর্শী সেনীন মাতিয়েছেন ভিনদেশি মানুষদের মন। না, দেশে বা বিদেশে এখনো পর্যন্ত কোনো নাচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেননি। তবে এসএফএক্স গ্রীন হেরাল্ড স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নেচেছেন। এখনো তা-ই। এই স্কুল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায়। পরে সেখানেও বিদেশি বন্ধুদের চমকে দেন ভরতনাট্যম আর কত্থক নাচ দেখিয়ে। এর জন্য পান বিশেষ সম্মাননা। বাংলা লোকনৃত্য এবং কত্থক নাচের জন্য সম্মানিত করা হয় তাঁকে। বিদেশিরা সেনীনের নাচ যেমন পছন্দ করেছেন, তেমনি পছন্দ করেছেন তাঁর বাংলাদেশি নাচের পোশাক। প্রায়ই সেনীনকে তাঁদের মুখে শুনতে হয়, ‘তোমার পোশাক অনেক রঙিন আর নকশা বেশ ছন্দময়।’ দেশকে নিয়ে তখন তাঁর গর্ব হয় বৈকি।

সেনীন জানান, দেশে ফিরে কী করার পরিকল্পনা তাঁর। যেহেতু পড়াশোনা করছেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান নিয়ে, তাই ফিরে কাজ করতে চান ‘কমিউনিটি নিউট্রিশন’এর ওপর। সহজ করে বললে ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষকে শেখানো, কীভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস করা যায়। এই অভ্যাস যে রোগবালাই থেকে মানুষকে দূরে রাখবে, সেটাও জানালেন তিনি।

যমজ ভাই সেজান আহমেদ তাঁর খুব কাছের। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন সেজান। সেনীনের সব গুণের সাক্ষী তাঁর এই কাছের মানুষটি। বলছিলেন, ‘বোন তো যেদিকে যা পারে সবকিছু করতে চায়। খুবই পরিশ্রমী। ওকে নিয়ে আমাদের গর্ব হয়।’