Thank you for trying Sticky AMP!!

হ্যালো বাংলাদেশ!

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও দক্ষিণ কোরিয়ার ড্যানকুক ইউনিভার্সিটি কলেজ অব আর্কিটেকচারের স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার ড্যানকুক ইউনিভার্সিটি কলেজ অব আর্কিটেকচারের একদল শিক্ষার্থী এসেছিলেন বাংলাদেশে। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্যের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্পে কাজ করেছেন তাঁরা। এই দলের একজন জিহা সং, স্বপ্ন নিয়ের জন্য লিখেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।

বাংলাদেশে পা রেখে শুরুতেই থমকে গিয়েছিলাম। একে তো দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়েবসাইটগুলোতে এই দেশ সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য নেই, নানা রকম অপ্রীতিকর খবরই চোখে পড়েছিল বেশি। তার ওপর শুরুতেই ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় তিন ঘণ্টার অপেক্ষা, বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই যানবাহনের অবিরাম প্যা পু স্বাগত সংগীত শুনে আমরা আরও দমে গিয়েছিলাম। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে না পড়লে এখানে কেউ কারও জন্য থামে না, দেখে অবাক হয়েছিলাম খুব। কিন্তু দুই সপ্তাহ এখানে থাকার পর একেবারে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা দেশে ফিরেছি।

আমাদের খুব সৌভাগ্য, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) স্থাপত্যের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্পের কাজ করার সুবাদে আমাদের ঢাকায় আসার সুযোগ হয়েছিল। আমাদের অধ্যাপক মিস্টার চং এবং তাঁর বন্ধু আবু সায়ীদ এম আহমেদ (ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্থাপত্য বিভাগের ডিন) এই আয়োজন করেছেন। ঢাকায় বর্ষার সময় যে জলাবদ্ধতা হয়, সেটি থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, এই ছিল আমাদের প্রকল্পের বিষয়। স্থাপত্যের ক্ষেত্রে পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে পরিকল্পনা স্রেফ খসড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ আমাদের দুই দেশের শিক্ষার্থীদের জন্যই একটা বড় অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই আমরা বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। লুই কানের নকশা করা সংসদ ভবন দেখার আগ্রহও অবশ্য এখানে আসার একটা বড় কারণ।
ঢাকায় পা রাখার পরদিন দেখা হয় ইউএপির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে যখন শহর ঘুরতে বের হলাম, মুহূর্তেই আমাদের সব দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। উষ্ণ অভ্যর্থনায় তাঁরা আমাদের স্বাগত জানিয়েছেন। আমাদের নিরাপত্তার ভাবনাও তাঁদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি নিশ্চিন্তে। আমরা একসঙ্গে হাতিরঝিলে নৌকায় ঘুরেছি, শুক্রাবাদ বাজারে গিয়েছি, রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি ধানমন্ডির আনাচকানাচে। পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব দেখতেও গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কোরিয়ান পপ (কে-পপ) মিউজিকের সঙ্গে নাচছে দেখে চমকে গিয়েছি। বাংলাদেশে যে কে-পপ এত জনপ্রিয়, আমাদের জানা ছিল না। সবাই আমাদের এমনভাবে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন, যেন আমরা কোনো কে-পপ তারকা! আমরা ঢাকার বিভিন্ন টংদোকানে চা খেয়েছি। চায়ে চুমুক দিতে দিতে কথা হচ্ছে বাংলাদেশের নানা বিষয় নিয়ে। মাত্র ১৪ দিনেই আমাদের ঝুলিতে এত অসাধারণ সব গল্প জমা হয়েছে, যেগুলো কোনো দিন ভোলার নয়।
ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশ এবং এ দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি নানা কিছু। মনে হয়েছে, আতিথেয়তার সংস্কৃতি এ দেশের মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একদিন নিশ্চয়ই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হবে। আমি আশা করব, তখনো এই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও মানবিক গুণগুলো এ দেশের মানুষের মধ্যে থাকবে। আমি দেখেছি, এখানে পাশাপাশি দুটি রিকশা যখন যানজটে বসে থাকে, সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষও একে অপরের সঙ্গে কথা বলে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই দৃশ্য বিরল। অপরিচিত কারও সঙ্গে এখন আর কথা বলা হয় না। অন্যের খোঁজখবর নেওয়ার সময় আমাদের নেই। অতএব আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই সংস্কৃতি আপনারা ধরে রাখবেন। আবার যখন এ দেশে আসব, আমি আশা করব বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আমি একই রকম উষ্ণতা খুঁজে পাব। ধন্যবাদ।