Thank you for trying Sticky AMP!!

১০০ তে ১১০

মৃত্তিকা কবির। ছবি: সংগৃহীত

মৌলিক অর্থনীতি (বেসিক ইকোনমিকস) নামের কোর্সটিতে মৃত্তিকা কবির পেয়েছিলেন ১০০-তে ১১০! তাঁর পড়ার বিষয় কিন্তু অর্থনীতি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে তিনি যন্ত্র প্রকৌশল পড়ে স্নাতক হয়েছেন। ব্যবসায় শিক্ষার কিছু বাড়তি কোর্স নিয়েছিলেন স্রেফ আগ্রহের বশে। ক্লাসে-পরীক্ষায় এতটাই ভালো করেছেন যে ১০০-তে ১০০ দিয়েও শিক্ষকের মন ভরেনি। মৃত্তিকা পেয়েছিলেন অতিরিক্ত আরও ১০ নম্বর।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটিমাত্র কোর্স ছাড়া বাকি সব কোর্সে ‘এ’ পেয়েছেন। আধা নম্বরের জন্য যে কোর্সে ‘এ’ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল, তার নাম ইন্ট্রোডাকশন টু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। সম্প্রতি ৩.৯৭ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন মৃত্তিকা কবির এখন যুক্তরাষ্ট্রের এসপিএক্স ফ্লো নামে একটি প্রতিষ্ঠানে রোটেশন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

মৃত্তিকার সঙ্গে কথা হচ্ছিল হোয়াটসঅ্যাপে। বলছিলেন, ‘আমার চাকরিটা বেশ মজার। দুই বছর ধরে আমি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ আর এশিয়া ঘুরে এই প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো সম্পর্কে জানব, বুঝব। এটা মূলত একজন তরুণ কর্মীকে প্রধান নির্বাহী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ প্রকল্প।’

মৃত্তিকার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী, বৈচিত্র্যপূর্ণও। ছাত্রজীবনেই প্রকৌশলসংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে কাজ করেছেন। লম্বা ছুটিতে যখনই দেশে এসেছেন, শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতেও (ব্যাট) ইন্টার্নশিপের সুযোগ হাতছাড়া করেননি। বলছিলেন, ‘প্রকৌশলসংক্রান্ত যত প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করেছি, সব কটিতেই আমার সহকর্মীরা ছিলেন বেশ বয়স্ক। তার ওপর বেশির ভাগ জায়গায় দেখা গেছে, দলে আমিই একমাত্র নারী। সে জন্য ব্যাটের কাজটা আমি খুব উপভোগ করেছিলাম। সেখানে আমরা একদল ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ইন্টার্ন করেছি। যাঁদের অধীনে কাজ করেছি, তাঁরাও মোটামুটি তরুণ। এখনো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে।’

মৃত্তিকা কবিরের বাবা কবির বিন আনোয়ার বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে আছেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে খুব অদ্ভুত একটা ছেলেবেলা কেটেছে মৃত্তিকার। হাতেখড়ি হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের একটা স্কুলে। সেখান থেকে হুট করে বাবার বদলি হয়ে যায় রাঙামাটিতে। নিউজিল্যান্ড থেকে হঠাৎই রাঙামাটির একটা বিদ্যুৎহীন গ্রামের স্কুলে গিয়ে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু সেটাও একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। পরে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন তিনি।

ভালো ছাত্রী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দুই বছর ডিস্টিংগুইশড স্কলার স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ডিনস লিস্টে তাঁর নাম ছিল। প্রকৌশল পাঠের শেষ বর্ষে এসে কম খরচে ইনকিউবেটর তৈরির একটা প্রকল্পে কাজ করেছেন খুব আনন্দ নিয়ে। এত কিছুর পরও তাঁর সবচেয়ে প্রিয় অর্জন এসবের কোনোটিই নয়।

মৃত্তিকা বলছিলেন, ‘ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে “সিক্সথ সেন্স” নামে একটা স্টার্টআপ চালু করেছিলাম। আমার বাসার গ্যারেজ ছিল আমাদের অফিস। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ডার নিয়ে আমরা সেন্সর বানাতাম। প্রথম ৪ মাসে ৫টা অর্ডার পেয়েছিলাম। এরপর আসলে খুব বেশি দূর যেতে পারিনি। কিন্তু নিজের একটা কোম্পানি দাঁড় করিয়েছিলাম, হলো নাহয় ব্যর্থ, তবু এটাই আমার কাছে এখন পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। অনেক কিছু শিখেছি।’

প্রকৌশলে পড়েছেন, ব্যবসার প্রতি তাঁর আগ্রহ আছে, তবে দিন শেষে নিজেকে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের স্থানে দেখতে চান মৃত্তিকা কবির। মনেপ্রাণে চান, নানা দেশ ঘুরে নানা কিছু শিখলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কর্মস্থল যেন বাংলাদেশেই হয়।