Thank you for trying Sticky AMP!!

চবিতে ভর্তি আবেদনে জটিলতা, সার্ভারে ত্রুটি

প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের ভিড়ে এমনই ঠাসা থাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি আবেদনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ভর্তির অনলাইন সার্ভারে ত্রুটি থাকায় অনেক ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারছেন না। অনেকে আবেদন ফি জমা দেওয়ার পরও অনুমোদন ফর্দ (কনফারমেশন স্লিপ) পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ আবেদন ফি-ই জমা দিতে পারছেন না।

জটিলতার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সহায়তা কেন্দ্র’, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহায়তা ও তথ্য কেন্দ্র’-সহ আরও নানা গ্রুপে স্ট্যাটাস দিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত এসব গ্রুপ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে অন্তত ৫০ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী জটিলতার বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এসব স্ট্যাটাসের মন্তব্য ঘরেও তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্ধারিত সার্ভারে ঢুকতে না পারার বিষয়ে লিখছেন।

রিমন কুমার মণ্ডল নামের এক ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থী ফেসবুকের একটি গ্রুপে লিখেছেন, তিনি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারছেন না। পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে তাঁর জিপিএ সাড়ে ৯-এর বেশি। কিন্তু ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করতে লাগবে সব মিলিয়ে ৮। বারবার চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারছেন না। রিমন বলেন, ‘প্রথমে “এ” ইউনিটে আবেদন করতে পারিনি। আর আজকে কোনো ইউনিটেই পারছি না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ফাহিম মুনতাসির নামের এক ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি ‘ডি’ ইউনিটে আবেদন করার পর ফি কাটা হয়েছে। কিন্তু কোনো কনফারমেশন বার্তা পাননি। এমন আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী নানা সমস্যার কথা বলেছেন।

১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩৫ হাজার ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হতে আবেদন করেছেন। এবারের পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই অনুষ্ঠিত হবে। ‘বি’ ইউনিটের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে ভর্তি-যুদ্ধ। এই ইউনিটের পরীক্ষা ২২ ও ২৩ জুন।

এ ছাড়া ‘ডি’ ইউনিটে ২৪ ও ২৫ জুন; ‘এ’ ইউনিটে ২৮ ও ২৯ জুন; ‘সি’ ইউনিটে ৩০ জুন এবং ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ উপ-ইউনিটে ১ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের মতো এবারও চারটি ইউনিট ও দুটি উপ-ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

অন্যদিকে এবারও ৪৮টি বিভাগ ও ৫টি ইনস্টিটিউটে ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। এর মধ্যে সাধারণ আসন ৪ হাজার ১৮৯টি ও কোটা ৭৩৭টি। ভর্তির আবেদনের জন্য প্রতি ইউনিট ও উপ-ইউনিটে একজন শিক্ষার্থীকে গুনতে হবে ৬৫০ টাকা (প্রসেসিং ফিসহ)।

নতুন সফটওয়্যারে চলছে কার্যক্রম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এত বছর টেলিটক কোম্পানি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরে ২০১৮ সালে ‘আগামী ল্যাবস’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। ওই কোম্পানির তৈরি সফটওয়্যার দিয়ে ২০১৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যাবতীয় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে এ বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব মালিকানার সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ল্যাবসের সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। তাদের তৈরি সফটওয়্যারের মালিকানা (ওনারশিপ রাইট) বা মেধাস্বত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু ইউজার রাইটস (ব্যবহারের অধিকার) ছিল। ফলে সফটওয়্যারে কোনো বিষয় সংযোজন কিংবা বিয়োজন করতে গেলে ওই কোম্পানিতে যেতে হতো। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নিজেদের মালিকানায় ও মেধাস্বত্বের সুযোগ রেখে সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এটি করেছে আইসিটি সেল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সফটওয়্যারে ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আরও বলেন, নতুন সফটওয়্যারে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটু সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই ফি জমা দিয়ে বার্তা পাচ্ছেন না। অনেকে ঢুকতে পারছেন না। বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। এটি নিয়ে আইসিটি দল কাজ করছে। দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সার্ভারের ত্রুটি থেকে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো সফটওয়্যার চালু করার আগে কারিগরি দিকে সম্ভাব্যতা যাচাই করা জরুরি। এটি করলে প্রতি সেকেন্ডে কতজন সার্ভারে ঢুকতে পারবে, কোনো ঝামেলা হবে কি না, তা বোঝা যায়। এটি ঠিকভাবে করা হলে এ সমস্যা এড়ানো যেত।

আবেদন ফি বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক

এ বছর করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তির আবেদন ফি বাড়ানো হয়েছে সব মিলিয়ে ১০০ টাকা। গত বছর আবেদন ফি ছিল ৪৭৫ টাকা এবং প্রসেসিং ফি ছিল ৭৫ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে ৫০০। এবার আবেদন ফি ৫৫০ টাকা এবং প্রসেসিং ফি ১০০ টাকা; মোট ৬৫০ টাকা।

জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, করোনার ধাক্কায় অনেকের আয় কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। এ মহামারির সময়ে ১০০ টাকা বাড়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয়।

জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ নাসিম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন ফির হিসাবে দেশে যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সবার চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কম। এবার নতুন সফটওয়্যারে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। গতবারের তুলনায় বেশি পালায় পরীক্ষা হবে। সব মিলিয়ে বাড়তি কিছু টাকা ধরা হয়েছে।