Thank you for trying Sticky AMP!!

সময়মতো বই ছাপা নিয়ে শঙ্কা

ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সব বই ছাপিয়ে পাঠানো নিয়ে শঙ্কা। মাধ্যমিক বেশি পিছিয়ে। কাগজ নিয়ে সংকট।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার বই উৎসব না করে ‘ভিন্ন উপায়ে’ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে চায় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১৪ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে বা পাঠানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আর প্রাথমিকের বই গেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। অথচ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সব বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠাতে হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র বলছে, কাগজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু কাগজের কারখানা বন্ধ থাকা, দেরিতে বইয়ের কভারে নতুন বিষয় সংযোজন এবং কিছু মুদ্রণকারীর ‘অজুহাতসহ’ নানামুখী সংকটের কারণে এবার ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারাই বলছেন, এখন যেভাবে ছাপার কাজ চলছে, তাতে ঠিক সময়ে সব বই দেওয়া কঠিন।

বই ছাপানোর ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়
মূল সমস্যা হলো অনেকগুলো কাগজের কারখানা বন্ধ। আবার কিছু মুদ্রণকারীকে নিয়েও কিছুটা সমস্যা আছে। তবে তাঁরা শিক্ষার্থীদের হাতে ঠিক সময়েই বই দিতে পারবেন বলে আশা করছেন
নারায়ণ চন্দ্র সাহা, এনসিটিবি চেয়ারম্যান

এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহাও সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মূল সমস্যা হলো অনেকগুলো কাগজের কারখানা বন্ধ। আবার কিছু মুদ্রণকারীকে নিয়েও কিছুটা সমস্যা আছে। তবে তাঁরা শিক্ষার্থীদের হাতে ঠিক সময়েই বই দিতে পারবেন বলে আশা করছেন এবং সে লক্ষ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। দরপত্রের সময় অনুযায়ী, কিছু পরিমাণ বাদে প্রায় সব বই ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপিয়ে উপজেলায় পাঠানোর কথা। সেখান থেকে যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এত দিন পয়লা জানুয়ারি উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া হলেও এবার করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভিভাবকদের মাধ্যমে বই দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে আনন্দ উল্লাস করে বিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার মাধ্যমিক স্তরে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই ছাপা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ বই গেছে বা পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে প্রাক্‌-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩৭টি বই ছাপানো হচ্ছে। এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের বই গেছে প্রায় ৪ কোটি ৯৮ লাখ। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে বেশির ভাগ বই চলে যেত।

অবশ্য এনসিটিবি চেয়ারম্যানের দাবি, প্রাথমিকে প্রায় ৬০ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে প্রায় ২৫ শতাংশ বই উপজেলায় চলে গেছে। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্পের (মণ্ড) দাম বেড়েছে। আর পাল্পের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই কাগজের দাম বাড়বে। মুদ্রণকারীরা কাগজ পাচ্ছেন না, এ অভিযোগ ঠিক নয়।
নওশেরুল আলম, বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব

এনসিটিবি ও মুদ্রণকারীদের সূত্রগুলো বলছে, শেষ সময়ে এসে কাগজের কারখানাগুলো হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। কাগজের দাম টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দাম চাইছে কারখানাগুলো। এতে বেকায়দায় পড়ার কথা বলছেন মুদ্রণকারীরা। এনসিটিবির বই ছাপার কাজ পাওয়া ব্যক্তিদের একজন ব্রাইট প্রিন্টিং প্রেসের মালিক এস এম মহসীন বলেন, তাঁরা পর্যাপ্ত কাগজ পাচ্ছেন না। এভাবে চললে ঠিক সময়ে শতভাগ বই দেওয়া মুশকিল হবে। তাই রাষ্ট্রীয় এ কাজে কাগজের সংকট নিরসনে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নওশেরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্পের (মণ্ড) দাম বেড়েছে। আর পাল্পের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই কাগজের দাম বাড়বে। মুদ্রণকারীরা কাগজ পাচ্ছেন না, এ অভিযোগ ঠিক নয়। আসলে তাঁরা বাড়তি দামে কাগজ নিতে চাইছেন না।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ছাপার জন্য এবার প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজের প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৪ হাজার টন কাগজ এনসিটিবি কিনে দেয়।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি ১৮ নভেম্বর কাগজের সংকট সমাধানের জন্য এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি এবং পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এখন যেভাবে ছাপার কাজ চলছে, তাতে ঠিকসময়ে বই দেওয়া যাবে না। কাগজের কারখানাগুলো সমস্যা করছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এনসিটিবি ও এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।