Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা, বয়স নির্ধারণসহ নির্দেশিকায় আর যা যা আছে

সফলভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারবে

ভারতে ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা যাবে না। ১৮ জানুয়ারি দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় কোচিং সেন্টারগুলোকে বলা হয়েছে, ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো যাবে না। শুধু তা-ই নয়, অবাস্তব কোনো স্বপ্ন দেখিয়ে বিজ্ঞাপনও দেওয়া যাবে না এখন থেকে। সফলভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারবে।

ভারতের কোটা শহরকে বলা হয় কোচিংয়ের রাজধানী। সেই কোটার একটি অন্ধকার দিকও আছে। কোটায় কোচিংয়ের সংস্কৃতি এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ তাঁদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নগরীর কোচিং স্কুলে অধ্যয়নরত ২৭ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার ঘটনার পরে কোচিং সেন্টার নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করল দেশটির কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া কোচিং সেন্টারগুলোয় অগ্নিদুর্ঘটনা, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগও এ নির্দেশনার অন্যতম কারণ।

ভারতে কোচিং করছে শিক্ষার্থীরা

পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সব কোচিং সেন্টারেই এমন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, যাঁদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির সময় তাদের অভিভাবকের কাছে ভালো নম্বর বা র‍্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না কোচিং সেন্টারগুলো। কোচিং সেন্টারে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রেশনই করতে দেওয়া হবে। সে সঙ্গে প্রতিটি কোচিং সেন্টারকে নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলতে হবে, তা হালনাগাদ হতে হবে। শিক্ষকদের তথ্য সেই ওয়েবসাইটে থাকতে হবে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটে কোচিং সেন্টারের কোর্সের বিবরণ, পাঠ্যক্রম পূরণের সময়কাল, হোস্টেলের বিবরণ, বেতনের বিবরণ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙা রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত মনোবিদদের বিস্তারিত তথ্যও দিতে হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের।

Also Read: কানাডায় ২ বছরের বিধিনিষেধে কমবে ৩৫ ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী, বাংলাদেশিদের জন্য করণীয়

Also Read: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষার ৪০ বছর পর পেলেন যোগদানের চিঠি

কোচিং–সংক্রান্ত নির্দেশিকা বলা হয়েছে, ‘যারা কোচিং সেন্টার বা ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্লাসে অংশ নিয়েছিল, তাদের কোচিংয়ের গুণমান বা এতে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা বা ফলাফল সম্পর্কিত কোনো বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবে না। নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোনো শিক্ষক বা ব্যক্তি কোচিংয়ে কোনো ধরনের সেবা দিতে পারবে না। কোচিং সেন্টারগুলোয় টিউটরদের যোগ্যতা, কোর্স/পাঠ্যক্রম, সমাপ্তির সময়কাল, হোস্টেল সুবিধা এবং ফি নেওয়ার হালনাগাদ তথ্য বিশদসহ ওয়েবসাইট থাকতে হবে।’

কোটার এই রাজীব গান্ধীনগর এলাকার দুই পাশের সব ভবন হোস্টেলে ভরা

নতুন নির্দেশিকা অনুসারে, কঠিন প্রতিযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের ওপর একাডেমিক চাপ থেকে মুক্তিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে কোচিং সেন্টারগুলোকে। শিক্ষার্থীদের ওপর অযাচিত চাপ না দিয়ে ক্লাস পরিচালনা করতে পারে। কোচিং সেন্টারগুলো একটি কাউন্সেলিং সিস্টেম তৈরি করবে এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সহজলভ্য, তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

Also Read: বুয়েট ভর্তির বিজ্ঞপ্তি, আসন কত, দেখুন পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও সময়

Also Read: অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন, ৪৩তম বিসিএসে পররাষ্ট্রে প্রথম আবীর

এ ছাড়া কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রেশনই করতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে নতুন নির্দেশনায়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সেলরদের নাম এবং তারা কখন পরিষেবা প্রদান করে সে সম্পর্কে তথ্য সমস্ত ছাত্র ও অভিভাবকদের দিতে হবে। এ জন্য ছাত্র ও অভিভাবকদের কার্যকর নির্দেশিকা এবং কাউন্সেলিং সুবিধার্থে কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নিয়োগ করতে পারে। শিক্ষকরা মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, যাতে তাদের উন্নতির ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কাছে কার্যকরভাবে এবং সংবেদনশীলভাবে তথ্য জানানো হয়।’

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের কোটার পরিচিতি দেশজুড়ে। শহরটিকে ভারতের ‘শিক্ষার কাশীধাম’ও বলা হয়। কোচিংয়ের কারণে ব্যাপক পরিচিত এ শহরে কোচিং–বাণিজ্যের আর্থিক মূল্য ১২০ বিলিয়ন রুপি। প্রতিবছর তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এ শহরে দিনে ১৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করা সাধারণ ব্যাপার এবং সেখানে পরীক্ষার নম্বরই যেন সবকিছু। এখান থেকেই কেউ কেউ ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হয়ে উঠবেন। কিন্তু যাঁরা ব্যর্থ হবেন, তাঁদের জীবনে কী ঘটে, অনেকেই জানেন না। কোটা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ‘কোচিং ক্যাপিটাল’ বা ‘কোচিংয়ের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেখানে ডজনের বেশি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হতে অত্যন্ত কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেন।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার জন্য বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কোটা। এই প্রেক্ষাপটে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।