Thank you for trying Sticky AMP!!

আলাদা নয়, ‘একক’ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি

আগামী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্নাতক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

খসড়া অধ্যাদেশের মূল কথা হলো, নতুন এই কর্তৃপক্ষের অধীনে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা কোনো ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে না।

আজ বৃহস্পতিবার ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এ–সংক্রান্ত কমিটির সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। এখন খসড়াটির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে শিগগির সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে ইউজিসি।

ইউজিসি জানিয়েছে, নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিতে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) নামের পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। কিন্তু সেই কর্তৃপক্ষ এখনই গঠন সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই কর্তৃপক্ষ গঠনের আগপর্যন্ত এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, বিধি, প্রবিধি বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোনো দলিলে যা কিছু থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যোগ্য বিবেচিত না হলে কোনো ভর্তি–ইচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না।’

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ ফলাফল প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এই ফলাফল, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শর্তাবলি অনুযায়ী মেধাক্রমের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’

কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে সীমিত পর্যায়ে শুধু সংগীত, চারুকলা, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, স্থাপত্যবিদ্যা বা এ–জাতীয় অতি বিশেষায়িত বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ গ্রহণ করতে পারবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আইনে চলে।

বর্তমানে দেশে ৫৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে সম্প্রতি আরও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১৩টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অপর একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এসব ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনো নানামুখী অভিযোগ ও অসুবিধা আছে।

ইউজিসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পরিকল্পনা হলো, নতুন নিয়মে তিন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি আলাদা পরীক্ষা নিয়ে একটি ‘স্কোর’ দেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন চাইলে সেই সুযোগও এর মধ্যে রাখা হবে। এরপর এই স্কোরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মানে হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে কোনো পরীক্ষা নিতে পারবে না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং সময়ক্ষেপণ পরিহারের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার করে সমন্বিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চালুর জন্য রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে আজকের সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক কামালউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. তামিম, ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অভিপ্রায় বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। অধ্যাদেশ জারি হলে এর বাইরে গিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ থাকবে না।