Thank you for trying Sticky AMP!!

‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কি লাভের চেয়ে ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে না’

বরাবর বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় হবে স্বাধীন। তারা সিদ্ধান্ত নেবে কোন ধরনের ছাত্র ভর্তি করবে। শিক্ষার অবকাঠামোর কথা চিন্তা করে সব বিশ্ববিদ্যালয় শর্তগুলো যুক্ত করবে তাদের ভর্তি পরীক্ষায়। পৃথিবীর সব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে আমরা কী ভেবে এ পরীক্ষাপদ্ধতি গুচ্ছ করে নিলাম, আমি বুঝি না। এটি কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টের সঙ্গে যায় না।

একটি বড় যুক্তি দিয়ে এ গুচ্ছপদ্ধতিতে আমরা এসেছি। শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয় বলে আমরা তাদের থাকা–খাওয়া–যোগাযোগে ক্লান্তির কথা বিবেচনা করে গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু করেছি। প্রথমবার যখন এ গুচ্ছ শুরু হলো তখন আমরা দেখেছি, শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে। ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করা পর্যন্ত দেখেছি, কত সময় চলে গেছে।

এবার এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারির দিকে। এর মধ্যে শুধু ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রমে হাত দিতে পারেনি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানে না, কবে এ ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে? অনুমান করা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরের আগে নতুন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে না। তার অর্থ, এ গুচ্ছপদ্ধতি শুধু ছাত্র ভর্তি করতে প্রায় এক বছর সময় খরচ করছে।

আমরা যারা বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছি, তারা সবাই জানি, আমাদের কতটা সেশনজট থাকে। মনে আছে, আমার পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষ করতে সময় লেগেছে আট বছর। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র দেখলাম ফেসবুকে পোস্ট করেছে, তার বয়স এখন ২৯ বছর। সে জানে না, কবে মাস্টার্স শেষ করে বের হবে। তার মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা চলে এসেছে। পাস করতে করতে তার সরকারি চাকরির বয়স চলে যাবে, এই চিন্তায় তার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এ ধরনের হতাশা শুধু এই ছাত্রেরই না, এই চিন্তা বাংলাদেশের সব ছাত্রের মধ্যেই থাকে। এই যখন অবস্থা, তখন ছাত্র ভর্তি করতে যদি এক বছর সময় লেগে যায়, তাহলে আমরা আমাদের ছাত্রদের জন্য আসলে কোন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি?

আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্বাধীনতায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি খুব দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারে, তাহলে সমস্যা কোথায়? গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে ক্লাস শুরু করেছে। অথচ তাদের সহপাঠী, যারা গুচ্ছে টিকেছে তারা এখনো জানে না, কবে তাদের ক্লাস শুরু হবে? এটি কি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও হতাশা তৈরি করে না?

আমার কাছে পরিষ্কার, গুচ্ছ একটা সরলীকরণ করার চেষ্টামাত্র। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসনেও প্রশ্ন উঠেছে। নিজেদের মতো কাজ করার স্বাধীনতা হারানোর কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও এ নিয়ে হতাশা রয়েছে। দুই–একটা বিশ্ববিদ্যালয় এ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এরপরও যদি ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত হতো, এ নিয়ে শিক্ষকদের একধরনের তৃপ্তি থাকত।

আমাদের বোধ হয় ভাবার সময় এসেছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। আমরা আসলেই সঠিক পথে আছি কি না, তা নিয়ে আরও গভীর বিচার–বিশ্লেষণ করতে পারি। শুরু হয়েছে বলে তা বন্ধ করা যাবে না, এমন ভাবার কারণ নেই। আমি মনে করি, গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভর্তি কার্যক্রমে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ও লাভবান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য ফিরিয়ে আনতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: মো. ফজলুল করিম, পিএইচডি, সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল এবং ভূতপূর্ব ফ্যাকাল্টি, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।