Thank you for trying Sticky AMP!!

সেন্টমার্টিনে শিক্ষাসফর, ৩০ মিনিটে ৬৫ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের

প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সেন্ট মার্টিনের ৬০০ মিটার এলাকা থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে ৬৫ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাসফরে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে গিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একদল শিক্ষার্থী। তবে এই সফর শুধু ঘোরাঘুরিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, তিন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা দ্বীপের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে একটি ক্যাম্পেইনও করেছেন। সেই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সেন্ট মার্টিনের ৬০০ মিটার এলাকা থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে ৬৫ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছেন তাঁরা।

পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে সচেতন করার পাশাপাশি প্লাস্টিকগুলো রিসাইক্লিংয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য টেকনাফে পাঠানো হয়।

বন্য প্রাণী গবেষক মোহাম্মদ ফিরোজ জামানের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৭৬ শিক্ষার্থীর একটি দল গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনের উত্তর-পশ্চিম অংশের ৬০০ মিটার এলাকায় প্লাস্টিক দূষণবিরোধী এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। এতে সহযোগিতা করে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউএনডিপি। ফিরোজ জামানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সহতত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম ও মো. ফজলে রাব্বী।

ফিরোজ জামানের নির্দেশনায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষাসফরের বিষয়ে একটি লিখিত বিবরণী পাঠিয়েছেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) বন্য প্রাণী পরিবেশবিদ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।

শিক্ষাসফরে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা

লিখিত বিবরণীতে এতে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনের উত্তর-পশ্চিম অংশ থেকে ৩০ মিনিটে ৬৫ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকসামগ্রী, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর প্যাকেট ও পলিথিন ছিল অন্যতম। প্লাস্টিকের বোতল ও একবার ব্যবহার্য সামগ্রী ছিল ৯০ শতাংশ। এ সময় প্লাস্টিক সংগ্রহের পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয় মানুষকে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে সচেতন করা হয়। পরে সংগৃহীত প্লাস্টিকগুলো রিসাইক্লিংয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় টেকনাফে পাঠানো হয়।

লিখিত বিবরণীতে আরও বলা হয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ বলে ঘোষণা করে সরকার। সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম চললেও এখনো এখানে প্লাস্টিক দূষণ একটি ভয়াবহ সমস্যা বলে চিহ্নিত। বিশেষ করে দর্শনার্থীদের ভিড়ে অতিরিক্ত প্লাস্টিক দূষণ গ্রাস করছে এখানকার জীববৈচিত্র্যকে। মাত্র ৩০ মিনিটে ৬০০ মিটার এলাকায় ৬৫ কেজি প্লাস্টিকের উপস্থিতি এটিই নির্দেশ করে যে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই আমরা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এই দ্বীপকে হারাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এমন উদ্যোগ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষাসফরের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। এ রকম কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেরা নিজেদের ও আশপাশের মানুষদের সচেতন করতে পারবেন, একইভাবে জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকাগুলো রক্ষা পাবে পরিবেশদূষণের হাত থেকে।

সেন্ট মার্টিনের উত্তর-পশ্চিম অংশ থেকে ৩০ মিনিটে ৬৫ কেজি প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে

সেন্ট মার্টিন কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। প্রশাসনিকভাবে দ্বীপটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে গ্রাম আছে নয়টি।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই দ্বীপের আয়তন ১৩ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আছে দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল, সরকারি ভবনসহ অন্তত ৩ হাজার বসতবাড়ি। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই দ্বীপে বেড়াতে যান পর্যটকেরা।

পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে সচেতন করার পাশাপাশি প্লাস্টিকগুলো রিসাইক্লিংয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য টেকনাফে পাঠানো হয়।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আছে ৪০ প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ক বা কড়ি–জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদসহ নানা প্রজাতির প্রাণী।