Thank you for trying Sticky AMP!!

আতঙ্কের নয় মিনিট

মঙ্গল গ্রহে সফল অবতরণের কৃতিত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গী হলো চীন। আতঙ্কের নয় মিনিট শেষে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে জুরং নামের চীনা রোভার।

শিল্পীর অলংকরণে চীনের জুরং রোভার

‘নয় মিনিটের আতঙ্ক’ শেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলে অবতরণ করেছে দেশটির পাঠানো রোভার জুরং। লাল গ্রহের মাটিতে অন্তত ৯০ দিন চরে বেড়িয়ে বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠানোর কথা রয়েছে ছয় চাকার রোবটযানটির।

মঙ্গলে সফল অবতরণ নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। বিশেষ করে কাজটি যখন এত কঠিন। এই কৃতিত্বে এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভাগীদার ছিল না। এবার সঙ্গী হলো চীন। অন্য দেশগুলোর সব অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে—হয় ধ্বংস, নয়তো রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

মঙ্গল গ্রহে অভিযানের আদ্যোপান্তই কঠিন। তবু মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ থেকে শুরু করে পরবর্তী সাত মিনিটকে বলা হয় ‘সেভেন মিনিটস অব টেরর’ বা আতঙ্কের সাত মিনিট। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর থেকে পৃষ্ঠে অবতরণ করতে কমবেশি এমন সময়ই লাগে। চীনের অভিযানে অবশ্য ৯ মিনিট লেগেছে। আর সে কারণেই বলা হচ্ছে, আতঙ্কের নয় মিনিট। তবে প্রশ্ন হলো, কেবল সে সময়টিকেই আতঙ্কের মুহূর্ত বলা হয় কেন?

চীনের লং মার্চ ফাইভ-বি রকেটে করে পাঠানো হয় জুরং রোভার

মঙ্গলে বার্তা পৌঁছে ১৮ মিনিট পর

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোভার পরিচালনায় নির্দেশ পাঠাতে বিজ্ঞানীরা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করেন। আর পৃথিবী থেকে মঙ্গলের বর্তমান দূরত্ব ৩২ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে মঙ্গলে বেতার তরঙ্গ পাঠাতে আমাদের সময় লাগে ১৮ মিনিটের মতো।

মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যে নভোযান নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পান না পৃথিবীতে থাকা বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা। কারণ ‘ওস্তাদ বাঁয়ে পেলাস্টিক, ডাইনে লন’ বললে সেটা ওস্তাদের কানে (পড়ুন ‘রোভারের যান্ত্রিক কানে’) গিয়ে পৌঁছাবে কমবেশি ১৮ মিনিট পর। রোভার ততক্ষণে মঙ্গলের পৃষ্ঠে নেমে খানিকক্ষণ জিরিয়ে নেওয়ার সময়ও পাবে।

আতঙ্কের কারণ হলো, রোভার নিরাপদে নামল কি না, নাকি এলিয়েনরা এসে যন্ত্রপাতি খুলে যে যার মতো দৌড় লাগাল, তা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন ওই ১৮ মিনিট পর। সে জন্য রোভার অবতরণ করে নিজে থেকেই। বিজ্ঞানীরা অবশ্য আগে থেকে অঙ্ক কষে সবকিছু ঠিক করে দেন। কোন পথে এগোবে, কখন কী হবে—সবকিছুই।

যেভাবে কাটে আতঙ্কের সময়

আতঙ্কের নয় মিনিট

একেক অভিযানে একেকভাবে নামানো হয় রোভার। জুরোংয়ের বেলায় অভিযান পরিচালনা করতে ব্যবহার করা হয় তিয়ানওয়েন-১ নামের নভোযান। এর তিনটি অংশ—অরবিটার, ল্যান্ডার আর রোভার।

অরবিটারের কাজ হলো মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে কাজটি করছে তিয়ানওয়েন-১। ল্যান্ডারের কাজ অবতরণের জায়গার কাছাকাছি অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবতরণ করা। এ সময় রোভার সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলের দিকে এগিয়ে যায় ল্যান্ডার। আতঙ্কের সময় এটাই। আর ল্যান্ডার অবতরণ শেষে তা থেকে বেরিয়ে আসে জুরোং রোভার।

অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ল্যান্ডার। এ সময় রোভার বিশেষ খোলসে আবদ্ধ থাকে। মঙ্গলের পৃষ্ঠের দিকে অত্যন্ত দ্রুত বেগে এগিয়ে যাওয়ার সময় বাধা তৈরি করে মঙ্গলের বাতাস। আর এই বাধায় এত বেশি তাপ উৎপন্ন হয় যে জ্বলজ্বল করতে থাকে রোভারবাহী ল্যান্ডারটি। দূর থেকে সেটি দেখায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তাপ থেকে ল্যান্ডার ও এর ভেতরে থাকা রোভার রক্ষার জন্য সামনের দিকে থাকে তাপব্যূহ বা হিট শিল্ড।

মঙ্গলে নাসার পারসিভারেন্স রোভার অবতরণ করে গত ফেব্রুয়ারিতে

পতনের গতি কমিয়ে আনতে নির্দিষ্ট সময় পর বেরিয়ে আসে প্যারাসুট। আর পৃষ্ঠের কাছাকাছি আসার পর চালু হয়ে যায় ল্যান্ডারের রকেট ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলোর থ্রাস্টের জোরেই পৃষ্ঠের ওপর নিরাপদে নামার সুযোগ পায় রোভার।

আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৮ মিনিটে মঙ্গলের ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া অঞ্চলে অবতরণ করে জুরং। অবতরণের ১৭ মিনিট পর বেরিয়ে আসে সেটির সোলার প্যানেল, এরপর পৃথিবীতে সংকেত পাঠায় রোভারটি।

মহাকাশে একের পর এক সক্ষমতা প্রমাণ করছে চীন। এর আগে চাঁদে রোভার পাঠিয়েছে, চাঁদের নুড়ি পৃথিবীতেও এনেছে। চলতি মাসেই পৃথিবীর ঠিক ওপরে নতুন একটি মহাকাশ কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রথম অংশ পাঠিয়েছে তারা। আর এবার রোভার নামাল মঙ্গলে। কে জানে, একদিন হয়তো সেখানে বসতিও গড়ে ফেলবে। সেদিন কি আর ‘মেড ইন চায়না’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকবে?

ভিডিওতে দেখুন জুরং যেভাবে অবতরণ করেছে

সূত্র: বিবিসি, স্পেস ডটকম