Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা হলেও টিকা নিলে কি ক্ষতি হতে পারে?

করোনার টিকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শিগগিরই আমাদের দেশেও শুরু হবে। যত দ্রুত আমরা বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারব, তত দ্রুত সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশের অনেকেই তো এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিছুদিন বিশ্রামের পর আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করেছেন। তাঁদের শরীরে তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে। এ অবস্থায় করোনা হওয়ার পরও টিকা নিলে কি ক্ষতি হতে পারে? এটা জানা দরকার। এ বিষয়ে দি নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন সংস্করণে অরপূর্ভা ম্যান্ডাভিলি (Apoorva Mandavilli) ৫ ডিসেম্বর (৯ ডিসেম্বর সম্পাদিত) একটি লেখায় বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেছেন।

অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনে করেন, শরীরে স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অ্যান্টিবডি মাস ছয়েকের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই একবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও টিকা নেওয়া ভালো। এতে ক্ষতি নেই। যদি শরীরে অ্যান্টিবডি থাকেও, তাহলেও টিকা নিলে সেটা বুস্টার ডোজ হিসেবে কাজ করবে।

অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, একবার করোনা হয়ে সুস্থ হওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি পাঁচ-দশ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতভেদ আছে।

কিন্তু এই বিতর্কে না গিয়েও আমাদের অন্তত জানা দরকার, করোনা হলেও এরপর টিকা নিলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে কি না? যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন–এর ইমিউনোলজিস্ট ম্যারিয়ন পিপার (Marion Pepper) বলেন, সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর টিকা নিলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে। বুস্টার ডোজের কাজ করবে।

অবশ্য ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’–এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মনসেফ স্লাওই (Dr. Moncef Slaoui) বলেন, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার সময় ১০ শতাংশ টিকা গ্রহণকারী ছিলেন কোভিড আক্রান্ত। তাঁদের না জানিয়েই টিকা দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁদের দেহে টিকার প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল কী, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই করোনা–আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তি টিকা নিলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে কি না, তা সুনিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে।

করোনাভাইরাস

টিকার অপেক্ষায় না থেকে করোনা হয়ে যাওয়া ভালো নয় কি?

করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য লকডাউন, সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা ইত্যাদি বেশ কঠিন। অনেক মানুষ বেকার হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই অনেকে ভাবতে পারেন, কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়াই ভালো। এতে করোনা হয়ে যদি সুস্থ হয়ে ওঠা যায়, তাহলে তো ন্যূনতম প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবেই। এ কারণে আমাদের দেশসহ অনেক দেশে মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চায় না বা আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য মনে করে কিছু হবে না, হলেও সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে। এটা ভুল ধারণা। একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জীবনের ঝুঁকি থাকবেই এবং শেষ পর্যন্ত হয়তো সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব না। আমাদের দেশেই তো এখন প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করার পর সংক্রমণের হার ১০-১২ শতাংশ পাওয়া যায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২০-৩০ জন মারা যান। তাই আমাদের সব সময় টিকা না দেওয়া পর্যন্ত মুখে মাস্ক, কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলা প্রভৃতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। কারণ, করোনার ঝুঁকি একজনের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

তাহলে কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?

একটি মৌলিক প্রশ্ন। এর উত্তর নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ নেই। অবশ্য অনেকে মনে করেন, আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে বা অন্তত ২০২১ সালের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই সময়টুকু আমাদের নিরাপদে থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। রুটিরুজির ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু এই দুটি কি একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোটামুটি সম্ভব। যদি বাইরে চলাফেরার সময় সবাই, মানে প্রতিটি ব্যক্তি মুখে মাস্ক ব্যবহার করি ও সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধোওয়ার চর্চা আয়ত্ত করি, তাহলে অন্তত ৮০-৯০ ভাগ ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আর যদি জনে জনে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে পারি, তাহলে আরও নিরাপদ থাকব।

আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com