Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন সিইওর এমন মিল কি কেবলই কাকতালীয়?

(বাঁ থেকে) আইবিএমের সিইও অরবিন্দ কৃষ্ণ, আমাজনের হবু সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি এবং মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা। তাঁরা সবাই আগে তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগের প্রধান ছিলেন

আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দিলেন, তিনি আর প্রধান নির্বাহী থাকবেন না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ভার অ্যান্ডি জ্যাসিকে দিয়ে বেজোস নেবেন নির্বাহী চেয়ারম্যানের ভূমিকা। অ্যান্ডি জ্যাসি বর্তমানে আমাজনের ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ এডব্লিউএসের প্রধান, এবার পুরো আমাজনের দায়িত্ব নেবেন।

জ্যাসির পদোন্নতির সঙ্গে সত্য নাদেলার মিল পাওয়া যায়। মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ অ্যাজিউরের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন নাদেলা। ২০১৪ সালে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে করা হয় মাইক্রোসফটের সিইও।

আরেকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনসের (আইবিএম) সিইও হিসেবে গত বছর গিনি রমেটির জায়গায় আসেন অরবিন্দ কৃষ্ণ। মজার ব্যাপার হলো অরবিন্দও আগে আইবিএমের ক্লাউড বিভাগের প্রধান ছিলেন।

কেবল সিইও নয়, প্রতিষ্ঠান তিনটির মধ্যেও কিন্তু মিল আছে। ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেটা করপোরেশনের (আইডিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পাবলিক ক্লাউড সেবার বাজার ২০২০ সালে বেড়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর এই খাতে মোট রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে। একই প্রতিবেদনে শীর্ষ ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাজন ও মাইক্রোসফটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষে না হোক, খুব বেশি পিছিয়ে নেই আইবিএমও। [সূত্র]

তিনটি প্রতিষ্ঠানের সিইও নির্বাচনে এমন মিল কাকতালীয় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাইক্রোসফটের কথা যদি বলা হয়, ঠিক নিভু নিভু প্রদীপ না হলেও স্টিভ বলমারের শেষ দিনগুলোতে মাইক্রোসফটের অবস্থা খুব ভালো ছিল না। নাদেলা এসে সফটওয়্যারনির্ভরতা ছেড়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্লাউড সেবানির্ভরতার দিকে গিয়ে নেন, মাইক্রোসফটের চিত্র আপাদমস্তক বদলে দেন। হতে পারে সত্য নাদেলার হাত ধরে মাইক্রোসফট যে সাফল্য পেয়েছে, আমাজনও তেমনটাই চাচ্ছে।

আরেকটি ব্যাপার হলো, দিন যত গড়াবে, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের গুরুত্ব তত বাড়বে। কারণ, এখন সব প্রতিষ্ঠানই প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আর তা না হলে ব্যবসায়ে টিকে থাকা কঠিন।

ক্লাউডেই ভবিষ্যৎ

ক্লাউড কম্পিউটিং অনেকটা ঘর ভাড়া নেওয়ার মতো। যেমন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে থাকতে চাইলে বাড়ি তৈরির তো কোনো প্রয়োজন নেই। আরেকজনের বাড়িতে ঘর ভাড়া নিলেই হলো। ফ্ল্যাটে ঘর কয়টি দরকার, জানালা কোন দিকে না হলেই নয়, পর্দার ফাঁক গলে সকালের প্রথম রোদ আসছে কি না, অর্থাৎ আপনার যা যা দরকার, সে অনুযায়ী ঘর ভাড়া নিতে পারবেন। এর সঙ্গে যোগ করতে পারবেন গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মতো উপযোগ। নিজে বাড়ি করতে গেলে প্রথমত বিশাল বিনিয়োগ দরকার। দ্বিতীয়ত, মনের মতো বাড়ি করা না-ও সম্ভব হতে পারে। তা ছাড়া আজীবন আপনি ঢাকায় না-ও থাকতে পারেন। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ভাড়াবাড়ি আপনার জন্য সেরা অপশন।

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ব্যাপারটা তেমনই। আপনার যতটুকু কম্পিউটিং সেবা, অর্থাৎ সার্ভার, স্টোরেজ, ডেটাবেইস, সফটওয়্যার ইত্যাদি দরকার, ঠিক ততটুকু নিতে পারবেন। যেদিন দরকার বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। আবার প্রয়োজন না হলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দিতে পারছেন।

এখন বড় বড় সার্ভার বা সফটওয়্যারে বিনিয়োগ করা বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভব হতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ভর করে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ওপর। যখন যতটুকু কম্পিউটিং সেবা দরকার, ততটুকু ভাড়া পরিশোধ করে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে তারা। আর এখন বড় বড় প্রতিষ্ঠানও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ না বাড়িয়ে আমাজন-মাইক্রোসফট-গুগল-আইবিএমের সেবা গ্রহণ করছে। ভবিষ্যতে সে প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়বে।

এসব তো গেল পশ্চিমা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা। চীনের আলিবাবার কথা বলা যাক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আলিবাবার দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর শীর্ষে রয়েছে ক্লাউড কম্পিউটিং। প্রধানত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিইও ড্যানিয়েল জাং ২০১৮ সালে সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ভবিষ্যতে আলিবাবার মূল ব্যবসা হবে ক্লাউড কম্পিউটিং।’

আলিবাবা কিন্তু সে পথেই এগোচ্ছে।