Thank you for trying Sticky AMP!!

চাঁদে অভিযানের ৫১ বছর পর পেলেন পুরস্কার

২০১৬ সালে নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টারের একটি ভবনের নামকরণ করা হয় ক্যাথেরিন জনসনের সম্মানে

ক্যাথেরিন জনসনকে সবাই ‘কম্পিউটার’ ডাকতেন। কারণ, নির্ভুল হিসাব কষে তিনি রকেটের উড্ডয়নপথ নির্ধারণ করতেন। তা-ও নিজ হাতে। না ছিল কম্পিউটার, না ছিল আজকের রাজ্যের আধুনিক সব প্রযুক্তি।

ক্যাথেরিনের মতো ‘মানব কম্পিউটার’ ছিল বলেই জন গ্লেন মার্কিনিদের মধ্যে প্রথম মহাশূন্যে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পেরেছিলেন। ক্যাথেরিনরা না থাকলে নিল আর্মস্ট্রং হয়তো কখনোই চাঁদে পা রাখতে পারতেন না। তাঁর নির্ভুল হিসাব-নিকাশ নভোচারীদের মহাকাশে পাঠিয়েছিল, আবার নিরাপদে ফিরিয়েও এনেছিল।

পেলেন মরণোত্তর স্বীকৃতি

মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাথেরিন জনসনকে এ বছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি হাবার্ড মেডেলে ভূষিত করা হচ্ছে। তিনি সশরীরে মহাকাশে যাননি ঠিকই, তবে তিনি না থাকলে হয়তো মহাকাশ অভিযান বলে কিছুই থাকত না। গত ফেব্রুয়ারিতে ১০১ বছরে মারা যান ক্যাথেরিন।

ক্যাথেরিন জনসন

অ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানের নভোচারীরাও একই পুরস্কার পেয়েছেন। তবে ১৯৬৯ সালে, অভিযানের একই বছরে। এত দিন পর হলেও, এমনকি মৃত্যুর পর হলেও, ক্যাথেরিনের কাজের স্বীকৃতি দিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। জীবদ্দশায়ও বেশ কিছু স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। ক্যাথেরিন জনসনের নামে ২০১৬ সালে ৩ কোটি ডলার ব্যয়ে ৪০ হাজার বর্গফুটের গবেষণাগার তৈরি করে নাসা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমে ভূষিত করেন। তবে কখনো স্বীকৃতির আশা করেননি তিনি। সব সময় নিভৃতে নিজের কাজ করে গেছেন।

ক্যাথেরিনের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল টাইফেনহলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘৫০ বছর আগে অ্যাপোলো ১১ অভিযানের নভোচারীরা এ পুরস্কার পেয়েছেন। যে গণিতবিদের কাজ ওই অভিযানগুলোকে সম্ভব করে তুলেছিল, তাঁকে স্বীকৃত দিতে পেরে আমরা সম্মানিত।’

‘ম্যাথ জিনিয়াস’

গণিতে তাঁর অসাধারণ দক্ষতার কারণেই ১৯৬১ সালের মহাকাশ অভিযানে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে প্রথম মহাশূন্যে পাড়ি জমান অ্যালান বি শেফার্ড। সেই একই দক্ষতায় ভর করে বছরখানেক পর মহাশূন্যে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে আসেন জন গ্লেন। ক্যাথেরিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ সম্ভবত ১৯৬৯ সালের অ্যাপোলো ১১ অভিযান। রকেটের উড্ডয়নপথের হিসাব কষেছিলেন পৃথিবীতে বসেই। সে সুবাদে ওদিকে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে মর্ত্যের মানুষ। যেটি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর একটি মনে করা হয়।

শুরু থেকেই ‘ম্যাথ জিনিয়াস’ হিসেবে পরিচিত ক্যাথেরিন। ১০ বছর বয়সে হাইস্কুলে ভর্তি হন। চার বছর পর সে পাট চুকিয়ে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া স্টেট কলেজে ভর্তি হন। ১৮ বছর বয়সে স্নাতক শেষ করেন তিনি।

১৯৬৬ সালে নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টারে কাজের ফাঁকে নাসার গণিতবিদ ক্যাথেরিন জনসন

শৈশবে পরিবারের সঙ্গে ক্যাথেরিন থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার হোয়াইট সালফার স্প্রিংয়ে। ওই অঞ্চলে সে সময় কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের কপালে ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়াশোনার সুযোগ জুটত না। ঠিক সে কারণে ক্যাথেরিনের বাবা জশুয়া কোলম্যান সপরিবার ১২৫ মাইল দূরে ঘর বাঁধলেন। সেখানে গিয়ে ভাইবোনসহ পড়াশোনার সুযোগ পেলেন ক্যাথেরিন।

১৯৩৯ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর শ্রেণির পড়াশোনা শুরু করেন। সেখান থেকেই গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তৃতীয় আফ্রো-আমেরিকান নারী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি। এরপর ১৯৫২ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় যোগ দেন ক্যাথেরিন। সে সময় নাসায় আরও কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী গণিতবিদ কাজ করতেন। তাঁদের সঙ্গেই কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর শুরু হয় তাঁর গণিতের জাদু।

তিনি ছিলেন নির্ভীক

ক্যাথেরিনের তিন কন্যা। দুজন মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। হ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষে ১৯৬২ সালে নাসায় যোগ দেন জয়লেট হাইলিক। আর ক্যাথি মুর ৩৩ বছরের কর্মজীবনে গণিতের শিক্ষক কিংবা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। দুজনই এখন অবসরপ্রাপ্ত। আরেক কন্যা কনস্ট্যান্স গোবল গার্সিয়া ২০১০ সালে মারা যান।

তরুণ ক্যাথেরিন জনসন

মায়ের কথা স্মরণ করে ক্যাথি বলেন, ‘তিনি ছিলেন নির্ভীক। ৩০, ৪০ এবং ৫০–এর দশকের কথা ভাবুন। প্রথমত, নারীদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করাই সে সময় কঠিন ছিল। তার ওপর কাজ করতেন গণিত ও গবেষণার মতো ক্ষেত্রে। তিনি নির্ভীক ছিলেন বলেই পেরেছিলেন বলে আমি মনে করি।’

কন্যাদের সব সময় নিজের কাজ করে যেতে বলতেন ক্যাথেরিন। হাইলিক বলেন, ‘মা বলতেন, জিদ থাকা ভালো, তবে ঔদ্ধত্য নয়। তোমাকে যা করতে হবে, তা করে যাও। এ জন্য বেশি নামডাকের তো প্রয়োজন নেই।’

ক্যাথেরিনের চেষ্টা অন্যদের পথ দেখিয়েছে। নিজের অজান্তে হলেও ক্রিস্টিনা কোচের মতো নারী নভোচারীদের জন্য কাজ করে গেছেন ক্যাথেরিন। নারীদের মধ্যে ক্রিস্টিনা মহাশূন্যে টানা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তা ছাড়া ২০১৯ সালের অক্টোবরে জেসিকা মায়ারের সঙ্গে ‘অল-ফিমেল স্পেস ওয়াকে’ অংশ নেন ক্রিস্টিনা। মানে প্রথমবারের মতো পুরুষসঙ্গী ছাড়া মহাকাশে ‘পদচারণা’। ক্যাথেরিন জনসন সম্পর্কে ক্রিস্টিনা বলেন, ‘যখন আমি ও ক্যাথেরিন জনসনের প্রেক্ষাপটের কথা ভাবি, শ্রদ্ধাবনত হয়ে যাই। আমার চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি।’

ক্যাথেরিনের ৯৮তম জন্মদিনে সম্মান জানান মার্কিন অভিনেত্রী তারাজি হেনসন

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ক্যাথেরিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান নভোচারী কেট রুবিনস