Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন বই হাতে পেয়ে খুশি শিশুরা। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে সারা দেশে বই উৎসব পালিত হয়

মানে আপস, তবু সব বই পাওয়া নিয়ে সংশয় 

  • প্রাথমিক স্তরে ৪৬.২৭ শতাংশ বই ছাপা বাকি।

  • মাধ্যমিক স্তরে এখনো ছাপা বাকি ৩১ শতাংশ বই।

  • ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হতে পারে, আশা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র ১০ দিন বাকি। তবে প্রাথমিক স্তরে বিনা মূল্যের প্রায় অর্ধেক (৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশ) বই এখনো ছাপা হয়নি। মাধ্যমিকে ছাপা বাকি ৩১ শতাংশ বই। সময়মতো সব বই পেতে মানের সঙ্গে ‘আপস’ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে এরপরও নতুন বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এনসিটিবি, মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ও বই ছাপার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে সরকার। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি বই ছাপানোর কাজ চলছে। এবার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ও শিক্ষক গাইড দেওয়া হচ্ছে।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে সব এলাকায় সব বই দিতে না পারলেও সব শিক্ষার্থীর হাতে অধিকাংশ বই দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মিলিয়ে ৮০ শতাংশের মতো বই ছাপার কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করেন তাঁরা। তবে মানের বিষয়টি এই কর্মকর্তারা এড়িয়ে যান। 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিকের বই ছাপায় কিছু পিছিয়ে আছেন তাঁরা। তবে হাতে যে সময় আছে, তাতে আগামী ১ জানুয়ারি সারা দেশে উৎসব করে বই দেওয়া সম্ভব হবে। তবে শতভাগ বই দিতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

কাগজের উজ্জ্বলতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এরপরও নতুন বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

পাল্পের সংকটে উজ্জ্বলতায় ছাড়

পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি, কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে আগে থেকেই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত সব বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা ছিল। এর মধ্যে কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপার পাঁয়তারা করে আসছিলেন মুদ্রণকারীদের অনেকেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, শেষ পর্যন্ত এনসিটিবি সেই ফাঁদেই পড়ল।

এনসিটিবির সূত্রমতে, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, পাঠ্যবই ছাপার কাগজের উজ্জ্বলতা ৮৫ হওয়ার কথা। কিন্তু বৈশ্বিক সংকটের কারণে ভালো মানের পাল্প (কাগজের ভার্জিন মণ্ড) পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলছিলেন মুদ্রণকারীরা। তাই এ বিষয়ে তাঁরা ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এখন এনসিটিবি কাগজের উজ্জ্বলতা ৮২ শতাংশও মেনে নিচ্ছে। সময়মতো সব বই পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে এমন ছাড় দেওয়া হয়েছে। 

তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক মুদ্রণকারী ওই মানের (উজ্জ্বলতা ৮২ শতাংশ) চেয়েও নিম্নমানের কাগজে বই ছাপছেন। এনসিটিবির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নমানের কাগজ হওয়ায় এরই মধ্যে ১০টির বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বই বাতিল করা হয়েছে। হাওলাদার অফসেটের তিন হাজার বই বিনষ্ট করা হয়েছে। সরকার প্রেস নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের তিন লাখ কপি ফর্মা, সরকার অফসেট প্রেসের দুই লাখ কপি ফর্মা এবং আল আমিন প্রেসের এক লাখ কপি ফর্মা বিনষ্ট করা হয়েছে।

মানের বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ভার্জিন পাল্পের সংকটের কারণে অন্যান্য বিষয় ঠিক রেখে শুধু উজ্জ্বলতার ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। 

১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশব্যাপী বই উৎসব

৬৮ উপজেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক উত্তম কুমার দাশ ১৭ ডিসেম্বর এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, দশদিশা প্রিন্টার্স নামে একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মোট ১৩ লাখ ২ হাজার ৩৮৭ কপি বই ছাপা ও সরবরাহের কাজ পেয়েছে। পার্বত্য এলাকার ১৯ উপজেলাসহ ৪৭ উপজেলায় তাদের বই দেওয়ার কথা। এত বিপুলসংখ্যক বই ছাপার কাজ পাওয়া সত্ত্বেও ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মুদ্রণ কাগজের মান যাচাই করাই হয়নি। ফলে যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

একই দিন আরেক চিঠিতে বলা হয়, জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ২১ উপজেলার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ৯ লাখ ৯৪ হাজার বই ছাপার কাজ পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানেরও কাগজের মান যাচাই করা হয়নি। এ জন্য ছাপা শুরু করতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় চিঠিতে।

মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত, এবার কাগজের সংকট মারাত্মক। দ্বিতীয়ত, কয়েকটি শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের বই তৈরিতে দেরিসহ আরও কিছু বিষয়ে দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে শতভাগ বই দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, কাগজের মণ্ডের সংকটের কারণে উজ্জ্বলতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ তার চেয়েও নিম্নমানের কাগজে বই ছাপছে। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আছে বলেও মনে হয় না। 

‘মান খারাপ কাম্য নয়’

এনসিটিবির সূত্রমতে, ২০২৩ সালের জন্য মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি বই (৬৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ) ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ১৪ কোটি ৭১ লাখের বেশি বই। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরে প্রায় পৌনে ১০ কোটি বইয়ের মধ্যে ৫ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজারের বেশি (৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ) বই ছাপা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে গেছে পৌনে ৪ কোটি বই। 

বই ছাপার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, এবার ১ ডিসেম্বর প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এখানেই বেশি দেরি হয়েছে। তবে প্রাথমিকের বইয়ের পাতা কম। তাই তাঁরা আশা করছেন, আগামী ১০ দিনে অধিকাংশ বই ছাপার কাজ শেষ হতে পারে। 

জানতে চাইলে এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পাল প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাগাদা দিয়ে বই আদায় করতে হবে। তবু কিছু বই পেতে দেরি হলেও মুদ্রণকারীদের শাস্তির বিষয়ে কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যের পাঠ্যবইয়ের খারাপ মান কোনোভাবেই কাম্য নয়।