Thank you for trying Sticky AMP!!

আনন্দ-গানে ভরা তারকাসন্ধ্যা

‘মেরিল-প্রথম আলো’ মঞ্চ মাতালেন পূর্ণিমা ও নোবেল। পেছনে সহশিল্পীরা। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে l ছবি: সাহাদাত পারভেজ

গান, নাচ তো ছিলই, আর ছিল দুটি অবুঝ মনের সবুজ ভালোবাসার ছবি। আর হ্যাঁ, পুরস্কার বিতরণী, সে তো থাকবেই। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-২০১৫ অনুষ্ঠানটি আনন্দঘন হয়ে উঠেছিল সব মিলিয়ে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে দেশের বিনোদন ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অন্যতম প্রধান এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো।
শুরুতেই সঞ্চালক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক শ্রোতাদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, দর্শক-শ্রোতাদের ভোট ও সমালোচকদের রায়ে ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এটি ছিল মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ১৮তম আয়োজন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আপনাদের উষ্ণ সম্ভাষণ জানাই। যদিও প্রকৃতির এখন যে উষ্ণতা, তা দুঃসহ হয়ে উঠছে। চারপাশে হত্যা, গুম, সন্ত্রাসের ঘটনা আমাদের ভাবিত করে তুলেছে কীভাবে এর পরিবর্তন করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘এই বৈরী পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে সবাইকে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। যে অন্ধকার চারপাশে ঘনিয়ে আসছে, শিল্প-সংস্কৃতির আলো জ্বালিয়ে সেই অন্ধকারকে দূর করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। প্রথম আলোর ওপরে নানা রকম চাপ আছে। কিন্তু চাপে নত না হয়ে আমরা সৎ, স্বাধীন সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’
স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার প্রসার ঘটায় দেশের শিল্পীদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। তাঁরা কে কেমন করছেন, সারা বিশ্বের কাছে তা পৌঁছে যাচ্ছে। শিল্পীদের কাজের স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা দিতে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছে। এই পুরস্কার অব্যাহত থাকবে।
গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। তাই মূল অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ছিল দেশের তিন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ ও তামান্না রহমানের দল নৃত্য নন্দন, রেওয়াজ পারফর্মিং স্কুল, নৃত্যম নৃত্যশীলনের শিল্পীদের পরিবেশনায় মণিপুরি, ওডিশি ও কত্থক নৃত্য। তাদের সমবেত আয়োজনটি শেষ হয় ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ গানের সঙ্গে অপরূপ সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
এরপর আজীবন সম্মাননা। এবার এই সম্মাননা পান অভিনেত্রী কবরী। তাঁর হাতে সম্মাননা পদক, চেক ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম।
মঞ্চের বিশাল এলইডি পর্দায় শুরু হলো একটি চলচ্চিত্র—অবুঝ মনের সবুজ ভালোবাসা। চৌধুরী সাহেব (শহীদুল আলম সাচ্চু) হুংকার দিচ্ছেন তাঁর আভিজাত্যের গৌরব নিয়ে। আর ওদিকে মঞ্চে তাঁর মেয়ে রেশমীর (নূসরাত ফারিয়া) গায়েহলুদের আয়োজন চলছে। ‘লীলাবালি লীলাবালি’ গানের সঙ্গে চিরায়ত বিয়ে উৎসবের নাচ। নাচ যখন প্রায় শেষ, তখন পেছনের এলইডি পর্দায় দেখা যায় লাল মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে আসছেন রেশমীর প্রেমিক রাজ (আরিফিন শুভ)। মুঠোফোনের বোতাম চেপে কানে নিলেন তিনি। রিং বেজে উঠল মঞ্চে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে বসা রেশমীর মুঠোফোনে। কথোপকথনে প্রেমিকের কাছে পালিয়ে যাওয়ার আহ্বান পেয়ে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে গেলেন রেশমী। তারপর তাঁর বাবার মঞ্চে আগমন। সঙ্গে পিএস (আফজাল শরীফ)। তাঁরা কন্যা অপহরণের অভিযোগ করলেন থানায়। দ্রুত নির্দেশ দিলেন মেয়েকে উদ্ধার ও অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারের। এসপি (মৌসুমী হামিদ) সহকর্মীদের (মাজনুন মিজান ও সাঈদ বাবু) নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসলেন। যে করেই হোক চৌধুরীর মেয়েকে উদ্ধার করতেই হবে তাঁদের। গোপন সংবাদে জানা গেল মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসতে পারেন রাজ। সিদ্ধান্ত হলো অপহরণকারীকে ধরার জন্য জেমস বন্ডকে নিয়ে আসার। ওদিকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নেই। জেমস বন্ডরূপী তাহসানকে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার অনুরোধ করা হলো।
একদিকে চৌধুরীর মেয়ে আর তাঁর প্রেমিককে খুঁজে বের করা, অন্যদিকে বিভিন্ন বিভাগের পুরস্কার বিতরণের ফাঁকে ফাঁকে এগিয়ে চলে রাজ-রেশমীর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে বেড়ানো। এই জুটি উপস্থিত হয় চট্টগ্রামে। সেখানে পূর্ণিমা-নোবেল ও ইগল ডান্স গ্রুপের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইগগুম তোয়ারে/ মধু খই খই বিষ খাওয়াইলা’। এরপর তাঁরা পালিয়ে যান সিলেট। সেখানে ফেরদৌস ও মিম এবং নৃত্যভূমের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনায় হাসন রাজার গান ‘সোনা বন্দে আমারে দিওয়ানা বানাইলো’। সিলেট থেকে কুষ্টিয়া। সেখানে ‘মিলন হবে কত দিনে’ গানটি সহশিল্পীদের নিয়ে পরিবেশন করেন সালমা ও পুলক। শেষে রংপুর। ‘আজি ভাল করিয়া বাজানরে দোতারা’ গানের সঙ্গে সজল, মেহ্জাবীন, তানজিন তিশা ও সাবিলা নূরের নৃত্য।
এর ফাঁকে মঞ্চে অনুসন্ধান কাজে জেমস বন্ড মঞ্চ ছেড়ে গেলে সাজু খাদেম আসেন মঞ্চে সঞ্চালকের দায়িত্ব নিয়ে। তিনি ডেকে নেন জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম ও মীর সাব্বিরকে। তাঁদের সরস কথোপকথনে হাসিতে ফেটে পড়ে পুরো মিলনায়তন। শেষে মঞ্চে সেই লাল মোটরসাইকেলযোগে দুই প্রেমিকের উপস্থিতি। নানা ঘটনার ভেতর দিয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ।