Thank you for trying Sticky AMP!!

আমি ব্যর্থতাকে উদ্যাপন করি: অনুপম খের

>একজন অভিনেতা হিসেবে বারবার নিজেকে নতুন নতুন রূপে আবিষ্কার করেছেন। প্রথম চলচ্চিত্র সারাংশ দিয়েই অনুপম খের বুঝিয়ে দেন তিনি কত বড় মাপের অভিনেতা। মহেশ ভাটের এই ছবিতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি ৬৫ বছরের বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সদ্য মুক্তি পাওয়া ওয়ান ডে ছবিতে তাঁকে দেখা গেল এক বিচারকের ভূমিকায়। বলিউডের অত্যন্ত দাপুটে এবং প্রভাবশালী অভিনেতা অনুপম খেরের সাক্ষাৎকার নিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
অনুপম খের

ছবির নাম ওয়ান ডে। এক দিনের জন্য আপনাকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলে আপনি প্রথমেই কী করবেন?

অনুপম খের: প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি চাইব আমাদের দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী শিশুদের জন্য কিছু করতে। ওদের জীবনে কিছু বদল আনতে।

৩৫ বছরের দীর্ঘ অভিনয়জীবন আপনার। এই সফরকে কীভাবে দর্শাতে চান আপনি?

অনুপম খের: আমি মনে করি, ঈশ্বর আমার প্রতি খুবই সদয়। তিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এক ছেলে। আমার বাবা বন বিভাগের সাধারণ এক কেরানি ছিলেন। আমি শুধু স্বপ্ন দেখতে জানতাম। একদিন বুঝলাম, শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, একে পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। আমি পরিশ্রম করেছি। আজ তার সুফল ভোগ করছি। তবে আমি মনে করি, এখন আমার ক্যারিয়ারে বিরতি এসেছে। তাই এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রথমার্ধ সম্পর্কে আলোচনা করছি। এবার আমার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হবে। দেখি আরও কী কী করতে পারি। 

আপনার বাবার প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। শুনেছি, তিনি নাকি আপনাকে শিখিয়েছেন ব্যর্থতাকে উদ্​যাপন করতে। একবার পরীক্ষায় আপনার ফল খারাপ হয়েছিল বলে উনি নাকি আপনাকে চা, শিঙাড়া খাইয়ে ট্রিট দিয়েছিলেন। এখনো কি সেভাবে ব্যর্থতাকে উদ্​যাপন করেন?

অনুপম খের: একদম ঠিক। আমার সফলতার আসল কারণ, আমি ব্যর্থতাকে উদ্​যাপন করি। সফলতার প্রথম সোপান হলো ব্যর্থতা। এটাই আমি মেনে চলি। 

ঋষি কাপুর আমাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে তিনি নিজেকে প্রকৃত অভিনেতা হিসেবে আবিষ্কার করেছেন। আপনিও দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে চলেছেন। আপনি নিজেকে কীভাবে আবিষ্কার করবেন? 

অনুপম খের: আমি তো শুরু থেকে নিজেকে আবিষ্কার করে আসছি। আমার প্রথম ছবিতেই আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছি। সারাংশ ছবিতে ২৬ বছর বয়সে ৬৫ বছরের বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার ক্যারিয়ার আবিষ্কারে ভরা। খুব কম অভিনেতা আছেন, যাঁরা প্রথাগত একঘেয়েমি (টাইপ কাস্ট) থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। আমি তাঁদের একজন। আমি নিজের প্রতিটা ছবিতে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। আমি কর্মা, রাম লক্ষণ, স্পেশাল ২৬, আ ওয়েডনেস ডের মতো অজস্র ছবি করেছি। অভিনয় একটা এমন ক্ষেত্র, যেখানে নিজেকে নানান রূপে মেলে ধরা যায়। নিজেকে নিয়ে নিরীক্ষা করা যায়। অন্য কোনো পেশায় এই সুযোগ কম।

ওয়ান ডে ছবিতে অনুপম খের ও ইশা গুপ্ত

একসময় প্রায় সব ছবিতেই আপনি থাকতেন। কীভাবে ম্যানেজ করতেন একসঙ্গে এতগুলো ছবি? 

অনুপম খের: আমি চার বছর নাটক নিয়ে পড়েছি। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। আমি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিনেতা। তাই এটা আমার কাজ। আপনি যেমন একাগ্রতা, পরিশ্রমের সঙ্গে আপনার কাজ করছেন, আমিও তা–ই করি। 

ক্যামেরা পেছনে পরিচালক হিসেবে মাত্র একবার এসেছিলেন। পরিচালনায় আর দেখা যায়নি কেন? 

অনুপম খের: আসলে আমার প্রথম পরিচালিত ছবিটি সেই অর্থে চলেনি। দর্শক সেভাবে পছন্দ করেনি। মনে হয় দর্শক আমাকে অভিনেতা হিসেবেই বেশি পছন্দ করে। ভাগ্যিস আমার পরিচালিত প্রথম ছবিটা চলেনি। তাহলে ক্যামেরার পেছনে বেশি সময় কাটাতে হতো। তবে এই নয় যে পরিচালনা আর করব না। ভালো কোনো গল্প হাতে পেলে পরিচালনা করব। তবে এখন নয়। 

এখন একসঙ্গে আপনার দুটো নাটক চলছে। মঞ্চ আপনার কাছে কী?

অনুপম খের: মঞ্চ একজন অভিনেতাকে হৃৎস্পন্দন অনুভব করায়। একজন অভিনেতাকে আরও ধারালো করে তোলে। নাটকের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা যায়। আর এখানে একটাই সুযোগ। রিটেকের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। 

আপনি প্রায় ৫১৫টা চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ পর্যন্ত। এর মধ্যে এমন কোনো চরিত্র আছে কি, যা ব্যক্তি অনুপম খেরকে সমৃদ্ধ করেছে? 

অনুপম খের: কোনো না কোনো চরিত্র কিছু না কিছু দিয়ে যায়। আর তা অনুভব করি দুই-তিন বছর পর। আমি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার ছবিতে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই চরিত্র আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। চরিত্রটা দারুণ উপভোগ করেছিলাম। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজের মধ্যে অনেক কিছু আবিষ্কার করেছি। সারাংশ, ম্যায়নে গান্ধী কো নেহি মারাসহ এমন আরও অনেক ছবি আমাকে অনেক কিছু দিয়ে গেছে।

আপনার আত্মজীবনী প্রকাশ হতে চলেছে। কতটা রোমাঞ্চিত?

অনুপম খের: হ্যাঁ, আগস্টে আমার আত্মজীবনী লেসনস লাইফ টট মি, আননোইলিংলি প্রকাশ পাবে। দারুণ লাগছে। প্রি-বুকিং শুরু হয়ে গেছে। আমার জীবনের মতো আমার আত্মজীবনীও খুব ইন্টারেস্টিং হবে। আমি আমার জীবনকে সব সময় অটোবায়োগ্রাফির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এসেছি। আমি যখন নবাগত ছিলাম, তখন প্রচুর আত্মজীবনী পড়তাম। সফলদের জীবন আমাকে খুবই প্রেরণা জোগাত। আমি এক নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। আমার আত্মজীবনীও যদি অন্যকে প্রেরণা জোগায়, তাহলে খুব ভালো লাগবে।

কার কার জীবনী পড়েছেন?

অনুপম খের: চার্লি চ্যাপলিন, মহাত্মা গান্ধী, অ্যান্ড্রু বার্গম্যান, জওহরলাল নেহরুসহ অনেকের আত্মজীবনী পড়েছি।