Thank you for trying Sticky AMP!!

আর পারছি না এত এত মৃত্যুর খবর নিতে

শাবানা। ছবি-প্রথম আলো

স্বামী–সন্তানদের নিয়ে অনেক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে থাকছি। সবকিছুই কত সুন্দরভাবে চলছিল। হঠাৎ যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল। করোনাভাইরাস সবকিছুকে বদলে দিল। জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, ভাবিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশেও করোনায় কত মানুষ যে মারা যাচ্ছে! এখানে অনেক বাঙালির মারা যাওয়ার খবরও শুনছি। আর পারছি না এত এত মৃত্যুর খবর নিতে।

আমার দুই মেয়ে বিয়েশাদি করে অন্য জায়গায় থাকে। নিউ জার্সির এই বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে আমি ও সাদিক সাহেব (ওয়াহিদ সাদিক) থাকি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আমরা পুরোপুরি ঘরবন্দী হয়ে যাই। ৪৬ দিন ধরে আমি ঘরের ভেতরেই। হাঁটতে বাইরে বের হই না। আমাদের বাড়িটি তিনতলা। ঘরের মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করি।

আমি এমনিতেও অবশ্য খুব একটা ঘরের বাইরে বের হই না। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া লম্বা সময় ঘরে থাকা লাগবে না। এত বছরের জীবনে কখনোই এভাবে ঘরবন্দী হয়ে থাকিনি।

তবে আমার কিন্তু সময় কেটে যাচ্ছে। সারা দিনই কোনো না কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমি যেহেতু পুরোদস্তুর সংসারী মানুষ, ঘরে অনেক ধরনের কাজ থাকে। সেসব করে দিন কেটে যায়। সাদিক ব্যবসা করতেন, তাঁকে বাইরে যেতে হতো। এই সময়টায় তাঁর ঘরে থাকতে যদিও কিছু সমস্যা হচ্ছে, তারপরও তিনি মানিয়ে নিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, নিয়ম না মেনেও উপায় নেই।

শাবানা। ছবি-প্রথম আলো

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশ–বিদেশে মানুষের মৃত্যুর মিছিল খুব বিষণ্ন করে তোলে। আমরা মানুষ নিজেদের কত কী ভাবি, অথচ আমরা যে কিছুই না, করোনাভাইরাস তা বুঝিয়ে দিয়েছে। একটা সামান্য ভাইরাস, যা চোখে দেখছি না, সেটি পুরো পৃথিবীকে অস্থির করে তুলল। এখনে পর্যন্ত কেউ ভ্যাকসিন কিংবা ওষুধ আবিষ্কার করতে পারল না। পৃথিবীর বড় সব বিজ্ঞানী চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমাদের এখন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি মনে করি, তাঁর ইশারায় এই ভাইরাসের পৃথিবীতে আগমন, মানুষের ভেতরে উপলব্ধি ও বোধ জাগাতে। পৃথিবীতে স্রষ্টার সৃষ্ট মানুষ যেন তার অন্য সব সৃষ্টির প্রতিও যত্নবান করতে। মানবিক হয়। একদিন কোনো কিছুর অসিলায় তা থেকে তিনি সবাইকে মুক্তিও দিয়ে দেবেন। তাই সবারই উচিত বেশি বেশি প্রার্থনা করা।

আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে স্রষ্টার অন্য সব সৃষ্টির প্রতি দিনের পর দিন অনেক অত্যাচার করেছি। সেসব থেকে আমরা যেন সরে আসি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এসব বিষয় গভীরভাবে ভাবার সময়ও এসেছে। মানুষ দিয়েই শুধু পৃথিবী নয়, এই পৃথিবীতে অরও অনেক কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা মানুষেরা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে এসব অস্তিত্ব বিলীনের রাস্তা তৈরি করেছি।

করোনার এই সময়টাতে ঘরে বসে খবর দেখি বেশি। বাংলাদেশের খবর দেখে আঁতকে উঠি। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এখনো লকডাউন বিষয়টি মানছে না। ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে। বুঝতে চাইছে না, এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ। এটা থেকে মুক্তি যে শুধু ঘরে থাকা, সেটাও মানতে চাইছে না। করোনার এই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নিয়ম নিজের জন্য যেমন মানা উচিত, তেমনি অন্যকে ভালো রাখার জন্য সবারই মানা উচিত।

করোনার এই সময়টায় অহসায়, অসচ্ছল, দিন আনে দিন খাওয়া মানুষেরা কষ্টে আছে। সরকার পাশে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি করোনার এই সংকট সময়ে সামর্থ্যবানদের উচিত বেশি বেশি করে গরিব, অসহায় ও অসচ্ছলদের পাশে থাকা। ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আমি দেখছি স্বল্প আয়ের মানুষেরা অনেক বেশি কষ্টে আছেন। লকডাউনের এই সময়ে কাজ করতে পারছে না, বাইরে বের হতে পারছে না। আয়ও করতে পারছেন না।

শাবানা ও তাঁর স্বামী ওয়াহিদ সাদিক। ছবি-প্রথম আলো

করোনার এই সময়ে এমনও শুনছি, অনেক দিন ঘরে থাকতে থাকতে কেউ কেউ নাকি একঘেয়েমিতেও ভুগছেন। এটা কোনো অবস্থায় হওয়া যাবে না। মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। নিজেদের নানা কর্মে ব্যস্ত রাখতে হবে। এত দিন যাঁরা বলতেন, কাজের ব্যস্ততায় অনেক কিছুই করতে পারছি না, তাঁদের জন্য অনেক কিছু করার মোক্ষম সুযোগ। এখন তো সবাই ঘরে ঘরে, বাইরে কোনো কাজ নেই। সব থেমে আছে। এই করোনা একদিন চলে যাবে। তখন যত ইচ্ছা বাইরে থাকতে পারবেন। পড়াশোনা যাঁরা করেন, তারা বেশি পড়ায় মনোযোগী হন। যে যেই কাজে আনন্দ পান, সেই কাজটাই করে যান। পাশাপাশি যে যেই ধর্মের, প্রার্থনা করে সময় কাটাতে পারেন। টেলিভিশন দেখুন। বিনোদনের অনেক অপশনও আছে।

করোনা একটা একটা শিক্ষা। এই শিক্ষাটাকে আমাদের সামনের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। একটা সুন্দর জীবন গড়ার শপথ করতে হবে। দেশের সবাইকে বলব, তোমরা অকারণে ঘর থেকে বের হোয়ো না। সাবধানে থেকো, নিরাপদে থেকো, সবাইকে নিরাপদে রেখো।