Thank you for trying Sticky AMP!!

উকুলেলে বাজিয়ে গাইলেন কবি

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কবিতা উৎসব। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার জাতীয় কবিতা উৎসবে এসেছেন সুইডেনের কবি বেঙত্ সোদারহল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে উৎসবমঞ্চে তাঁর কবিতা দিয়েই শুরু হলো এ বছরের জাতীয় কবিতা উৎসব। গিটারসদৃশ চার তারের সুরযন্ত্র উকুলেলে বাজিয়ে তিনি গেয়ে শোনালেন নিজের কবিতা। আজ রোববার শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২০।

উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উৎসব পতাকা তোলেন কবিরা। সে সময় মূল মঞ্চে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন একুশের গান ও উৎসব সংগীত। এ বছর উৎসবের জন্য ‘মুজিব আমার স্বপ্নসাহস মুজিব জাতির পিতা’ গানটি লিখেছেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, সুর করেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘদিন ধরে এ উৎসবের সংগীত পরিচালনার জন্য সংবর্ধনা জানানো হয় গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরকে। একঝাঁক শিল্পীর সঙ্গে এ গানের কণ্ঠ দেন তিনিও।

উৎসবে যোগ দিতে গোপালগঞ্জ থেকে এসেছিলেন কবি চিন্ময় কুমার। মঞ্চে একটি কবিতা পড়ার জন্য নাম নিবন্ধন করতে বেশ বেগ পেতে হলো তাঁকে। তবে বিদেশি কবিরাই শুরু করেন এ উৎসব। বেঙত্ সোদারহলের পরে মঞ্চে আসেন নেপালের কবি তুলাসি দিওয়াসা। ইংরেজিতে তাঁর পাঠের নেপথ্যে আবহসংগীত বাজতে থাকে পিয়ানোতে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের পরিবেশ হয়ে ওঠে বসন্তবেলার মতোই। দিওয়াসার কবিতা এ পর্যন্ত প্রায় ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কবিতার কারণে এতগুলো ভাষার মানুষ আমাকে পাঠ করেছেন, আমিও পৌঁছতে পেরেছি তাঁদের কাছে। কবিতা এমনই এক শক্তিশালী মাধ্যম।’

পরে একে একে মঞ্চে আসেন উজবেকিস্তানের কবি নাদিরা আবদুল্লায়েভা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত গোস্বামী, দীধিতি চক্রবর্তী ও আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র, আসামের অনুভব তুলাসি, ত্রিপুরার রাতুল দেব বর্মণ, অর্পিতা আচার্য, তমাল শেখর দে এবং মেঘালয়ের ফাল্গুনী চক্রবর্তী।

বাদামি রঙের একটি খাম থেকে ছোট্ট একটি পাখা বের করে দেখান কবিতা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান। মাঘ মাসে কেন পাখা নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি? জানালেন, উজবেক কবি নাদিরার কাছ থেকে সেটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন। মখমলের ওপরে সোনালি সুতোর নকশা করা পাখাটি এই শীতেও কবিকে উষ্ণ করে তুলেছিল। সেলফিক্লান্ত কবি আনিসুল হককে দেখা যায় কবিদের ভিড়ে। সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক, কাজী রোজীসহ মল চত্বরের সকালটি ভরে ওঠে কবিদের পদচারণে।

প্রয়াত গুণীজনদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত এক বছরে প্রয়াত হওয়া কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিত্রকর ও সুধীজনদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। আহ্বায়ক শিহাব সরকার বলেন, ‘কবিদের চিরায়ত ধর্ম অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং শুভ ও মঙ্গলের আবাহন। আমরা লড়াই করেছি শৃঙ্খল মুক্তির জন্য। স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বিশুদ্ধ গণতন্ত্র। কবি মূলত শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করে। অনাদিকাল ধরে আমরা দেখে আসছি কবির প্রতিবাদ কখনো থামেনি। যেখানেই অবিচার, অন্যায় ও অসংগতি, সেখানেই কবির প্রতিবাদ। অবিচ্ছিন্ন শান্তির জীবন কবির নয়। তাকে সব সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়, সজাগ থাকতে হয়।’

সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের হয়ে দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করবে, সুবিবেচনা ও যোগ্যতার অভাবে অনেক সময় তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। মূলধারার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে উপেক্ষা করে তারা কৃত্রিম অ্যাকুয়ারিয়াম-সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। যে মুহূর্তে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপনের অপেক্ষায়, দেশে–বিদেশে আমাদের বহুবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি পেয়েছে। আমাদের অমর একুশে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, এখন পর্যন্ত আমাদের সংস্কৃতিবিষয়ক কোনো ক্যাডার সার্ভিস নেই।’

অসুস্থ থাকায় উপস্থিত হতে পারেননি উদ্বোধক মহাদেব সাহা। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান আবৃত্তিকার হাসান আরিফ। সেখানে এ উৎসবের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন কবি। সভাপতির বক্তব্যে কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা জানি, কবির কর্তব্য মানুষের জন্য অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন রচনা করা। অন্যদিকে একজন রাজনৈতিক নেতাও মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দেন। বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন রাজনীতির মহত্তম কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তাঁর জন্মশতবর্ষে ৩৪তম জাতীয় কবিতা উৎসবের কণ্ঠে আমরা তুলে দিয়েছি এই মর্মবাণী—মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি।’

কবিতার মঞ্চে দেশ–বিদেশের কবিরা। ছবি: প্রথম আলো

আজ সারা দিন কবিতাপাঠ
আজ দিনব্যাপী উৎসবমঞ্চে থাকবে কবিতাপাঠের আয়োজন। বিদেশি কবিরা ছাড়াও পাঠ ও আবৃত্তি করবেন আসাদুজ্জামান নূর, নূহ-উল-আলম লেনিন, রুবী রহমান, আনোয়ারা সৈয়দ হক, দিলারা হাফিজ প্রমুখ।

কাল সেমিনার, আবৃত্তি ও পুরস্কার
সোমবার বেলা ১১টা থেকে ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’, দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’ বিষয়ের ওপর থাকবে সেমিনার দুপুর থেকে কবিতাপাঠ। বিকেল সাড়ে ৫টায় দেওয়া হবে কবিতা পরিষদ সম্মাননা ও পুরস্কার। সন্ধ্যা থেকে কবিতাপাঠ ও গান। এ বছর সম্মান জানানো হবে কবি ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও মহাদেব সাহাকে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশনা নিয়ে এসেছিল ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, ছায়ানট, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, মুক্তদ্বীপ, সমস্বর, ভিন্নধারা, পঞ্চভাস্কর, সাথী নাট্যগোষ্ঠী, উজান, ইস্টিশন থিয়েটার ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর।