Thank you for trying Sticky AMP!!

একেই বলে ফটোশুট!

পূর্ণিমার রসবোধের পরিচয় পাওয়া গেল ফটোশুটেও। ছবি: কবির হোসেন

বিয়ের ছবি তোলা হবে প্রথম আলোর মঙ্গলবারের ক্রোড়পত্র নকশার প্রচ্ছদের জন্য। উত্তরার একটা পাঁচতারকা হোটেলে হবে ফটোশুট। বউয়ের সাজে চারজন মডেল, সঙ্গে দুজন মডেল বর। ফটোশুটের কদিন আগেই বর–কনের পোশাক ঠিক করা হলো। বাছাই করা হলো মডেল বউদের গয়না। ছবি তোলার দিন সকালে মডেলদের সাজের নির্দেশনা দিতে পারলারে গেলেন সহকর্মী রয়া মুনতাসীর। অন্যদিকে আমি ছুটলাম গুলশানের এক গয়নার দোকানে। গয়না নিয়ে আমরা প্রথমে যাব পারলারে। সেভাবেই সব ঠিক করা। সঙ্গে মাইক্রোবাস, তারপরও মনে শঙ্কা। কারণ, গয়নার দাম ষাট লাখ টাকার ওপরে!

পথে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে! পৌঁছাতে পারব তো? এমন নানা জল্পনা চলছে মনে। অভয় দিলেন গয়নার দোকানের মালিক। নিরাপত্তার জন্য তিনি দুজন বন্দুকধারী প্রহরীকেও দিলেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। পথের মোড়ে মোড়ে যানজট। গাড়ি থেমে যায় আর বুকটা ধক করে ওঠে। পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেও মনে হয় এই বুঝি হামলা করবে। গাড়িতে বসে তাই ফোনে ফোনে ঠিক করা হলো—আমরা সোজা হোটেলে চলে যাব। সেখানেই গয়না পরানো হবে মডেলদের। যেমন কথা তেমন কাজ। মাইক্রোবাস ঘুরিয়ে আমরা চললাম হোটেলের পথে। টেনশনে কেটে গেল পাক্কা এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট। পৌঁছালাম নিরাপদেই। তবে গত বছরের জানুয়ারি মাসের সেই গুলশান টু উত্তরা যাত্রা আমার কাছে এখনো বাঞ্জি জাম্পের চেয়ে কোনো অংশে কম রোমাঞ্চকর নয়।

তবে সব ফটোশুটেই যে টেনশন থাকে, তেমনটা নয়। হাসি–আনন্দের গল্পও কম নেই। চলতি বছরের মার্চ মাসের কথাই ধরা যাক। প্রথম আলোর বিশেষ ম্যাগাজিন ‘বর্ণিল বৈশাখে’ ছেলেদের পোশাকের ফটোশুটে আমরা গেলাম গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি আর পছন্দমতো জায়গায় থেমে থেমে ছবি তুলছি। একটা ধানখেতের মধ্যে কাকতাড়ুয়া দেখে গাড়ি থামালাম। পাঞ্জাবি–পায়জামা পরা দুই মডেলকে তৈরি করে নিয়ে এলাম ধানখেতের কাছে। তবে কাকতাড়ুয়াটা এমন একটা জায়গায় বসানো, যা ছবির ফ্রেমে আনা যাচ্ছে না। অগত্যা ধানখেতের চিকন–কাঁচা আইল দিয়ে মডেলদের এগিয়ে নেওয়া হলো। মডেলরা হাত তুলে, পা তুলে মজা করে পোজ দিচ্ছেন কাকতাড়ুয়ার সঙ্গে। দুই–তিন মিনিটে বেশ কিছু ক্লিক করলেন আলোকচিত্রী। ছবি তুলতে তুলতে কিছুক্ষণ পর তিনি আবিষ্কার করলেন, জুতাসহ হাঁটুসমান কাদায় দেবে গেছেন। দৃশ্যটা দেখে মডেলরাও হেসে কুটিকুটি। তবে পরের ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না কেউ। হাসতে হাসতেই এবার দুই মডেল কাদার মধ্যে চিৎপটাং! আমার তখন হাসির বদলে চিন্তা, ফ্যাশন হাউস থেকে ‘ধারে প্রদত্ত ফেরতযোগ্য’ নতুন পোশাকে লেগে যাওয়া কাদা উঠবে তো?

চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার রসবোধ সম্পর্কে এরই মধ্যে অনেকেই অবগত। তাঁর আরও একটা মজার ঘটনা বলি। ঈদুল ফিতরের আগে প্রকাশিত ‘বর্ণিল ঈদ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হয়েছিলেন তিনি। ফটোশুটের আয়োজন করা হয় মিরপুরের ক্যানভাস স্টুডিওতে। বেশ কয়েকটা পোশাক ও সাজে ছবি তোলা হয় পূর্ণিমার। আলোকচিত্রী ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত। সেটা বুঝতে পেরেই ‘সিরিয়াস’ পোজের মধ্যেই হঠাৎ অন ক্যামেরায় চোখ টিপে দিলেন পূর্ণিমা। ছবিটাও উঠল। তবে পরক্ষণেই হো হো করে হেসে উঠলেন আলোকচিত্রীসহ ক্যামেরার পেছনের সবাই।

নকশার একটা ফিচারের জন্য ছবি তুলতে গত বছর আমরা গিয়েছিলাম মানিকগঞ্জের এক গ্রামে। মডেল ছিলেন মাশিয়াত ও আজাদ। যেহেতু গ্রাম তাই মাঠ ও খাল–বিলে ছবি তুলছি আমরা। খালের পাশে একটা ছেলের বড়শি ফেলা দেখে সেখানে গেলেন আজাদ। মজা করতেই পানিতে ফেলা বড়শি হাতে নিলেন। পাশে এসে দাঁড়ালেন মাশিয়াত। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড়শিতে টান পড়ল। বুঝতে পেরেই ছিপ টান দিলেন আজাদ। উঠে এল একটা টাকি মাছ। সবাই তো অবাক।

নকশার ২৪ অক্টোবর ২০১৭ সংখ্যার কথাও বলা যায় এখানে। খাদি পোশাকের ফটোশুট করতে কুমিল্লার চান্দিনার একটা তাঁতিবাড়িতে গেলাম আমরা। আমরা মানে দুজন মডেলসহ ১১ জনের দল। তাঁতিবাড়িতে একটা মাত্র ঘর। সেখানেই আমরা সাজ ও পোশাক পরিবর্তনের জন্য গিয়ে উঠলাম। সারা দিন বৃষ্টি। এর মধ্যে চোখে পড়ল এক বৃদ্ধা চরকায় খাদির সুতা কাটছেন। তাঁকে ফ্রেমে রেখেই ছবি তুলতে চাই জানানোর পর বললেন, ‘আমিও মেকআপ নেব?’ বললাম, ‘না, আপনি শুধু এক পাশে বসে আপনার কাজটা করবেন।’ এবার বৃদ্ধার ত্বরিত অনুরোধ, ‘তাইলে শাড়িটা বদলায় আসি?’ আমরা ‘হ্যাঁ’ বলার পর তাঁর খুশি ধরে না। দ্রুত শাড়ি বদল করে এসে আবার বসলেন সুতা কাটতে। তবে এবার তিনি মডেলদের চেয়ে সাবধানী। কয়েকটা ক্লিকের পরে পরেই জিজ্ঞেস করেন, ‘ঠিকাছে তো?’

ছবি তুলতে গিয়ে আচমকা বড়শিতে ধরা পড়ল একটা টাকি মাছ!

এমন অনেক ঘটনা থাকে প্রতিটা ফটোশুটের পেছনে। একটা ফিচার ভাবার পর সেটার পোশাক কী হবে, সাজ কেমন হবে, মডেল কাকে নিলে ভালো হবে, কোথায় ছবি তোলা হবে—এমন অনেক পরিকল্পনা করা হয়। এরপর ছবি তোলার দিনে সামনে আসে আসল চ্যালেঞ্জ। মডেলকে সময়মতো হাজির করে সাজানোর পর, জায়গামতো পৌঁছে, ঠিকমতো ছবিটা তোলার পর শেষ হয় মাঠের কাজ। তবে ছবির মূল কান্ডারি যে মডেলরা তাঁদের খোশমেজাজে রাখাও একটা কর্ম বটে!

একবার যেমন অভিনয়শিল্পী আরিফিন শুভ ও মেহজাবীনকে নিয়ে বিয়ের সাজে ফটোশুট করলাম আমরা। সকাল থেকে সাজ আর পোশাক বদলাতে বদলাতে ক্লান্ত তারকারা। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় দশটা। শেষ সাজের ছবি তোলা হচ্ছে। ক্যামেরার সামনে শুভ ও মেহজাবীন। তবে ভারী গয়না আর শাড়িতে মেহজাবীন যেন বেশিই ক্লান্ত। কিছুতেই স্বাভাবিক ছবি তোলা যাচ্ছে না। বিষয়টা বুঝতে পেরে শুভ টুপ করে এসে দাঁড়ালেন মেহজাবীনের পেছনে। উল্টো দিকে থাকা আলোকচিত্রীকে ইশারায় তৈরি থাকতে বললেন। এরপর এক ঝটকায় পাঁজাকোলা করে মেহজাবীনকে শূন্যে তুলে ফেললেন শুভ। ঘটনাটা হঠাৎ ঘটায় মেহজাবীনও ভড়কে গেলেন। বিদায় নিল ক্লান্তি। ততক্ষণে তোলা হয়ে গেছে সেই ছবিটা। যার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন আলোকচিত্রী কবির হোসেন।