Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার বলি গুপির কথা

আরিফুর রহমান। ছবি: আনন্দ

সুখবর দিয়ে শুরু হোক। এবারের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রতিযোগিতা বিভাগে নাম লিখিয়েছে ছবি রোকাইয়া। ছবিটি বাংলাদেশ থেকে সহপ্রযোজনা করেছে গুপি বাঘা প্রডাকশন। গুপি বাঘা প্রডাকশনের বাঘাকে নিয়ে কথা হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগে, তিনি মাটির প্রজার দেশে সিনেমার পরিচালক বিজন ইমতিয়াজ। এবার থাকল, গুপির কথা, পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাই যাঁর আগ্রহের কেন্দ্রে। আরিফুর রহমান কথা বললেন বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে প্রযোজনা বিষয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে।

একটি মজার ঘটনা

‘মজার ঘটনা ঘটে বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়। লিখিত পরীক্ষা পার করেছি। পরের ধাপ সাক্ষাৎকার, তা আবার অনলাইনে। একদিন হুট করেই ওরা স্কাইপেতে কল দিল। আমি ধরতে পারিনি। ফোনে কল চলে এসেছে। কম্পিউটারেও যেতে পারিনি। রিং হচ্ছে, আমি চোখ–মুখে পানি দিলাম। এর মধ্যে একটা কল কেটে গেল। আবার কল এল। ভাবলাম মিস করা যাবে না। একদমই অপ্রস্তুত, পরনে হাফপ্যান্ট। সাক্ষাৎকারে ঢুকে গেলাম। দেখি, ওরে বাপ রে! প্রায় আটজনের মতো বসে আছে। একটা বড় প্রস্তুতি ওদের। থতমত খেয়ে গেলাম। তা–ও শুরু করলাম। অর্ধেক সাক্ষাৎকার হওয়ার পর দেখি, ওরা কেমন অন্যমনস্ক। সবাই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। সবাই কাগজপত্র দেখছে। আমি বললাম, আসলে আমি কথা বলে মজা পাচ্ছি না। কারণ, তোমরা আমার দিকে মনোযোগী না। আমি কি থামব? তখন স্ক্রিনের একপাশ থেকে একটা মাথা ঢুকল। আমাকে দেখল। সে আবার ঘুরে কোরিয়ান ভাষায় কী যেন বলল। অন্যরা সবাই রই রই করে উঠল। পরে ওরা বলল, “আমরা দুঃখিত। তোমার সাক্ষাৎকার আগামীকাল নেওয়ার কথা। আমরা ভুল করে তোমারটা নিচ্ছি। তুমি তো জানতে, আমাদের বলোনি কেন?” আমি বললাম, দেখো, এটাই আমার কাজ। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি আশাবাদী। যেহেতু এটা হয়ে গেছে, আমার মনে হচ্ছে চালিয়ে যাই। ওরা বলল, “ও মাই গড, আমরা তোমাকেই খুঁজছি। আমাদের তোমাকেই নিতে হবে।” এরপর আমার চলচ্চিত্রযাত্রা শুনল। এভাবেই ভাইভা হয়ে গেল বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে।’

যা পড়ছেন, যা শিখছেন

গুপি বাঘা প্রডাকশন হাউসটির নাম শোনা যায় মাটির প্রজার দেশে সিনেমার মধ্য দিয়ে। তখন থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা নিয়ে সামনের দিকে হাঁটছেন এই তরুণ। তাঁর মতে, সাধারণত প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশে টাকা লগ্নিকারীকে বোঝানো হয়, কিন্তু প্রযোজনার ব্যাপারটি আলাদা কিছু। একটি প্রকল্প ভ্রূণ থেকে দর্শকের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটি দেখভালের দায়িত্ব থাকে প্রযোজকের ওপর। সুতরাং বলা যায়, চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি, অভিনয়শিল্পী নির্বাচন, বাজারজাত, পরিবেশন, পরিচালনাসহ যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয় তাঁর। এই বিষয়গুলোই আত্মস্থ করতে এখন বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানের এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে। বিরতিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন কয়েক দিনের জন্য। এই সময়ে কথা হলো প্রথম আলোর সঙ্গে। আরিফ বলেন, ‘আমি যা ভেবেছি, ওখানে তার চেয়েও বেশি কিছু শেখানো হয়। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ক্লাস করতে হয়। প্রতিটি কোর্সের আবার বাড়ির কাজ থাকে। আমরা পাগলের মতো অ্যাসাইনমেন্ট করি। ওখানে আমরা ১৭টা দেশের ১৯ জন আছি। আমরা সবাই প্রযোজক না। প্রযোজক, পরিচালক, লেখক—সবাইকে মিলিয়ে নিয়েছে। আমরা পরিচালনা শিখছি, বাজারজাত শিখছি, পরিবেশনা শিখছি। কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে তৈরি হলো, সেটা হাতেকলমে দেখছি। ওখানকার সেরা প্রযোজকেরা আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। যেমন ধরুন, ট্রেন টু বুসান–এর প্রযোজক ছবিটি প্রযোজনার পেছনের গল্প বললেন আমাদের কাছে।’

যেভাবে শুরু

এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে পড়ার শুরুটা কেমন ছিল? একটা মজার গল্প শোনালেন আরিফ। বললেন, ‘বুসানে প্রযোজনা শেখানো হয়, আমি জানতাম না। আমি যখন এশিয়ান ফিল্ম একাডেমিতে গেলাম, তখন বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের স্টুডিও রুমে আমাদের একটা মাস্টার ক্লাস ছিল ডিন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিরোকাজু কোরে এদার সঙ্গে। বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলের বিল্ডিংয়ে শুধু মাস্টার ক্লাস করিনি, পুরো স্কুলটা ঘুরে দেখেছি। এটা এমন একটা জায়গা, যা আসলে চলচ্চিত্রকারদের জন্যই তৈরি। সিনেমা বানানোর যাবতীয় ইকুইপমেন্ট আছে। ২৪ ঘণ্টা ফিল্মে বাস করার সুযোগ আছে এখানে। ওখানে একটা দোলনা ছিল। পুরোটা ঘুরে দোলনায় চোখ বন্ধ করে আছি। তখন মনে হলো, এ রকম একটি জায়গায় যদি শেখার সুযোগ পাই, তাহলে একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে আরও উন্নতি করতে পারব। তখনই আমার টার্গেট হয়, এখানে পড়ব। সে সময় যে ব্যাচটা ছিল, তাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কান একজনকে জিজ্ঞেস করি, আমি যদি পড়তে চাই, তাহলে কী করতে হবে? তিনি আমাকে বললেন, “এখানে তুমি যে পড়তে চাও, এই আগ্রহ থাকলেই হবে। অন্য আরও অনেকে এসেছে, কেউ তো এ ইচ্ছার কথা বলেনি।”

এরপর দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া শেষে আরিফ যুক্ত হন বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুলে। প্রযোজনা নিয়ে পড়ছেন দ্বিতীয় সেমিস্টারে, শেষ করে ফিরবেন অক্টোবর মাসে। পড়তে পড়তেই সহপ্রযোজনায় যুক্ত হলেন একটি ছবির সঙ্গেও, যার কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। এই মুহূর্তে গুপি বাঘা প্রডাকশনের ব্যানারে কাজ হচ্ছে প্যারাডাইস নামের একটি চলচ্চিত্র ও একটি প্রামাণ্যচিত্রের এবং চলচ্চিত্র ট্রি অব নলেজ–এর। ভারতের সঙ্গে কলোনি আমার, একা ওয়েটিং ফর ফ্লাড নামের তিনটি ছবি নিয়ে কাজ চলছে।