Thank you for trying Sticky AMP!!

কত কাণ্ড 'এসো আঠারোয়'

গত ২৫ নভেম্বর রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হয়ে গেল প্রথম আলো পাঠক উৎসব ‘এসো আঠারোয়’। এতে দিনভর সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতের প্রিয় অনেক ব্যক্তিত্বকে দেখা যায়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও উৎসবে নেহাত ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতে ছুটে আসেন তারকারা। আড্ডা জমান বিনোদন বিভাগের স্টলে। তারকাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পাশাপাশি উৎসবে আসা পাঠকদের জন্য বিনোদন বিভাগের স্টলে ছিল নানা ধরনের মজার খেলা। ‘চেহারা মিলাও’, ‘ভিলেন মেরে নায়ক হও’, ‘নায়িকার কাছে যাও’—এমন বেশ কিছু খেলায় মেতেছিলেন পাঠকেরা। তা ছাড়া ‘সবমিশালি মঞ্চে’ তারকারা গিয়ে সরাসরি ভক্ত ও দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেন। পাঠক উৎসবের তেমনই কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেছেন কবির বকুলআদর রহমান
পূজা সেন গুপ্ত

মন ছুঁয়েছেন তপন চৌধুরী
আঠারোর তারুণ্যে এসে শিল্পী তপন চৌধুরী প্রমাণ করলেন তিনিও ফুরিয়ে যাননি। শুক্রবার অনুষ্ঠান। সেদিন সকালেই তাঁকে ফোনে অনুরোধ করতেই বললেন, আসবেন সাড়ে চারটায়। সময়জ্ঞানসম্পন্ন এই শিল্পী নির্দিষ্ট সময়েই এসে হাজির। মঞ্চে উঠে প্রথমে গাইলেন ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’। কিন্তু দর্শকের অপেক্ষা যেন চিরসবুজ সেই গানের জন্য ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’। তাই এ গান ধরতেই চারদিকে চিত্কার। শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় তরুণ প্রজন্মও। মুহূর্তেই যেন দর্শকের মন ছুঁলেন তপন চৌধুরী।
‘শাফিন ভাই আরেকটা’
ড্রাইভার ছুটিতে। তাই গাড়ি পাঠিয়ে বাড়ি থেকে শাফিন আহমেদকে আনার কথা জানানো হলো। কিন্তু বাদ সাধলেন শাফিন। জানালেন, নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাংলা একাডেমি আসছেন। যথাসময়ে চলেও এলেন। মাথায় হ্যাট, হাতে গিটার। উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকের তুমুল তালিতে মঞ্চে উঠলেন শাফিন আহমেদ। মঞ্চে তাঁর পেছনে যাঁরা মিউজিশিয়ান (নোঙ্গর), তাঁরা কখনোই শাফিন অহমেদের সঙ্গে বাজাননি। কিন্তু শাফিন আহমেদের গাওয়া সব গানের কম্পোজিশন তাঁদের তোলা। শিল্পীও সেটা টের পেলেন প্রথম গান ‘শেষ বিকেলে’ গাইতে গিয়ে। এরপর ‘ধিকিধিকি’। দর্শকদের মুহুর্মুহু তালি আর চিত্কার। তাই দুই গান গেয়ে মঞ্চ ছাড়তে গিয়েও পারলেন না তিনি। দর্শকদের শেষ অনুরোধ ‘শাফিন ভাই, আরেকটা’। দানে দান তিন দান। অনুরোধ রাখলেন শাফিন। গাইলেন তাঁর শেষ গান ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’। গানের বিকেলটি জমিয়ে দিলেন শাফিন।
মনেপ্রাণে আঠারোয় ফেরদৌস
গন্তব্য ছবির শুটিং বিরতি শুক্রবার। তাই ফেরদৌস ফোনে জানিয়ে দিলেন তিনি সকালেই চলে আসবেন বাংলা একাডেমি। তবে এসেই প্রথম আলোর কর্মীদের গায়ে টি-শার্ট দেখে আপত্তি জানালেন। বললেন, ‘আমিও তো প্রথম আলো পরিবারের একজন। আমার টি-শার্ট কই?’ দ্রুত তাঁকে টি-শার্ট আনিয়ে হাতে দিতে দিতে বলা হলো, এখনই পরতে হবে। তিনি চলে গেলেন মঞ্চের পেছনে। সেখানে নাচের মেয়েরা বসেন। অগত্যা প্ল্যাকার্ড দিয়ে আড়াল করা হলো ফেরদৌসকে। গায়ের কালো টি-শার্ট খুলে ফেরদৌস পরে নিলেন প্রথম আলোর টি-শার্ট। মঞ্চে গিয়ে জানালেন তিনিও মনেপ্রাণে আঠারো। বললেন, ‘আঠারোর শক্তিই পারে এই দেশটাকে সামনে এগিয়ে নিতে।’

তপন চৌধুরী, শাফিন আহমেদ

পিন্টুর সত্যি–মিথ্যা
চিরকুট ব্যান্ড ছেড়ে এখন একা পিন্টু। তাঁর জন্য সংগীতে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গাটা দর্শকের সামনে খোলা মঞ্চ। তেমনি একটা পরিবেশ খুঁজছিলেন হয়তো পিন্টু। তাই প্রথম আলো থেকে ফোন পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে গাইতে রাজি হলেন তিনি। আনিসুল হক যখন বললেন টেলিভিশন চলচ্চিত্রের গান ‘কানামাছি সত্য কানামাছি মিথ্যা’ গানটির কথা আর একটি নাম। দর্শকের চিত্কার আর করতালিতে বুঝতে বাকি রইল না যে পিন্টু ঘোষকে তাঁরা চেনেন। গানে গানে দর্শক মাতিয়ে তিনি তাঁর জনপ্রিয়তার সত্যি মিথ্যা প্রমাণ করলেন।
প্রেম করালেন টুটুল
অনুষ্ঠান তখন জমে গেছে। আনিসুল হক মঞ্চে ডেকে নিলেন ‘কেউ প্রেম করে’খ্যাত শিল্পী এস আই টুটুলকে। মঞ্চে উঠলেন টুটুল তাঁর ‘ফেইস টু ফেইস’ ব্যান্ডের সব সদস্য নিয়েই। গান শুরু করতেই মনে হলো তিনি বুঝি সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন, আজ দর্শকদের তাঁর সঙ্গে গাওয়াবেন। ঘটলও তা-ই। টুটুল এক লাইন গান ‘জানে না এই মনটা’, পরের লাইন ‘কেউ ভুল করে কেউ ভুলে পড়ে’ গাইলেন উপস্থিত দর্শক। তাঁদের কণ্ঠ আর টুটুলের কণ্ঠ একাকার হলো প্রেমে।

সাবিলার জন্য মিমি
প্রথমে মঞ্চে ওঠেন অভিনেত্রী ও নির্মাতা আফসানা মিমি। বেশ কিছুক্ষণ পাঠক উৎসবে সরাসরি কথা বলেন পাঠকদের সঙ্গে। শোনেন ভক্তদের ভালো লাগার কথা, শোনান নিজের কথা। তবে কথা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মঞ্চ ছেড়ে যেতে নারাজ এই গুণী অভিনেত্রী। কারণ মঞ্চে ওঠার আগে তিনি শুনেছেন, এ মঞ্চেই কিছুক্ষণের মধ্যে উঠবেন এ সময়ের তরুণ অভিনেত্রী সাবিলা নূর। আর আফসানা মিমির ইচ্ছা তিনি দেখা করবেন এই তরুণ শিল্পীর সঙ্গে। সাবিলাও আফসানা মিমির এই ইচ্ছার কথা শুনে ভিড় ঠেলে উঠে এলেন মঞ্চে। এরপর পাঠক উৎসবের ‘সবমিশালি মঞ্চে’ দুই প্রজন্মের দুই অভিনেত্রীর সাক্ষাৎ হলো। আর সেই বিশেষ সাক্ষাতের সাক্ষী হলেন উৎসবে আগত দর্শকেরা।

বিনোদন স্টলে সেলফি তুলছেন সাফা কবির, সাবিলা নূর, মিশু সাব্বির, সাজু খাদেম ও ইরফান সাজ্জাদ

এবং রনির কৌতুক 
বরাবরই খুব প্রাণখোলা আবু হেনা রনি। তাই উৎসবে ঘুরতে আসা রনিকে যখন হুট করেই অনুরোধ করা হলো মঞ্চে উঠে কিছু সময় কথায় কথায় হাসাতে হবে দর্শকদের, তখন একবাক্যেই রাজি হয়ে গেলেন। মঞ্চে ওঠার আগে ঘোষণা দেওয়া হলো, ‘কিছু সময়ের মধ্যেই এখানে হাসির বিস্ফোরণ ঘটবে। কারণ মঞ্চে উঠবেন মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার চ্যম্পিয়ন আবু হেনা রনি।’ ব্যাস, এতটুকু ঘোষণাই যথেষ্ট। মিনিট তিনেকের মধ্যেই মঞ্চের সামনে উপচে পড়া ভিড়। সবাই শুনতে চান রনির কৌতুক। রনিও তাই কালক্ষেপণ না করে মঞ্চকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেন। একের পর এক কৌতুক ‘ছুড়তে’ থাকেন দর্শকদের উদ্দেশে। একটা সময় দর্শকও রনিকে কৌতুক শোনাতে উঠে আসেন মঞ্চে। এভাবেই হাসির আদান-প্রদানে রনির সঙ্গে মেতে ওঠেন পাঠক উৎসবে আসা দর্শক ও পাঠকেরা।

অন্তু করিমের অজানা তথ্য
পাঠক উৎসবের সবমিশালি মঞ্চে ছিল নানা রং। কেউ মঞ্চে উঠে জানালেন তাঁদের ভালো লাগার কথা, কেউ জানালেন স্বপ্নের কথা, কেউ তারুণ্যের বার্তা দিলেন, কেউ আবার জানালেন প্রথম আলোর ১৮ বছরপূর্তিতে বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তা। তবে মডেল ও অভিনেতা অন্তু করিম এ দিন মঞ্চে উঠে পাঠক ও দর্শকদের এক অজানা তথ্য দিলেন। বললেন, ‘আমি বোধ হয় প্রথম আলোর নকশার রেকর্ড সৃষ্টিকারী এক মডেল। কারণ ২০০৭ সালে প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র নকশায় ১২ মাসে আমার ৩৫ বার ছবি ছাপানো হয়েছে। এটা এক ধরনের কাকতাল। কারণ কোনোবার নকশা থেকে আমাকে মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। কখনো আবার কোনো পণ্যের মডেল হয়ে নকশার পাতায় আমার ছবিসহ বিজ্ঞাপন গেছে। তবে নকশায় সে বছর অধিকাংশ সংখ্যায় ছিল আমার ছবি। বিষয়টি আজীবন আমাকে আনন্দ দেবে।’

আবু হেনা রনি

ভক্তরা সবার আগে
নাঈমের গলা ভাঙা। শরীরটাও নাকি ভালো না। মেলায় এসেই এসব জানালেন তাঁর স্ত্রী নাদিয়া। তবুও ভক্তদের সঙ্গে কথা বলা, সেলফি তোলা আর মঞ্চে উঠে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার দিক থেকে কোনো অংশেই অভিনেতা নাঈম পিছিয়ে ছিলেন না। বরং মঞ্চ থেকে নেমে প্রথম আলোর বিনোদন বিভাগের স্টলে এসে বসার পরও ক্লান্ত হননি নাঈম। ভাঙা গলাতেই অনবরত কথা বলে গেছেন ভক্তদের সঙ্গে। রেখেছেন সেলফি তোলার আবদার। যখন ভক্তদের সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছিল, তখন মেলার নিরাপত্তাকর্মীরা অনুরোধ করলেন নাঈমকে একটু আড়ালে গিয়ে বসতে। কিন্তু নাঈম তখন বুঝিয়ে বললেন, ‘ভক্তদের এই উচ্ছ্বাস আসলে আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এমন অনেক তারকাকেই দেখেছি, যাঁরা এক সময় এই উচ্ছ্বাসকে তাচ্ছিল্য করেছিল, তাই এখন আর তাঁদের নিয়ে ভক্তদেরও কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এ জন্যই আমি ভক্তদের এই উচ্ছ্বাসকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। চেষ্টা করি তাঁদের কষ্ট না দিতে।’
একটা সেলফি চাই-ই চাই
পাঠক উৎসবে বিনোদন বিভাগের স্টল ছিল এক সেলফি কেন্দ্র। যে তারকাই আসছেন, ভক্তরা তাঁদের ঘিরে ধরছেন। সবার আবদার একটাই, সেলফি চাই। নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, খল অভিনেতা—সেলফি চাই সবার। ভক্তদের এমন সেলফি আবদারের হিড়িক দেখে স্টলে বসে অভিনেতা মিশু সাব্বির বলছিলেন আরেক অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদকে, ‘প্রতি সেলফির জন্য যদি সম্মানী নেওয়া হতো, এ যাত্রায় কিন্তু আমরা বড়লোক হয়ে যেতাম!’ সত্যি তা-ই, মিশু ও ইরফান মেলা থেকে বেরুতে গিয়ে স্বীকার করলেন, অর্থমূল্যে নয়, তবে ভক্তদের ভালোবাসার দিক থেকে তাঁরা বড়লোক হয়েই বাড়ি ফিরছেন আজ।