Thank you for trying Sticky AMP!!

কোনো রকম অসভ্যতা সহ্য করতে পারি না: সালমান খান

বিকেল থেকে অপেক্ষার ক্ষণ গুনছি। শেষমেশ যখন বলিউডের সুলতান সালমান খানের মুখোমুখি হলাম, তখন রাত নয়টা। এদিন দুপুরেই ভারতের মুম্বাইয়ের মেট্রোর ইয়ার্ডে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি ধুমধাম করে ঘোষণা করেন ‘বিগ বস ১৩’ অনুষ্ঠানের। নাচে, গানে, হাসি মজায় আসর মাতিয়ে রেখেছিলেন এই বলিউড নায়ক। সব কাজ শেষ করে রাতের এই আলাপচারিতায় এক ফোঁটাও ক্লান্তি ছিল না ভাইজানের মধ্যে। ৫৩-তে দাঁড়িয়ে আজও তিনি তরুণ তুর্কি। সেই তরুণ সালমানের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। তবে এই আড্ডার শর্ত ছিল ‘বিগ বস’-এর বাইরে অন্য কোনো প্রশ্ন নয়।
সালমান খান ছবি: ‘বিগ বস’–এর সৌজন্যে

দেবারতি ভট্টাচার্য: প্রতিবার বিগ বস লোনাভোলাতে হয়। এবার মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে বিগ বসের বাড়ি বানানো হয়েছে। কোনো বিশেষ কারণ?

সালমান খান: না। কারণ সে রকম বড় নয়। তবে আমার সুবিধা হয়েছে। লোনাভোলায় যাওয়ার জন্য আমার অনেকটা সময় চলে যেত। এখন সেই সময়টা বাঁচবে। তবে আরেকটি বিষয় আছে। চ্যানেলের বড় লাভ হয়েছে বিগ বসের বাড়ি বদল হওয়ায়। ওরা এখন অনেক সাশ্রয় করতে পারবে। বিগ বস টিমের ৪৫০ জন সদস্য লোনাভোলাতে থাকত। তাঁদের জন্য সব ধরনের বন্দোবস্ত করতে হতো। এতে চ্যানেলের অনেক খরচ হতো। তবে এবার নতুন এক অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। আর নতুন কিছু করার চেষ্টা সব সময় থাকা উচিত।

দেবারতি: স্থান পরিবর্তনের কারণে বিগ বসের সদস্যদের মানসিকতার কি কোনো পরিবর্তন হবে?

সালমান: আমার তো কখনোই তা মনে হয় না। বিগ বস মুম্বাইতে হচ্ছে, না লোনাভোলায় হচ্ছে, এর কোনো প্রভাব অংশগ্রহণকারীদের ওপর পড়ার কথা নয়। তিন মাস একটি বাড়িতে থাকা মোটেও সহজ নয়। এই সেটেই মারাঠি বিগ বস হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কোনো অসুবিধা হয়নি। বিগ বসের ফরম্যাট এমনই। আপনি যেকোনো শহরে একে নিয়ে যেতে পারেন। এমনকি নিউইয়র্কে নিয়ে গেলেও শোর ফরম্যাটে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। ফিল্ম সিটিতে এক নিরিবিলি স্থানে সেট বানানো হয়েছে। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, যেখানে বিগ বসের সেট, সেখানে নাকি অনেক আত্মা ঘোরাফেরা করে! অবশ্য আমি এসব ভূতে–আত্মায় বিশ্বাস করি না।

দেবারতি: বিগ বসে এবার আপনার ১০ বছর পূর্ণ হলো। আপনার মনে হয় না যে এবার বিগ বসের বিরতি নিয়ে নতুনভাবে শুরু করা উচিত?

সালমান: হ্যাঁ, আমারও তা–ই মনে হয়। এবার একটি ব্রেকের প্রয়োজন। কিন্তু চ্যানেলের বক্তব্য হলো, এই শো খুবই জনপ্রিয়। এর থেকে কালার্স চ্যানেল প্রতিবছর খুব ভালো আয় করে। তাহলে আর ব্রেকের প্রশ্ন কেন?

দেবারতি: আপনি কি বিশ্বাস করেন যে বিগ বসের বাড়িতে তিন মাস বন্দি থাকার পর অংশগ্রহণকারীদের জীবন একদম বদলে যায়?

সালমান খান ছবি: ‘বিগ বস’–এর সৌজন্যে

সালমান: আমি এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিত যে বিগ বসের বাড়ি মানুষকে বদলে দেয়। কারণ, বিগ বসের দীর্ঘদিন পরেও সাবেক প্রতিযোগীরা আমাকে বলেছেন যে এই তিন মাস তাঁদের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে। তাই আমিও বিশ্বাস করি যে বিগ বস তাঁদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আর এ ধরনের অভিজ্ঞতা কোথাও অর্জন করা সম্ভব নয়। কখনো ঠিকমতো ঘুম হয় না। কখনো ঘরে খাবার থাকে না। আবার কখনো নিজের মনের কথা বলার মতো কেউ থাকে না। একই বাথরুম সবার সঙ্গে শেয়ার করতে হয়। আমি মনে করি, এই বাড়িতে যে টিকে যায়, সে এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনায়াসে টিকে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। শুধু সাধারণ মানুষের কথা বলছি না। সেলিব্রিটিদেরও এই সবকিছু করা সহজ কথা নয়।

দেবারতি: এবারের বিগ বসের থিম ট্রেন। ট্রেনে আপনার কোনো স্মরণীয় সফর?

সালমান: আগে আমি ট্রেনে করে অনেক সফর করতাম। আমার মনে আছে, কুরবান ছবির শুটিংয়ের জন্য ট্রেনে করে ইগতপুরী যেতাম। কলেজজীবনে আমার কাছে টাকা থাকত না। তখন দক্ষিণ মুম্বাইতে আমার এক বান্ধবী ছিল। ওর সঙ্গে দেখা করতে আমি প্রায়ই সেখানে যেতাম। চার্চগেট স্টেশন থেকে লাস্ট ট্রেন নিতাম। আর ট্রেনে বসার পর আমার দুচোখ ঘুমে বুজে আসত। আমি তখন মনে মনে বলতাম যে আমি কিছুতেই ঘুমাব না। তা–ও আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। যখন চোখ খুলত, আমি তখন বান্দ্রা ছাড়িয়ে ভিরার (শেষ স্টেশন) পৌঁছে গেছি। আর বাড়ি ফেরা হতো না। পরের দিন সকালে আবার ভিরার থেকে ট্রেন ধরতাম বান্দ্রা যাব বলে। আবার মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম যে কিছুতেই ঘুমাব না। আর আবার সেই ট্রেনে উঠে ঘুমিয়ে পড়তাম। বান্দ্রা ছাড়িয়ে আবার চার্চগেট স্টেশনে চলে যেতাম। এ ঘটনা একবার নয়, কতবার যে ঘটেছে!

দেবারতি: বিগ বস কোথাও অলিখিতভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। শিশুদের জন্য কি বাড়তি কোনো সতর্কতা অবলম্বন করতে চান?

সালমান: সত্যি কথা বলব, আজও আমরা পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বসে যখন টিভি দেখি, তখন কোনো চুম্বনের দৃশ্য এলে আমাদের অস্বস্তি হয়। আমরা ছোটদের সঙ্গে বসে এসব দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমার মনে হয়, প্রতিটি পরিবার একই সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই বিগ বস ঘিরে আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা থাকে যেন এমন কোনো দৃশ্য দেখানো না হয়, যাতে ছোট–বড় কেউই অস্বস্তি বোধ করে। এ বিষয়টি আমি আমার ছবির ক্ষেত্রেও বজায় রাখি। তাই আমি ওয়েবে কাজ করি না। আমার মনে হয়, অহেতুক কিছু জিনিস ওয়েব কনটেন্টে দেখানো হয়।

দেবারতি: তাহলে কি আপনি ওয়েব সিরিজ প্রযোজনাও করবেন না?

সালমান: এই মুহূর্তে সে রকম কোনো পরিকল্পনা নেই।

দেবারতি: বিগ বসের প্রতিযোগীদের আপনি যেমন ভালোবেসে কাছে টেনে নেন, আবার অনেক সময় আপনাকে ওদের শাসন করতেও দেখা গেছে।

সালমান: হ্যাঁ, তিন-চারবার আমি প্রতিযোগীদের খুব বেশিই শাসন করেছি। যখন কোনো প্রতিযোগী বাড়াবাড়ি রকমের অসভ্যতা করে, তখন আমার অসহ্য লাগে। আমি কোনো রকম অসভ্যতা সহ্য করতে পারি না। সঞ্চালক হিসেবে যদি আপনি শাসন না করতে পারেন, তাহলে সঞ্চালক হওয়ার কোনো অর্থই হয় না।

দেবারতি: আপনার মা বিগ বসের ভক্ত ছিলেন। এখনো কি তিনি নিয়মিত এই শো দেখেন?

সালমান: মা প্রথম তিন মৌসুম দেখেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর মনে হয় এখানে খুব বেশি ড্রামা হয়। তাই তিনি আর দেখেন না।

দেবারতি: আপনার জন্য বিগ বসের বাড়িতে থাকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী হবে?

সালমান: আমার জন্য খুবই সহজ হবে। কারণ, আমি বিগ বসের চেয়ে অনেক বড় বাড়িতে দিন পার করে এসেছি, জেলে!

দেবারতি: আপনার নামের সঙ্গে রানু মণ্ডলকে জড়িয়ে অনেক খবর হামেশাই ভাইরাল হয়। আপনি নাকি তাঁকে গাড়ি, বাড়ি দিয়েছেন। এর সত্যতা কতখানি?

সালমান: আমার সঙ্গে তাঁর কোনো লেনাদেনা নেই। আমি জানি না এ ধরনের গুজব কোথা থেকে রটে। আমি নিজেই ছোট ফ্ল্যাটে থাকি, তো তাঁকে কী করে ফ্ল্যাট, গাড়ি উপহার দেব! আমিও নানা খবর শুনতে পাই। কিন্তু এসব খবরের কোনো সত্যতা নেই।

দেবারতি: শেষ প্রশ্ন, আপনার আগামী ছবি...

সালমান: দাবাং থ্রি ছবির একটু শুটিং বাকি আছে। এর কাজ এখন শেষ করতে হবে। এটা শেষ হলেই এসে পড়বে দাবাং থ্রি। এরপর ঈদে কোনো না কোনো ছবি নিয়ে নিশ্চয় আসব।