Thank you for trying Sticky AMP!!

খুলনায় বয়ে যাওয়া ফাগুন হাওয়া

ফাগুন হাওয়ায় ছবির শুটিংয়ে তিশা (মাঝে) ও যশপাল শর্মা (ডানে)

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মীয়মাণ সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর শুটিং হয়ে গেল। গত ১০ মার্চ থেকে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ওই ছবির শুটিং শুরু হয়। শুটিং চলে টানা ১৭ দিন। এই কদিন ধরে এলাকাজুড়ে সত্যিই যেন বয়ে যায় ফাগুন হাওয়া!

সিনেমায় ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তুলতে বেছে নেওয়া হয়েছে পাইকগাছার প্রায় শতবর্ষী কিছু পুরোনো ভবনকে। আছে কপোতাক্ষ নদও। এর মধ্যে ছিল রাড়ুলী গ্রামে ১০০ বছরের বেশি পুরোনো প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি সি রায়) প্রতিষ্ঠিত আর কে বি কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশনের একটি ভবন। গত ২১ মার্চ ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শুটিংয়ের মহাযজ্ঞ। ছবিটির ৯০ শতাংশ শুটিং পাইকগাছা এলাকায় করা হয়েছে বলে জানান ফাগুন হাওয়ায় সিনেমার সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম।

মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সিনেমার কাজ শুরু করার প্রথম দিকেই শুটিংয়ের লোকেশন নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। এরপর পরিচালকের কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী পাইকগাছা উপজেলার কিছু লোকেশনের খোঁজ দেন। কয়েকবার লোকেশনগুলো ঘুরে দেখে শুটিংয়ের জন্য ওই এলাকাকে নির্বাচন করা হয়। কোনো আনুষ্ঠানিক মহরত ছাড়াই ১০ মার্চ থেকে ওই এলাকায় শুটিং শুরু হয় বলে জানান তিনি।

টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’। প্রযোজনা করছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও সিয়াম আহমেদ। আরও অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, আফরোজা বানু, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেম, আজাদ সেতু, হাসান আহমেদ প্রমুখ। আছেন আমির খানের লগান ছবি-খ্যাত ভারতীয় অভিনেতা যশপাল শর্মাও। তাঁকে পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যাবে ওই ছবিতে।

অভিনেতা হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে ছবির কাহিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের এক টগবগে তরুণ নাসির ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে কোনো এক ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। গ্রামে এসে দেখেন সেখানেও ঢেউ লেগেছে ভাষা আন্দোলনের। তিনি এলাকার যুবক ছেলেমেয়েদের মাঝে ওঠা ওই ঢেউকে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আরও বেশি বেগবান করার চেষ্টা করেন।

এই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রথম আলোকে তিশা বলেন, ‘ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রে কাজ করতে পেরে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে এমন চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই খুশি।’

‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিতে নাসির চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। ৬৬ বছর আগের চরিত্রে অভিনয় করতে কেমন লাগছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাবার নামও নাসির। যখনই শুনলাম আমাকে এই ছবির মূল চরিত্রের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, তখনই বেশ চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ ১৯৫২ সালের কোনো প্রেক্ষাপটকে কীভাবে ফুটিয়ে তুলব, তা আমার জানা ছিল না। পরে খুঁজতে খুঁজতে ওই সময়ের দিকে বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকাকালীন একটি ছবি পাই। বাবার ছবির আলোকে নিজের মধ্যে ওই সময়ের একটি আবহ দাঁড় করাই। আর সেটি নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি তাতে সম্মতি দেন।’

সিয়াম বলেন, ‘সত্যি বলতে ফাগুন হাওয়ায় অভিনয় করতে আমার ভয় লাগছে। এই সিনেমাটির একটি “আর্কাইভ্যাল ভ্যালু” থাকবে। বিদেশে সিনেমার মাধ্যমে অনেক ইতিহাস তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম কিছু হয়নি। তৌকীর ভাই এই ছবির মাধ্যমে বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ ও গর্ব তুলে ধরতে যাচ্ছেন।’

তৌকীর আহমেদের ভাষায়, ‘আমার মনে হয়, আমাদের জাতিসত্তার মূলই হচ্ছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। কিন্তু মহান ওই ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমায় কোনো পূর্ণাঙ্গ কাজ হয়নি। বর্তমানে আমি এই কাজটি করতে পেরে ভীষণ খুশি।’