Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘাসফুল: নান্দনিক এক গল্প

ঘাসফুল ছবিতে শায়লা সাবি ও আসিফ

নিজের পরিচয় নিয়ে ছেলেটার সংশয়ের পথ ধরেই কাহিনি এগিয়ে যায় ঘাসফুল-এর। ওর ব্যবহারের মধ্যেই একটা অসংগতি টের পাওয়া যায় ছবির শুরুতেই। কীভাবে যেন ও স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে। অতীতের অনেক কিছুই ও মনে রাখতে পারে না। বাবা-মা ছেলেটিকে চোখে চোখে রাখেন। বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে ছেলেটা বুঝতে পারে, কোথাও এক জায়গায় জীবনের সুতাগুলো ছিঁড়ে গেছে। এরই মধ্যে মা একদিন ছেলেটার সব কটি প্যান্ট দিয়েছেন ধুয়ে। এখন উপায়? মা কিন্তু ঠিকই একটা উপায় খুঁজে বের করেন। আলমারি থেকে নামিয়ে আনেন অন্য একটা প্যান্ট। ছেলে তা পরেই বাইরে যায়।
এখান থেকেই আসলে কাহিনির শুরু। সেই প্যান্টের পকেটে ছেলেটা ‘ঘাসফুল’ নামের একটা মেয়ের চিঠি পায়। বুঝি ওকেই লেখা। কিন্তু ঘাসফুলকে তো একেবারেই চেনে না ছেলেটা। কে এই মেয়ে? চিঠিতে আসন্ন-প্রসবা হিসেবে দাবি করা ঘাসফুল তো তাহলে ওর সবচেয়ে প্রিয়জন!
এটুকু এসে আমাদের ভাবনাও এদিক-ওদিক পাখা মেলবার সুযোগ পায়। মায়ের কিছু আচরণে সেই রহস্য ঘনীভূত হয়। কী লুকাতে চাইছেন বাবা আর মা? এই দোদুল্যমানতার মধ্য দিয়েই ছেলেটি এগিয়ে যেতে থাকে এক অচেনা অথচ অতি পরিচিত মানুষের দিকে। জানার তাড়না থেকে একসময় রহস্য কেটে যায়। অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায় তাতে। এবং আমরাও একটি ভালো গল্পের হাতছানিতে স্বস্তিবোধ করতে থাকি।
আকরাম খানের প্রথম চলচ্চিত্র এটি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকে বানানো। ছবি বানানোর জন্য আকরাম যে প্রস্তুত, তা ছবি দেখে বোঝা যায়। আমাদের দেশে সমালোচনা অনেক বেশি, ভালো জিনিসের কদর কম। অগভীর কত কিছুই তো জৌলুশে জৌলুশে বিকোয়, বাইরের চোখধাঁধানো আলোয় ভেতরের ফাঁকিটা আড়াল করার কত ফিকিরও আমরা দেখি। সেই বিচারে বলতে হবে, আকরাম প্রতিষ্ঠা পাওয়ার শর্টকাট রাস্তাটা খুঁজে নেননি। ছবির জন্য এমন একটি গল্প লিখেছেন, যা চেনাজানা ফর্মুলার সঙ্গে মিলবে না। পরিশ্রমই তাঁর পথ। চলচ্চিত্রের গল্পটা তিনি নিজের মতো করেই বলতে চেয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, একটি জটিল গল্প বলতে চেয়েছেন, সেটা বলতেও পেরেছেন।
সাধারণ দর্শক বলবে, ছবিটি শ্লথগতির। কিন্তু এটাও তো সত্যি, পৃথিবীর বহু দেশে, বহু চলচ্চিত্রকার শ্লথগতির চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন, সে ছবিগুলো উতরেছেও। ছবিটির সংলাপে ছিল কিছুটা জড়তা। চলতি জীবনে যা ঘটে চলে, সংলাপ সে ধারায় লেখা হলে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগটা বাড়ত।
ইদানীং একটা কথা তো বলতে শোনা যাচ্ছে, প্রতিশ্রুতিশীল অনেক নির্মাতাই চলচ্চিত্র তৈরি করতে গিয়ে বানিয়ে তুলছেন টেলিফিল্ম। সেটা না নাটক, না ছবি, মাঝামাঝি খিচুড়ি যেন। আকরামের সিনেমাটি হয়তো এই দোষ থেকে অনেকাংশে মুক্ত। তবে, নির্দিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়া ছবিতে আর কেউ নেই। পুরো পরিবেশটাই যেন অভিনয়শিল্পীরা ভরিয়ে রেখেছে। সেখানে বাড়তি কোনো মানুষেরই অংশগ্রহণ নেই। এটাকে এই ছবির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা মনে হয়েছে। বৃষ্টিস্নাত শেষ দৃশ্যটিতে আরও খানিকটা সংযমের পরিচয় দিলে ভালো হতো।
তৌকির চরিত্রে আসিফের আরও অনেক কিছু করার ছিল, বিশেষ করে সংলাপ-প্রক্ষেপণে আরও যত্নশীল হতে পারতেন তিনি। মা-বাবা চরিত্রে নূপুর-মানসের অভিনয় টেলিনাটক আর মঞ্চের কাছাকাছি যতটা ছিল, চলচ্চিত্রের জন্য ততটা সুখকর ছিল না।
এ তো গেল ভালো না লাগার দিক। ভালো লাগার দিকেরও কি শেষ আছে? বিশেষ করে জীবনে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র করল যে শায়লা সাবি নামের মেয়েটি, এ ছবিতে নার্গিস যার নাম, সে তো তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে মন ভরিয়ে দিল দর্শকদের। ছবির ক্যামেরার কাজ ভালো, চোখকে আরাম দেয়। সানি জুবায়েরের সংগীতও শ্রুতিকে আনন্দ দেয়। কিছু কিছু দৃশ্য চোখে লেগে থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা, যে গল্পটি আকরাম বলতে চেয়েছিলেন, তা বলতে পেরেছেন নান্দনিকভাবে। এটা এই চলচ্চিত্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বড় পাওয়া।