Thank you for trying Sticky AMP!!

চলচ্চিত্রে কেন উঠে আসতে পারছেন না তরুণ পরিচালক

মতিন রহমান, মালেক আফসারী, রায়হান রাফি ও সৈকত নাসির

বিএফডিসিতে একসময় কাজ করতেন একঝাঁক পরিচালক। তারুণ্যের পদচারণে তখন বিএফডিসি যেমন মুখর থাকত, তেমনি থাকত ঢাকার বাইরের শুটিং লোকেশনগুলোও। সময়ের সঙ্গে সিনেমা নির্মাণ বাড়ার কথা, যোগ হওয়ার কথা আরও তরুণ পরিচালক। কিন্তু হয়েছে উল্টো। হাতেগোনা দুয়েকজন পরিচালক ছাড়া তরুণ কাউকে এ অঙ্গনে পাওয়াই যায় না। কিন্তু কেন?

পরিচালকদের নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে না পারা এবং প্রযোজকের অভাব তরুণ পরিচালকদের উঠে আসার প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ পরিচালক মতিন রহমান। অন্যদিকে তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফির মতে, আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেক তরুণ নির্মাণ শুরুর পর খেই হারিয়ে ফেলেন।

এখনকার তরুণদের মধ্যে নিয়মিত কাজ করছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, রায়হান রাফি, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, শামীম আহমেদ রনি, অনন্য মামুন ও সাইফ চন্দন। একটি বা দুটি ছবি করে বসে আছেন রিয়াজুল রিজু, সৈকত নাসির, বুলবুল বিশ্বাসরা।

আশির দশকে লাল কাজল ছবিটি বানিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মতিন রহমান। তাঁর জীবনের প্রথম ছবিটি ছিল সুপার ফ্লপ। ব্যবসাসফল না হলেও নির্মাণগুণে প্রশংসিত হয় সেটি। এরপর অন্য প্রযোজকেরা তাঁর জন্য অর্থ লগ্নি করেন। দ্বিতীয় ছবি দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এই নির্মাতা মনে করেন, একজন নির্মাতার কোয়ালিটি প্রমাণিত হয় তাঁর নির্মাণের মধ্য দিয়ে। মুক্তির পর ছবি যদি জনপ্রিয় হয়, দর্শকের ভালো লাগে—সেই ছবির পরিচালক উঠে আসেন। প্রযোজক ও দর্শকের চাহিদা যখন মিলে যাচ্ছে, পরিচালক তখন এগিয়ে যাবেনই।

কেউ আবার নিজেদের প্রমাণ করার পর প্রযোজক–সংকটের কারণে এগোতে পারেন না বলে মনে করেন মতিন রহমান। তরুণ কয়েকজন পরিচালকের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমি এই তরুণদের দোষ দিতে রাজি নই। আমাদের অর্থ লগ্নিকারী কম। রাফির কথা যদি বলি, সে কিন্তু দর্শকদের বোঝাতে পেরেছে, “আমি তোমাদের রুচির ছবি বানানোর জন্য প্রস্তুত।” তাই প্রথম ছবির পরে আরেকটা ছবি পেয়ে গেছে। রাজনীতি ছবিটি বুলবুল বিশ্বাস ভালো বানিয়েছে। নির্মাণকৌশলে অনেক এগিয়ে আছে। রিজু আর সৈকত তাদের প্রথম সিনেমা দারুণ বানিয়েছে। পৃষ্ঠপোষক কম থাকায় কেউ হয়তো নিরীক্ষাও করেনি। এই জায়গায় একটা শূন্যতা রয়ে গেছে।’

পোড়ামন টু ও দহন বানিয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন রায়হান রাফি। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, ছবি বানাতে গিয়ে তরুণদের অনেকেই বুঝতে পারেন না, কী বানাবেন। কোনো তরুণ একবার হোঁচট খেলে বাকি দশজনের জন্য প্রযোজকের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তাই বলব, যাঁরা ছবি বানাতে চান, শুধু মন দিয়ে ছবিটাই বানান। বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার মতো ছবি।’

প্রযোজকদের কেউ কেউ বলছেন, নতুন অনেক পরিচালক আছেন, ছবি নির্মাণের আগে যে বাজেট দেন, কাজ শুরুর পর অঙ্কটা ঠিক রাখতে পারেন না। এতে পরিচালকদের ওপর আস্থা হারাতে থাকেন প্রযোজক। ঘটনা মেনে নিয়ে রায়হান রাফি বলেন, ‘আমিও এমনটি শুনেছি। সবারই বাজেট অনুযায়ী ছবি বানানো উচিত, যাতে প্রযোজক তাঁর লগ্নিকৃত টাকা ফেরত পান।’

আশির দশকে সিনেমা বানানো শুরু করেন মালেক আফসারী। এ বছরের ঈদুল ফিতরে তিনি করেছেন, পাসওয়ার্ড ছবিটি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে প্রযোজক আসতেন পরিচালকের হাত ধরে। ইদানীং নায়িকার মাধ্যমে প্রযোজক আসেন। এতে করে শুরুতেই পরিচালককে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। গল্প বদলে ফেলতে হয়। এ কারণে একজন পরিচালক নিজের যোগ্যতাকে মেলে ধরতে পারেন না। সিনেমা মানসম্মত হয় না, ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

দেশা দ্য লিডার, পাষাণ ছবি পরিচালনা করে আলোচনায় আসেন সৈকত নাসির। কিন্তু খুব কম কাজ করছেন তিনি। কেন? তিনি বলেন, ‘কম্প্রোমাইজ করে কোনো কাজ করতে চাই না বলেই সিনেমা বানানো থেকে দূরে সরে আছি। আমাদের দেশে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ধরন ব্যক্তি থেকে প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে না গেলে তরুণ নির্মাতাদের সংকট কাটবে না।’