Thank you for trying Sticky AMP!!

চলে গেলেন খোকন

শহীদুল ইসলাম খোকন

দীর্ঘদিন রোগভোগের পর গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন গতকাল সোমবার সকাল সোয়া আটটায় রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মোটর নিউরন ডিজিসে ভুগছিলেন। তাঁকে কিছুদিন কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল।
শহীদুল ইসলাম খোকনের মৃত্যুতে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিকেলে এফডিসিতে জানাজার আগে তাঁকে নিয়ে কথা বলেন চলচ্চিত্রাঙ্গনের বেশ কয়েকজন তারকা। ছিলেন আলমগীর, এ টি এম শামসুজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ফরিদুর রেজা সাগর, সোহেল রানা, কাজী হায়াৎ, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা, মুশফিকুর রহমান গুলজার, সোহানুর রহমান সোহান, রুবেল, আলী রাজ, মিজু আহমেদ, ওমর সানী, ড্যানি, সাইমন প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শহীদুল ইসলাম খোকনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
এ সময় খোকনের ছেলে হৃদয় বলেন, ‘বাবা কাজপাগল মানুষ ছিলেন। আবার পরিবারের জন্যও শতভাগ আন্তরিক ছিলেন। তিনি বাবা হিসেবে অসাধারণ। এমন বাবা আর কারও আছে কি না, জানা নেই। বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
বিএফডিসিতে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষ হয় বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে। এরপর উত্তরা কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে দুপুরে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর মসজিদে শহীদুল ইসলাম খোকনের প্রথম জানাজা হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালে খোকনকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছিল। এই রোগের চিকিৎসা নেই বলে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেন। ব্যক্তিজীবনে খোকন তিন সন্তানের জনক। তাঁরা উত্তরায় থাকেন।
অভিনেতা ও প্রযোজক মাসুদ পারভেজের (সোহেল রানা) সহকারী হিসেবে খোকনের চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয়। ১০ বছর ধরে তিনি সোহেল রানার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। খোকন তাঁর মার্শাল আর্টভিত্তিক ও অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন। এসব ছবির মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নতুন মুখকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সমাজবিরোধী শক্তির অপচেষ্টাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন শহীদুল ইসলাম খোকন। খোকন পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে লড়াকু, ঘাতক, পালাবি কোথায়, লাল সবুজ, ম্যাডাম ফুলি, ভণ্ড, বীর পুরুষ, বিপ্লব, অকর্মা, সতর্ক শয়তান, বিষদাঁত, টপ রংবাজ, উত্থান–পতন প্রভৃতি।

মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন
মৌসুমী

মৌসুমী


খোকন ভাই খুব বড় মাপের পরিচালক ছিলেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। উনি চিরশান্তিতে যাতে থাকতে পারেন, সেই দোয়া করবেন আপনারা। আসলে উনি ভালো মানুষ ছিলেন, ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ভালো গুণের অধিকারী ছিলেন। সারা জীবন দেখেছি, উনি মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেননি। ভালোবাসা পেয়েছেনও।

রুবেল

তাঁকে আমি অনেক ভালোবাসতাম
রুবেল
আমি শেষবারের মতো তাঁর মেয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখা হলো। বাড়িতে একদিন দেখা হলো। হাসপাতালে দুবার দেখা হলো। তারপর সত্যিই আমি আর তাঁকে দেখতে যাইনি। দেখতে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ওই শহীদুল ইসলাম খোকনকে দেখার শক্তি বা সাহস আমার ছিল না। তাঁকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তাঁর মতো পরিচালক বা ভালো বন্ধু আমার কেউ নেই। খোকনের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

বাবার মতোই একজন মানুষ
শিমলা

শিমলা


তিনি নেই—এ কথা বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি শুধু আমাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেননি। তিনি আমার বাবার মতোই একজন মানুষ। আমাকে হাত ধরেই তিনি চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছেন। সবকিছু ধরে ধরে শিখিয়েছেন। চলচ্চিত্রে আমি যা কিছু হতে পেরেছি, তা শুধু তাঁর কারণেই। এখনো আমাকে কোথাও দেখলে ‘ম্যাডাম ফুলি’র শিমলা বলে ডাকেন। একজন অভিনয়শিল্পীর সার্থকতা এখানেই। খোকন ভাই, আমাকে সেই সার্থকতা এনে দিয়েছেন।