Thank you for trying Sticky AMP!!

ছবির গানে ক্ষুব্ধ সংগীতাঙ্গন

দহন ছবির ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানের দৃশ্যে সিয়াম ও পূজা

শুটিং শেষে চলছে ‘দহন’ ছবির সম্পাদনার কাজ। এরপর জমা হবে সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ নভেম্বর ছবিটি মুক্তি দিতে চায় তারা। তবে সম্প্রতি ছবির ‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটি ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পর সংগীতাঙ্গনের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁদের কথা, এই গান অশ্লীল। আর ছবিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গান হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে।

‘হাজির বিরিয়ানি’ গানটির কথা লিখেছেন ভারতের কলকাতার প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনা করেছেন ও গেয়েছেন সেখানকারই আকাশ সেন। গানটি নিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজের যুক্তি, ‘এই গানে নায়কের চরিত্র সম্পর্কে দর্শককে ধারণা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এখন গানটির সমালোচনা করছেন, পুরো ছবি দেখার পর করবেন না, তা নিশ্চিত।’

পরিচালক রায়হান রাফিও বলছেন, ছবির স্বার্থে এই গান। সংগীতাঙ্গনের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গেও তাঁর দ্বিমত নেই, ‘গানটি আমাদেরও যে খুব ভালো লেগেছে, তা কিন্তু নয়। গল্পের প্রয়োজনে গানটি করা। এই গানের মধ্যে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, হিসুর মতো শব্দগুলো স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। আমাদের এও বোঝা দরকার, এটি মাদক-সন্ত্রাসবিরোধী ছবি। একজন তরুণের মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরেছি আমরা।’

পরিচালক ও প্রযোজকের এমন কথায় মোটেও একমত নন গীতিকবি, সুরকার, সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গত রোববার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কোনো ঘটনার ভয়াবহতা বোঝাতে গেলে সেই কাজ পর্দায় করে দেখাতে হবে, তা বিশ্বাস করি না। এ ধরনের অশ্লীল গান ছবি থেকে বাদ দিলে কিংবা কথাগুলো বদল করলে কোনো ক্ষতি হবে না।’

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাইরের দেশের গীতিকবি ও গায়ক হওয়াতে এই গান তৈরি হয়েছে। বিষয়টিতে একমত বুলবুল। তিনি বলেন, ‘ভারতের অনেক চলচ্চিত্রে অনেক ধরনের কথা যুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশটা ছোট, আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। এত বছরে আমরা কখনো এ ধরনের কথা শুনিনি। গানের কথা তো মুখেই আনতে পারছি না।’

গানটি নিয়ে কষ্টের কথা শুরুতে ফেসবুকেও জানান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি লেখেন, ‘এই দেশের সব দেয়ালেই ৩০ লাখ শহীদের পবিত্র রক্ত লেগে আছে। সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এমন অশ্লীল কথার গানের ছাড়পত্র দিলে তাঁদের ছবি ফেসবুকে তুলে ধরা হবে। বাবা শব্দের মানে হচ্ছে ইয়াবা, বর্তমান সরকার এই মরণনেশার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এই অসামাজিক গান বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হোক।’

গানটি সম্পর্কে এরই মধ্যে জেনেছেন সেন্সর বোর্ডের সদস্য নাসিরউদ্দিন দিলু। তিনি বলেন, ‘ছবিটি এখনো সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা হয়নি। ছবিতে সাংঘর্ষিক কিছু পেলে কিংবা দেশের কারও অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে, এমন দৃশ্য রেখে ছবির ছাড়পত্র আমরা দিই না।’

মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান এই গান প্রসঙ্গে বলেন, ‘চরম অবক্ষয়ে অস্তিত্বহীন হওয়ার পরই অস্তিত্ব খোঁজার পালা আসবে আবার। এখন অস্তিত্ব হারানোর দশা চলছে।’ কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এ ধরনের কথাসমৃদ্ধ গান মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’ গুণী এই সংগীতব্যক্তিত্বের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শেখ সাদী খান, এন্ড্রু কিশোর, বাপ্পা মজুমদার, ফোয়াদ নাসের বাবু, হাসান মতিউর রহমান, শওকত আলী ইমন, শফিক তুহিন, আনজাম মাসুদ, ফরিদ আহমেদসহ অনেকে। সংগীত গবেষক ও গুণী শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী এ ধরনের গানকে এক শব্দে ‘শোচনীয়’ বলে মন্তব্য করলেন।

দহন–এর গান প্রকাশিত হয় ১৪ অক্টোবর। গায়ক ও সংগীত পরিচালক আকাশ সেন বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের নেশার পক্ষে নই। তবে শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো চিত্রনাট্য যা দাবি করে, সে অনুযায়ী কাজ করা। নেশার পর কেউ যখন অসংলগ্ন ব্যবহার করে, তখন সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই গান।’

গানটি নিয়ে প্রতিবাদ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা মুম্বাই নয়, ঢাকা! এটা ভারত নয়, বাংলাদেশ! তালি কিংবা শিস পাওয়ার আশায় আমরা গানের মধ্যে যা ইচ্ছা, তা–ই জুড়ে দেব! আহা বাংলা গান! আহা বাংলা সংস্কৃতি! লজ্জা, লজ্জা।’

দহন ছবিতে অভিনয় করেছেন সিয়াম, পূজা, মমসহ অনেকে।