Thank you for trying Sticky AMP!!

জাতীয় চিত্রশালা যেন এক ভাস্কর্যের বাগান

শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী দেখতে প্রতিদিন আসছেন নানা বয়সী দর্শক। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় চিত্রশালাটি এখন ভাস্কর্যের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। চলছে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এ প্রজন্মের মেধাবী শিল্পীদের বাছাই করা কাজগুলো এখানে আলো ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি দেশের পথিকৃৎ ভাস্করদের কাজ প্রদর্শনীটির শোভা এবং মর্যাদা বাড়িয়েছে।

‘চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী ২০১৮’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ৯ মে। চলবে ৭ জুন পর্যন্ত। ৯৮ জন শিল্পীর মোট ১১৭টি শিল্পকর্ম রয়েছে এখানে। এ ছাড়া ১১ জন আমন্ত্রিত শিল্পী এবং প্রয়াত চারজন পথিকৃৎ ভাস্করের একটি করে ভাস্কর্যও রয়েছে প্রদর্শনীতে।

চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা আঙ্গিকের, নানা উপকরণে তৈরি ভাস্কর্য। যেন এক শিল্পশোভিত বাগান। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ভাস্করেরা যে নিত্যনতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, এ প্রদর্শনীতে এটা ভালোভাবে বোঝা যাবে।

চোখজুড়ানো বিচিত্র কাজ। ‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে-৯’ শিরোনামে চমৎকার ভাস্কর্য গড়েছেন খোকন চন্দ্র সরকার। দূর থেকে এই ভাস্কর্যটি দেখলে কেবল একটি ষাঁড়ের কাটা মাথা মনে হবে। কাছে গেলে সহজেই বোঝা যাবে এর মর্মকথা, যেখানে বিভিন্ন রঙের ফুলের সঙ্গে স্থান পেয়েছে রাইফেল, গ্রেনেড, কামানের মতো বিধ্বংসী বস্তু। সিরামিক মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্যটির জন্য জাতীয় ভাস্কর্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

‘আধিপত্যের খেলা-৬’ শিরোনামের ভাস্কর্যটির সামনে উৎসুক কয়েকজন দর্শককে দেখা গেল। একটি কুকুরের সামনের পা ও উঁচু লেজ দেখে মনে হয় যে ক্ষিপ্রগতিতে ওপরের দিকে ঝাঁপ দেবে। সামনে দুটি পাখি প্রাণ বাঁচাতে উড়ছে। বোঝা যায় এখানে আধিপত্যের খেলাই চলছে।

শিমুল দত্তের ‘চাপ সামলাও-৭’ নামের ভাস্কর্যটিতে একজন মানুষ চিত হয়ে পড়ে যাচ্ছে, মুখে ঢোকানো রয়েছে পেরেকজাতীয় কিছু একটা। চন্দ্রনাথ পালের ‘মুখোশ’-এ ফুটে উঠেছে মানুষের ভেতরে পশুর অবস্থান। ফারজানা ইসলামের ‘অপেক্ষা’ ভাস্কর্যটি স্মৃতিজাগানিয়া। কোনো এক পুরোনো জীর্ণ ভবনের ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের অপেক্ষায় দূরে তাকিয়ে আছেন এক নারী।

বরেণ্য শিল্পীদের কাজ রাখা হয়েছে আলাদা একটি ঘরে। এখানে মিলল নিতুন কুন্ডুর ‘বিজয়’, আবদুর রাজ্জাকের ‘কম্পোজিশন’, হামিদুজ্জামানের ‘বিশ্রাম’, আনোয়ার জাহানের ‘বালক’, শ্যামল চৌধুরীর ‘ঢুলি’, রাসার ‘গরিব মা, ধনী মা’। শামীম সিকদারের অনবদ্য সৃষ্টি ‘বাউল’।

প্রদর্শনীটির উদ্বোধনকালে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বললেন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের পূর্বদিকের খোলা জায়গায় একটি ভাস্কর্য পার্ক তৈরি হবে। শিগগিরই কাজও শুরু হবে। বললেন, ‘পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ভাস্কর্যচর্চায় অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেননা ভাস্কর্য শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, ইতিহাস ও সভ্যতার পরিচয়ও বহন করে।’ জাতীয় এ প্রদর্শনীর কাজ সম্পর্কে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রদর্শনীটি বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ। দেখলে হৃদয় প্রফুল্ল হয়।’

কথা হলো একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলমের সঙ্গে। জানালেন বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন এ প্রদর্শনীতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় ভাস্কর্য সম্পর্কে জনমানসে এখনো অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি রয়েছে। শক্তিমান এই শিল্প মাধ্যমটির সুরক্ষা, বিকাশের জন্য শিল্পকলা একাডেমি জাতীয়, নবীন ও এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর পাশাপাশি আলাদাভাবে জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

প্রদর্শনী বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকে।