Thank you for trying Sticky AMP!!

জ্বলে উঠবে বাংলা গানের মঙ্গলদীপ

ইফ্ফাত আরা দেওয়ান,রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা,এন্ড্রু কিশোর
আগামীকাল শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নজরুল মঞ্চে শুরু হচ্ছে তিন দিনের বাংলা উৎসব। দুই বাংলার কণ্ঠশিল্পীদের অংশগ্রহণে সব ধরনের বাংলা গান নিয়ে এ উৎসবের নিবেদক বাংলাদেশের বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এবং ভারতের বন্ধন ব্যাংক, দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও নাথিং বেয়ন্ড সিনেমা। ঢাকার শিল্পীদের অনেকে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন সেখানে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এ উৎসব সম্পর্কে কিছু তথ্য।


একালের ‘তুমি যাকে ভালোবাসো স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো’ থেকে সেকালের ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’। নচিকেতার ‘নীলাঞ্জনা’ বা বাপ্পা মজুমদারের ‘পরী’। এক জায়গায় বসে যদি গানগুলো শোনা যায়, কেমন হয়? পাশাপাশি দুই বাংলার দুই প্রজন্মের শিল্পীরা যদি শোনান তাঁদের গান বাঁধার পেছনের গল্পটি, শ্রোতার জন্য সেটি হবে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।

বাংলা গানের অনুরাগীরা সেই সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। কলকাতার নজরুল মঞ্চে কাল শুক্রবার বিকেলে রবীন্দ্রসংগীত গাইবেন বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও ভারতের লোপামুদ্রা মিত্র। পরদিন নজরুলসংগীত গাইবেন খায়রুল আনাম শাকিল ও ইন্দ্রানী সেন। কাল সেখানে বসছে বাংলা গানের আসর ‘বাংলা উৎসব’। এই আসরের মধ্য দিয়ে জ্বলে উঠবে বাংলা গানের আরেক মঙ্গলদীপ। তিন দিনের এই উৎসবে প্রায় সব ধরনের বাংলা গান শোনাবেন দুই বাংলার স্বনামখ্যাত ও জনপ্রিয় শিল্পীরা।

ফাহমিদা নবী,সামিনা চৌধুরী,অদিতি মহসিন,চন্দনা মজুমদার

সেই ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগে পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যায়। সেই থেকে তারা বাংলায় হেসেছে, কেঁদেছে এবং গেয়েছে। ভাষা এক হলেও দুই বাংলার গানে ছিল ভিন্ন ব্যথা, আকুতি, ভিন্ন সুর। সেসবের কিছুটা প্রতিবেশীরা জানেন, বেশির ভাগের খোঁজ তাঁদের রাখা হয়নি। স্যাটেলাইট চ্যানেল ও ইউটিউবের কল্যাণে গান বিনিময় তো হলো অনেক। এবারে গানের ভেতরকার আকুতিগুলো শুনবেন তাঁরা। বিশেষ করে নানা অভিঘাতের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া বাংলাদেশের গানগুলোর ঘটনা তো একেবারেই আলাদা। দুই বাংলার অংশগ্রহণে যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশের বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও ভারতের বন্ধন ব্যাংক, দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং নাথিং বেয়ন্ড সিনেমা।

দুই বাংলার শিল্পীরা নিয়মিত দুই দেশের মঞ্চ ও টেলিভিশনে গান করেন। কিন্তু এ ধরনের উৎসব মঞ্চের আয়োজন এবারই প্রথম। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা মনে করেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করার জন্য এ এক দারুণ উৎসব। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দুই বাংলার মানুষকেই সমৃদ্ধ ও আনন্দিত করবে। অন্যদিকে নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিলের মতে, দুই বাংলার সংগীত বিনিময়ে এই উৎসব একটি ব্যতিক্রম মাত্রা যুক্ত করবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও কাজী নজরুল ইসলাম—এই পঞ্চকবির গান থাকবে বাংলা উৎসবে। থাকবে আধুনিক ও পুরোনো দিনের বাংলা গান, রাগপ্রধান গান, চলচ্চিত্রের গান, লোকগান এবং ব্যান্ডের গান। রূপঙ্কর বাগচীর ‘এ তুমি কেমন তুমি’ কিংবা সামিনা চৌধুরীর ‘কবিতা পড়ার প্রহর’ গানগুলো তাঁদের কণ্ঠে একের পর এক বেজে উঠলে সেই অভিজ্ঞতা দুই বাংলার শ্রোতাদের জন্যই হবে অনন্য।

এই উৎসবে গাইবে দুই বাংলার দুটি ব্যান্ড। ঢাকার চিরকুট ও কলকাতার চন্দ্রবিন্দু। চিরকুটের শিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি বলেন, ‘চমৎকার গোছানো একটি উৎসব হতে যাচ্ছে এটি। বাংলা গান নিয়ে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াই। এবার এতজন শিল্পীর সঙ্গে এক মঞ্চে গাইব, এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো লাগার একটি ব্যাপার হবে। আমাদের বিশ্বাস, ওপার বাংলার শ্রোতারাও আমাদের গান পছন্দ করেন।’

লুভা নাহিদ চৌধুরী
লুভা নাহিদ চৌধুরী
মহাপরিচালক, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন
কলকাতায় বাংলাদেশের শিল্পীদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেখানকার শিল্পীরাও নিয়মিত বাংলাদেশে গান করতে আসেন। এই খণ্ড খণ্ড পরিবেশনার বাইরে একই মঞ্চে আমরা তাঁদের উপস্থাপন করতে চেয়েছি, এর পেছনে একটি উদ্দেশ্য আছে। বাংলা গানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পথচলা একেবারেই ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গের ছিল একটি প্রতিষ্ঠিত সংগীত ও চলচ্চিত্রাঙ্গন। কিন্তু ৫০–এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত নানা ঘাত–প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের পথ চলতে হয়েছে। নানা চড়াই–উতরাইয়ের ভেতর দিয়ে নিজেদের খুঁজে পেতে হয়েছে। আমাদের সংগীতে সেসবের প্রভাব রয়েছে। প্রেম–ভালোবাসার পাশাপাশি আমাদের গানের একটি বড় জায়গাজুড়ে আছে দেশচেতনা। নানা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। দুই বাংলার এ দুই গল্পের সম্মেলনে বাংলা গানের একটি তৃতীয় গল্প তৈরি হতে পারে এ উৎসবের মধ্য দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গকে আমরা আমাদের সংগীতের পথচলার ইতিহাসটি জানাতে চাই। এতে সামগ্রিকভাবে বাংলা গানকে উপলব্ধি করতে সুবিধা হবে উভয় পক্ষের। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে এ যাত্রায় যুক্ত হয়েছে বন্ধন ব্যাংক, দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও নাথিং বেয়ন্ড সিনেমা।