Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝুলিভরা অভিজ্ঞতা তাঁদের

>প্রথমবার নয়, দ্বিতীয়বার নয়, তৃতীয়বারেও নয়, চতুর্থবারে গিয়ে গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্স, সংক্ষেপে জিএমএমে দেখা গেল দুই বাংলাদেশি তরুণ। তাঁরা হলেন আরিফুর রহমান ও সুমিত। সেই জিএমএম থেকে ফিরে এসে দুই তরুণের অভিজ্ঞতা জানাতে চেয়েছিলাম আমরা। লিখেছেন জিনাত শারমিন

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, তুরস্ক ও লেবানন থেকে ১৮ জন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সানসেট বুলেভার্ডের সানসেট স্ট্রিপের ৯টি বাড়িতে। হ্যাঁ, যে এলাকায় থাকেন হলিউডের রথী–মহারথীরা। আরিফুর রহমানের ঘরের জানালা দিয়ে তাকালেই হলিউড হিলসে বিশালাকারে ‘হলিউড’ লেখা বোর্ডটা দেখা যেত। প্রথম আলোরসঙ্গে আলাপচারিতায় সেটা মনে করিয়ে দিতেই বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ওটা তো কেবল প্রতীকী। অবশ্য সেই বাড়িতে শুধু দুই–চার ঘণ্টা ঘুমাতে যেতেন। বাকি সময় কাজের মধ্যেই থেকেছেন, কাজের পেছনেই ছুটেছেন। আর যাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হলিউডের চেনা নাম, চেনা মুখ।

সিনেমা নিয়ে পড়া, সিনেমা বানানো, পরিবেশন, প্রচারণার ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ছবি বিক্রির কৌশলসহ গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্স থেকে বাংলাদেশের দুই তরুণ আরিফুর রহমান ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত শিখেছেন কীভাবে আইফোন দিয়ে বড় পর্দার উপযোগী সিনেমা বানাবেন ইত্যাদি। হয়েছে নানা দেশের চলচ্চিত্রকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, আইডিয়া আর সংস্কৃতির বিনিময়, আরও কত–কী। এক রাতে তাঁরা দ্য সিক্সথ সেন্স (১৯৯৯) ছবির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কবরস্থানের নির্জন পরিবেশে এই ছবির বিশেষ প্রদর্শনী দেখেছেন। ঘুরে দেখেছেন ওয়াল্ট ডিজনি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, নেটফ্লিক্স, এইচবিও বা অ্যারির মতো প্রতিষ্ঠান।

আরিফুর রহমান। ছবি: খালেদ সরকার


আরিফুর হলেন ‘তরুণ অনুরাগ কশ্যপ’
আরিফুর রহমান হলেন ‘তরুণ অনুরাগ কশ্যপ’। না, এটা আমরা বলছি না।

আরিফুর রহমান ২০১৬ সালে গ্যাংস অব ওয়াসিপুর দেখে মার্কিন মুলুকে গিয়ে সোজা চলে গেলেন পরিচালক অনুরাগ কশ্যপের অফিসে। শুনলেন, অনুরাগ কশ্যপের তখন বেশ কয়েকটা অফিস। ওই সময়, ওই অফিসে ছিলেন না তিনি। তাই সেদিন অনুরাগের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। এরপরের ঘটনা ২০১৯ সালের। জিএমএমের একটা ইভেন্টে বিশেষ অতথি হয়ে এলেন খোদ অনুরাগ। আর সেই আয়োজনের বুকলেটে দেখা গেল, অনুরাগ কশ্যপের পাশের ছবিটাই বাংলাদেশের আরিফুর রহমানের। সেই রাতে অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে আরিফুর রহমান জম্পেশ আড্ডা দিলেন। একপর্যায়ে অনুরাগ কশ্যপ আরিফুরকে নাকি বললেন, ‘তোমার চোখেমুখে আমি ২৫ বছরের অনুরাগ কশ্যপকে দেখতে পাচ্ছি!’

রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। ছবি: খালেদ সরকার

সুমিতকে দিয়ে হবে

সুমিতের আ নিউ প্রফেট ছবিটি নির্মিত হবে ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি) প্রযুক্তিতে। এরই প্রস্তুতি হিসেবে সেখানকার বন্ধুরা মিলে লস অ্যাঞ্জেলেসের ভেনিস বিচে গিয়ে বানিয়ে ফেললেন স্টেরিওস্কোপিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি মেইড ইন ভেনিস। জিএমএমের সমাপনী দিনে হলিউডের খ্যাতনামা প্রযোজনা ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ডিজনি স্টুডিওর সদর দপ্তরে দেখানো হলো সেই ছবি। স্টেশনে ছবিটি দেখে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপমন্ত্রী নাকি বলেছিলেন, ‘সুমিতকে দিয়ে হবে।’ অন্যরাও ছবিটি দেখে আনন্দ পেয়েছিল খুব। সুমিত সবার সেই অভিব্যক্তি ভিডিও করে রেখে দিয়েছেন। সুমিত এত দিন জানতেন, কেবল বাংলাদেশের স্বাধীন ধারার নির্মাতাদেরই সিনেমা বানানোর জন্য রাতদিন সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু জিএমএমের প্ল্যাটফর্ম থেকে এই তরুণ নির্মাতা জেনেছেন, মোটামুটি বিশ্বের সব দেশের স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের একই ধরনের লড়াই করতে হয়।

কীভাবে যাবেন জিএমএমে?

সত্যিটা হচ্ছে আপনি চাইলেই ফিল্ম ইনডিপেন্ডেন্ট আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত এই জিএমএম প্রোগ্রামে যেতে পারবেন না। এ জন্য অনেকের সুপারিশ লাগবে। যেমন পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের পরিচালক ও প্রযোজকদের মাধ্যমে মনোনীত হয়েছিলেন বাংলাদেশের আরিফুর রহমান। আর সুমিতকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিয়েছিলেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র কমিউনিটি। এ বছর থেকে আরিফ আর সুমিতও অন্যদের মনোনীত করতে পারবেন। আরও বড় আশার কথা হলো, ভবিষ্যতে জিএমএম বাংলাদেশেও ল্যাব করতে পারে।