Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকায় নতুন নাটক, চট্টগ্রামে চার দেশের নাটকের উৎসব

ভূপেন হাজারিকা স্মরণে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রভাব ফেলতে পারেনি ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ঝিরঝিরে বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখেই শিল্পকলা একাডেমির সব কটি মঞ্চে ও বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটকের প্রদর্শনী হয়। দর্শকের উপস্থিতিও ছিল বেশ। গত সপ্তাহে মঞ্চে নতুন নাটক দেখেন ঢাকার দর্শকেরা। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ছিল দেবী নাটকের প্রদর্শনী। আজ চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে চার দেশের নাটক নিয়ে উৎসব। এসবের বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাসুম আলী

‘কালিদাস’–এর উদ্বোধন
নতুন দলের নতুন নাটক নিয়ে দর্শকের আলাদা আগ্রহ থাকে। কারা করছে, কেমন করছে—এমন আলোচনা চলতে থাকে। গত সপ্তাহে তেমনই আগ্রহের বিষয় ছিল থিয়েটার ৫২ নতুন নাটক কালিদাস। নাটকটি লিখেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু, নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ। নাটকটির কাহিনি মহাকবি কালিদাসের জীবনকে আশ্রয় করে।

৮ নভেম্বর শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় কালিদাস–এর। এই নাটকে দেখা গেছে মহাকবি কালিদাসকে আপন করে দেখতে চাওয়ার চেষ্টা। নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশ বলেন, ‘আলো জ্বললে যেভাবে আঁধার পালায়, তেমনি কালিদাসের জীবনীনির্ভর এই নাটক এক অর্থে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। তরুণ ও নবীন অভিনেতাদের অভিনীত সংলাপপ্রধান নাটকটি দর্শকদের শিল্প পিপাসা নিবৃত্ত করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’ নাটকটিতে কালিদাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. নজরুল ইসলাম, বিদ্যাবতীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেইন্টলী বিশ্বাস। দেবী সরস্বতী চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাটকটির নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশ এবং অন্যান্য চরিত্রে আদিব মজলিশ খান, রুদ্র রায়, মো. সাপলুর রহমান, শেখ আদিব নাহিয়ান ও এম পারভেজ।

কালিদাস নাটকে অভিনয় করেছেন নজরুল ইসলাম ও নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশ

এর আগে অক্টোবর মাসে রাজধানীর রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে শারদীয় নাট্যোৎসবে নাটকটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী হয়। তবে নাটকের ওই প্রদর্শনীকে উদ্বোধনী বা কারিগরি, কোনোটাই বলছেন না নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশ।

আজ চট্টগ্রামে নান্দীমুখের উৎসব
১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের সময়টাতে চট্টগ্রামে একদল উৎসাহী নাট্যকর্মী ঠিক করেন নতুন দল গড়বেন। নান্দনিক সৃষ্টি এবং নতুন ভাবনায় নিজেদের তুলে ধরার লক্ষ্যে সে বছরের ১৬ নভেম্বর যাত্রা করে নান্দীমুখ। নান্দীমুখের পথচলার ৩০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম আয়োজন ‘নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯’। শুরু হবে আজ ১৪ নভেম্বর থেকে। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে উৎসবটি চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত।

আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী। প্রধান অতিথি থাকবেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। অতিথি থাকবেন ভারতীয় হাইকমিশন, চট্টগ্রামের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি ও নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী।

২১ নভেম্বর ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে মিস্টিরিয়াস গিফট

নান্দীমুখের দল প্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত জানান, এবারের উৎসবে ভারত, ইরান, স্পেন ও বাংলাদেশের আটটি নাট্যদল তাদের আলোচিত প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবে। এ ছাড়া ‘বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও নান্দীমুখ সারা দেশের চারজন প্রতিশ্রুতিমান নাট্য নির্দেশককে নান্দীমুখ সম্মাননা প্রদান করবে। উৎসবের শেষ দিন স্বপন ভট্টাচার্য, ত্রপা মজুমদার, অসীম দাশ ও মোসলেম উদ্দিন সিকদারকে দেওয়া হবে এই সম্মাননা।

আজ উদ্বোধনী দিনে নান্দীমুখ মঞ্চস্থ করবে তাদের প্রযোজনা আমার আমি। কাল শুক্রবার ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় রয়েছে সেমিনার। ১৬ নভেম্বর তির্যক নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করবে রোমিও জুলিয়েট, ১৭ নভেম্বর ভারতের আমতা পরিচয় মঞ্চস্থ করবে সাবিত্রীবাঈ ফুলে, ১৮ নভেম্বর সবারপথ ত্রিনয়নী, ১৯ নভেম্বর স্পেনের মুন প্যালেস মঞ্চস্থ করবে ডিলেমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেইলকোট, ২০ নভেম্বর ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করবে বিল্বমঙ্গল, ২১ নভেম্বর ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে মিস্টিরিয়াস গিফট এবং ২২ নভেম্বর ভারতের জ্যোতি ডোগরা গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে ব্ল্যাক হোল

গানে, নৃত্যে ও নাটকে ভূপেন স্মরণ
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাজুড়ে মানুষের নিদারুণ কষ্ট, চা-বাগানের মালিকদের অত্যাচার বা ইংরেজদের চাবুকের আস্ফালন—সবই যেন মনের খাতায় তুলে রাখতেন ভূপেন হাজারিকা। অবসরে সেই খাতা খুলে নেমে পড়তেন আর একের পর গান লিখতেন। সেই গানগুলোই গত সপ্তাহের তিনটি দিন আবারও মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ঢাকার দর্শক–শ্রোতার মনে।

নান্দীমুখের উৎসবে ১৯ নভেম্বর স্পেনের মুন প্যালেস মঞ্চস্থ করবে ডিলেমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেইলকোট

৫ থেকে ৭ নভেম্বর সন্ধ্যার পর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই বাধ্য হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন এবং জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনে ঢুকতে। একটাই কারণ, ভূপেন হাজারিকার গান। ‘আমি এক যাযাবর’, ‘ও গঙ্গা বইছ কেন’-এর মতো খুব চেনা গানগুলো টেনে নিয়ে গেছে অনুষ্ঠানস্থলে।

ভূপেন হাজারিকার অষ্টম প্রয়াণ দিবস ছিল ৫ নভেম্বর। তাঁকে স্মরণ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও আসামের সংগঠন ব্যতিক্রম মাসডো যৌথভাবে আয়োজন করেছে ‘মোরা যাত্রী একই তরণীর’ শীর্ষক আলোচনা, সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের। প্রথম দিন ছিল আলোচনা সভা ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। এরপর আসামের বর্ণালি মহাত্মের পরিচালনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করেন সত্রীয়া নৃত্য, কৃষ্ণবন্দনা, গোপী নৃত্য। দ্বিতীয় দিন একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ছিল আলোচনা, সংগীত, নৃত্য ও নাট্যানুষ্ঠান। শেষ দিন ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় অসম কলাতীর্থ ও এসবি মুভিজের নাটক কমলাকুঁয়ারীর সাধু

তির্যক নাট্যগোষ্ঠীর রোমিও জুলিয়েট নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে ১৯২৬ সালে এক শিক্ষক পরিবারে জন্ম ভূপেন হাজারিকার। ভারতের গুয়াহাটি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় আর যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। আমেরিকায় থাকার সময়েই তাঁর পরিচয় হয় বিখ্যাত শিল্পী পল রবসনের সঙ্গে, যাঁর অনেক বিশ্ববিখ্যাত গানের ভাষান্তর করেছেন ভূপেন হাজারিকা। অবশ্য তার অনেক আগে থেকেই অসমিয়া ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন ভূপেন। শৈশব–কৈশোরে ব্রহ্মপুত্রের বিশাল জলরাশি বা চা-বাগানের পাতা তোলা শ্রমিকেরা ভূপেনের মনকে নাড়া দিত। তাঁদের কথা ভেবেই মাত্র ১২ বছর বয়সে গান লিখে ফেলেছিলেন তিনি।

অহমীয়া লোকসংগীতের আদলে একের পর এক গান লিখেছেন, সুর করেছেন ভূপেন হাজারিকা। যুক্ত হয়েছেন বামপন্থী গণনাট্য আন্দোলনে। নিজের ভাষা ভিন্ন হলেও বাংলায় একের পর এক অসাধারণ গান গেয়েছেন তিনি, যার মধ্যে অন্যতম ‘আমি এক যাযাবর’। নিজেও যেন যাযাবর ছিলেন। ছুটে বেরিয়েছেন নানা প্রান্তে। আসাম থেকে কলকাতা, সেখান থেকে মুম্বাইয়েও পৌঁছেছিলেন। কাজ করেছেন সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। হিন্দিতেও গেয়েছেন অসংখ্য গান। হিন্দি গানের মধ্যে রুদালি ছবির ‘দিল হুম হুম করে’ গানটি তো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গানটি বিবিসির শ্রোতা জরিপে সর্বকালের প্রথম ১০টি জনপ্রিয় গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল।

২০১১ সালের ৫ নভেম্বর ভূপেন হাজারিকা মারা যান।