Thank you for trying Sticky AMP!!

তারকাদের কেন এই আত্মহত্যা

সিল্ক স্মিতা। ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে নিজের বাসভবনে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

আলো ঝলমল তারকা ভুবনের বাসিন্দাদের জীবন থেকে দপ করে নিভে যাওয়া সংগত কারণেই চমকে দেয়, ভাবিয়ে তোলে; বিশেষ করে চলচ্চিত্রশিল্পে। সাম্প্রতিক কালে ভারতের একাধিক তারকার আত্মহত্যার ঘটনায় অনেকেই গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসেছেন, এর নেপথ্যে কী? সম্প্রতি আল জাজিরা ডটকমে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে তেলেগু সিনেমার ৩৩ বছর বয়সী হার্টথ্রব  অভিনেতা উদয় কিরণকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে নিজের আলিশান বাড়িতে ছাদ থেকে রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় তাঁকে। ১৯৬৪ সালে বলিউডের অভিনেতা গুরু দত্ত আত্মহত্যা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। মানসিক কষ্ট এবং হতাশার কারণে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল ও ঘুমের বড়ি সেবন করতেন তিনি।

তেলেগু ও তামিল সিনেমার নারী ভক্তরা এখনো পর্দায় উদয় কিরণের মুগ্ধ করা অভিনয়ের কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হন। তবে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে উদয় কিরণ খ্যাতি পেলেও তাঁর বাস্তব জীবনটা হেঁটেছে উল্টো পথে। দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্র প্রদেশের প্রভাবশালী এক অভিনেতার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পর কিরণের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। মানসিক বিপর্যয়ের একটি পর্যায়ে কিরণের চলার পথটা বদলে যেতে থাকে। তিনি চলচ্চিত্রে কম মনোনিবেশ করেন। ধারণা করা হয়, আত্মহননের আগে দীর্ঘ সময় ধরে হতাশায় ভুগছিলেন কিরণ।

২২ জানুয়ারি নায়িকা জিয়া খানের আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও ভারতের পুলিশ মুম্বাই আদালতে চার্জশিট দখল করেছিল। ২৫ বছর বয়সী জিয়া খান আত্মহত্যা করেছিলেন বলে ধারণা করে পুলিশ। ওই সময় জিয়ার মা দাবি করেছিলেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর আগে লেখা ডায়েরিতে তাঁর প্রেমিকের নাম উল্লেখ করেছিলেন। সেই প্রেমিকের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই হতে পারে এই পথ বেছে নেওয়ার কারণ। এ বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

আত্মহত্যায় এগিয়ে দক্ষিণ ভারত

বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যার মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন দক্ষিণ ভারতের অভিনেত্রীরা। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ ভারতের চার ভাষায় অভিনয় করা নয় অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের পর্দার জীবনে ভালোবাসার পূর্ণতা দেখা গেলেও বাস্তব জীবনে তার দেখা মেলেনি। তাঁরা বেশির ভাগই হূদয়ঘটিত ও অসম প্রেমের বলি হয়ে কলঙ্কজনক মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে তামিল চলচ্চিত্রের ইতিহাস রচয়িতা বলেন, বিনোদন জগতে পুরুষ ও নারীর বৈষম্য অনেক অভিনেত্রীকে চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কথিত প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ১৯৭৮ সালে তামিল সিনেমার তারকা জয়লক্ষ্মী ঝুলে আত্মহত্যা করেন। ১৯৭৯ সালে কন্নড় সিনেমার ‘শাইনিং স্টার’খ্যাত অভিনেত্রী কল্পনা ‘প্রেমে ব্যর্থ হয়ে’ আত্মহত্যা করেন। ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমার সফল অভিনেত্রী শোভা আত্মহত্যা করেন ১৯৮০ সালে। তিনিও চলচ্চিত্র নির্মাতার সঙ্গে প্রেমে সফল হননি বলে জানা যায়। তেলেগু চলচ্চিত্র দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা দিব্যা ভারতি ১৯৯৩ সালে ১৯ বছর বয়সে নিজ অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর তিন বছর পর দক্ষিণ ভারতের সিনেমার স্বঘোষিত মেরিলিন মনরো, সিল্ক স্মিতা সিলিংয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। ৪০০-এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা ওই অভিনেত্রী অসম প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ৩৫ বছর বয়সে আত্মহননের পথ বেছে নেন। তামিল সিনেমার ২০০০ সালে ভিজি অশ্বথ সিনেমা ছেড়ে দেওয়ার পর আত্মহত্যা করেন, তখন ৩০-এর ঘরে পা রেখেছিলেন। ২০০২ সালে উদীয়মান তামিল ও তেলেগু সিনেমার অভিনেত্রী মোনাল আত্মহত্যা করেন। তাঁর অভিনেত্রী ছোট বোন ট্যাবলয়েডকে জানান, মোনাল ‘বয়ফ্রেন্ড’জনিত কারণে মারা যান। একই বছরে প্রত্যুষা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর মা-বাবা তাঁকে প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হননি।২০০৫ সালে মালয়ালম চলচ্চিত্রের তারকা ময়ূরীও ব্যর্থ সম্পর্কের পর ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

লিঙ্গবৈষম্য

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিনয়, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র ইতিহাসের অধ্যাপক প্রীতম কে চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের লিঙ্গবৈষম্য আছে। তিনি বলেন, ‘দুঃখ-দুর্দশা ভুলতে পুরুষেরা যে স্বাধীনতা পান নারীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয় না।’

দক্ষিণ ভারতের মতো প্রথা মেনে চলা সমাজে অভিনেত্রীদের জৌলুস খুব কম সময় ধরেই থাকে। তবে অভিনেতাদের ক্ষেত্রে ঠিক তাঁর উল্টোটা।

এ প্রসঙ্গে স্নেহা নামের আত্মহত্যা প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক লক্ষ্মী বিজয়কুমার বলেন, অভিনেত্রীরা বড় স্বপ্ন নিয়ে আসেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে ভগ্ন ইচ্ছা নিয়ে তাঁরা আর বাঁচতে পারেন না। তাঁরা যৌন নিপীড়নেরও শিকার হন।

অন্যদিকে প্রীতম বলেন, পুরুষ অভিনেতারা সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও বৈষম্যের শিকার হন নারীরা।