Thank you for trying Sticky AMP!!

বলিউড স্বজনপ্রীতিতে নয় প্রতিভাতে চলে

সালমান খান
>

এখনো ছবি মুক্তির সময় বলিউডের সুলতান সালমান খান রীতিমতো উত্তেজনায় ভোগেন। তবে এবার তাঁর এই উত্তেজনা অভিনেতা হিসেবে নয়, প্রযোজক হিসেবে। আগামীকাল ৫ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে সালমান প্রযোজিত ছবি লাভযাত্রী। এই ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হচ্ছে এক নতুন জুটির। লাভযাত্রী ছবির নায়ক হলেন সালমানের ভগ্নিপতি আয়ুশ শর্মা। আর নায়িকা ইরাকি কন্যা ওয়ারিনা হুসেন। বলিউডের সুলতান সালমান খানের মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। এই আড্ডা বসেছিল তাঁর গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে। 

প্রশ্ন: আপনার ভগ্নিপতি আয়ুশের অভিষেক হতে চলেছে। নায়ক হিসেবে আপনার প্রথম ছবি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়ার’ মুক্তির দিনের কথা মনে আছে?

সালমান: (একটু ভেবে) মনে আছে নিশ্চয়ই। আমি তখন ভীষণই নার্ভাস ছিলাম। রাজীব নামের আমার এক বন্ধু আছে। যদিও আমরা তাকে মিঠুন চক্রবর্তী বলে ডাকতাম। কারণ, ও অনেকটা মিঠুনদার মতো দেখতে। আর দাদার মতো ও লম্বা চুল রাখত। এখন রাজীব একটা অ্যাকশন ক্লাস চালায় বোধ হয়। আমি সেই মিঠুনের মোটরসাইকেলে চেপে মিনার্ভা হলে যাই দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখতে। ছবির বিরতির সময় অনেকে আমাকে চিনে ফেলেন। আমি সেখান থেকে কোনোমতে পালিয়ে মিঠুনের মোটরসাইকেলের পেছনে এসে বসি। এদিকে মিঠুনের মোটরসাইকেল কিছুতেই স্টার্ট নিচ্ছে না। হ্যালো ব্রাদার ছবির সেই মোপেডের দৃশ্যের মতো। তবে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম যে দর্শকদের ছবিটা পছন্দ হচ্ছে। আমার জীবনের এটা অন্যতম খুশির মুহূর্ত ছিল। যা–ই হোক, সেখান থেকে পালিয়ে সোজা ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ থিয়েটারে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি, সানি দেওলের আগ কা গোলা ছবিটা চলছে। ছবিটার পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান। ডেভিডকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। আমি একবার ওর কাছে কাজ চাইতে গিয়েছিলাম। আর তখনই একটা দুর্ঘটনায় আমার কাঁধে এবং চোখে আঘাত লেগেছিল। আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল। তখন ডেভিড আমাকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ডেভিড আমাকে তখন বলেছিল, ‘আমার কাছেই কাজ নেই। আমি আবার কী কাজ দেব।’ আমি তখন ওকে জানাই যে আমার একটা ছবি আসছে। তখন নিশ্চয় ডেভিড মনে মনে ভেবেছিল যে সানি দেওলের সামনে আমার কী হালত হবে। আসলে ডেভিডের কাছে ওর ছবির প্রতিক্রিয়া জানতে যাই, কারণ ও আমার বন্ধুর মতো ছিল। দরজা খুলে ঢুকতেই ডেভিড আমাকে বলে, ‘আমার তো (ছবি) অবস্থা খারাপ।’ তখন ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকমই সম্পর্ক ছিল। আমরা একে অপরের খুব আপন ছিলাম। তখনকার মানসিকতা ছিল যে আমার ছবি চলেনি তো কী হয়েছে, ওর ছবিটা যেন চলে। এখন তো প্রচণ্ড রেষারেষি।

প্রশ্ন: ‘লাভযাত্রী’র সঙ্গে আপনার নাম জুড়ে আছে। এটা কি কোথাও আয়ুশের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে?

সালমান: এই কারণেই আমি ছবি থেকে নিজেকে একটু দূরেই রেখেছিলাম। কিন্তু আমার বোন অর্পিতার কোথাও যেন মনে না হয় যে আমি আয়ুশকে সাপোর্ট করিনি। আমি আমার প্রযোজিত সব ছবির নায়ক-নায়িকাকে সাপোর্ট দিয়েছি। হিরো ছবিতে তো আমি গান পর্যন্ত গেয়েছি। আর গানটা হিটও করেছিল। আর আমি মনে করি না যে আমার নাম জুড়লেই ছবিটা হিট করবে। আমি অনেকবার শুনেছি, ‘ভাই, আপনি শুধু পাশে একবার দাঁড়ান ছবিটা তরতরিয়ে চলবে।’ (সশব্দে হেসে) অনেক ছবিতে নাচ করেছি। একটা পুরো দৃশ্যে আমি ছিলাম। এরপরও ছবিটা চলেনি।

প্রশ্ন: অভিনেতা হিসেবে আয়ুশের মধ্যে আপনি কী কী গুণ দেখেছেন?

সালমান: আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা আসেন, তাঁরা প্রায় সবাই প্রতিভাবান হন। আর তাঁরা নিজেদের জায়গায় ভালো কাজই করেন। তবে প্রত্যেকের নিজেদের ভাগ্য আছে। যে যার নিজের ভাগ্যে ওপরে ওঠেন। আমি যখন ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া ছবিটি করেছিলাম, তখন ভাবিনি আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছাব। তারকার সন্তান বা সেই পরিবার থেকে উঠে এলেই যদি অভিনেতা হওয়া যেত, তাহলে আরবাজ আজ অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেত। আরবাজ প্রযোজক, নির্দেশক, এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানির মালিক হিসেবে ভালো কাজ করছে। অনেক দিন আগে সোহেল জিমে আয়ুশকে আবিষ্কার করেছিল। আমি না হলে অন্য কেউ আয়ুশকে লঞ্চ করত। ও প্রচণ্ড পরিশ্রমী। আর নাচটাও খুব ভালো করে। আমি আগেই আয়ুশের নাচ দেখেছিলাম। আমি জানতাম, এখানেও ‘স্বজন পোষণের’ কথা উঠবে। কিন্তু হরিয়ানার একজন রাজনীতিবিদের ছেলে (আয়ুশ) কীভাবে ‘স্বজনপ্রীতি’-এর শিকার হয়। অন্য পেশার ক্ষেত্রে কিন্তু ‘স্বজনপ্রীতি’–এর প্রসঙ্গ ওঠে না। বলিউড একমাত্র জায়গা, যেখানে প্রতিভা ছাড়া চলে না। এখানে দর্শকই শেষ কথা। দর্শকই একজন অভিনেতাকে সুপারস্টার বানান বা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা দেখেন না আপনি কার সন্তান বা কার ভাই। বলিউড স্বজনপ্রীতিতে নয়, প্রতিভাতে চলে।

লাভযাত্রী ছবিতে ওয়ারিনা হুসেন ও আয়ুশ শর্মা


প্রশ্ন: ছবির নাম ‘লাভরাত্রি’ থেকে ‘লাভযাত্রী’ হলো। এই বিবাদ নিয়ে আপনি কী বলতে চান?

সালমান: আমার কোনো রকম সমস্যা নেই। লাভযাত্রী নাম নিয়ে কারও যদি কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে বদলে দেব। ছবি কখনো তার নামে চলে না।

প্রশ্ন: আপনার প্রযোজিত এই ছবিতে ‘গরবা’ ঘিরে সম্ভবত ছবির গল্প বোনা হয়েছে। ‘গরবা’ বলতে আপনার স্মৃতিতে কী ভেসে আসে?

সালমান: (সশব্দে হেসে) ‘গরবা’ বলতে আমার ফাল্গুনী পাঠকের নাম প্রথম মাথায় আসে। ওর সঙ্গে আমি অনেক অনুষ্ঠান করেছি। ফাল্গুনী এই ঘরানায় দুর্দান্ত। এ ছাড়া হাম দিল দে চুকে সনম ছবির ‘ঢোলি তারে’ গানটির কথাও মাথায় আসে।

প্রশ্ন: কলেজজীবনে আপনি ‘গরবা’ খেলতেন?

সালমান: আমার বাড়িতে সব ধরনের উৎসব পালন করার রেওয়াজ আছে। এমন কোনো উৎসব নেই যে আমরা পালন করি না। আমরা উৎসব পালন করার ছুঁতো খুঁজি। আর উৎসব না থাকলে আমরা নতুন কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: আয়ুশ এবং অন্য নবাগতদের উদ্দেশে কী বলতে চান?

সালমান: আমি বলতে চাই, প্রত্যেকে ভালো ভালো কাজ করুক। কাজ ছাড়া থাকলেও চলবে। কিন্তু ভালো কাজ করা জরুরি। তবে এটা জরুরি নয় যে শুধু ছবিতে কাজ করতে হবে। টেলিভিশনসহ আরও অনেক মাধ্যম আছে। সেখানেও তারা কাজ করতে পারে। টিভিতে মাত্র এক বছর কাজ করে অনেকে মুম্বাইতে তিন থেকে চার বেডরুমের ফ্ল্যাট নিয়েছে। টেলিভিশনের বিস্তার অনেক দূর।