Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংকার থেকে নায়ক হয়ে যিনি জিতেছিলেন কোটি হৃদয়

প্রথম আলোর ক্যামেরায় বুলবুল আহমেদ। ২০০৯ সালে তোলা ছবি।

‘আমি তাঁকে ডাকতাম ভদ্র নায়ক বলে। শুধু আমি কেন, পুরো চলচ্চিত্রের মানুষই তাঁকে ভদ্র মানুষ বলে জানেন।’ ২০১০ সালে ১৫ জুলাই বুলবুল আহমেদের মৃত্যুর পর প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক।

প্রকৃতির নিয়মে বুলবুল আহমেদ ও রাজ্জাক, কেউ এখন নেই। তাঁরা চলে গেছেন চিরদিনের মতো। মৃত্যুকে জয় করা যায় না, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে মৃত্যুই শেষ কথা নয়। তাঁরা বেঁচে থাকেন তাদের কাজে, প্রিয়জন আর অনুসারীদের স্মৃতিতে। ফিরে আসেন বারবার। আজ ১৫ জুলাই যেমন ফিরে এসেছেন বুলবুল আহমেদ। ২০১০ সালের এই দিনে যার মৃত্যু হয়।

সুদর্শন নায়ক হিসেবে যে কয়জন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছেন, তাদের অন্যতম বুলবুল আহমেদ।

বেদনা মিশ্রিত ভালোবাসায় পরিবারের সদস্য, অনুরাগীরা স্মরণ করছেন বুলবুল আহমেদকে। খবরের কাগজে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ ফুটে উঠছে চিরচেনা বুলবুল আহমেদের মুখখানি। চশমা চোখে গোলগাল মুখখানি। কোনটিতে স্মিত হাসি। যেন তিনি এখনো জাগতিক ভ্রমণের পথিক, হাঁটছেন নায়কের মতো। বাংলার নায়ক, যাকে বলা হতো ‘মহানায়ক’। সবাই ডাকতেন ‘দেবদাস’।

কণ্ঠস্বর ছিল বলিষ্ঠ, সুদৃঢ়। উত্তম কুমার, দিলীপ কুমারের বেশ ভক্ত ছিলেন বুলবুল আহমেদ; তাঁদের আদলে চুলের ছাঁট দিতেন। ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি এই স্টাইল অনুসরণ করেছেন। সাদাকালো দেবদাস যুগ পেরিয়ে রঙিন মহানায়ক চলচ্চিত্রের মতোই তিনি সময় থেকে সময়কে জয় করেছেন স্বমহিমায়। সুদর্শন নায়ক বলতে যে কয়জন সত্তর-আশির দশকে বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছেন, তরুণীদের স্বপ্নের মানুষ হয়েছেন, তাদের অন্যতম বুলবুল আহমেদ।

বছর ত্রিশেরও আগের কথা। আশি দশকের শেষের দিকে। পুরান ঢাকার হাটখোলা রোডের এক বাসায় থাকতেন বুলবুল আহমেদ। ৮৬ সাল থেকে এই এলাকায় সপরিবারে তাঁর বাস। প্রায় দেখতাম তাঁকে। তখন তিনি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় নায়ক। অথচ কী সাধারণ জীবনযাপন! সেই সময়কার হাটখোলা এলাকার এক পান দোকানির সঙ্গে কথা হলো আজ সোমবার। বুলবুল আহমেদের প্রসঙ্গ আসতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সোহরাব হোসেন। বললেন, ‘আহা, দেবুদা! খুব একটা পানের অভ্যাস ছিল না, তবে আমার দোকান থেকে একটা পান খেতেন। সব সময় কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কোনো দেমাগ ছিল না লোকটার।’

রাজ্জাকের সুরেই গতকাল কথা বললেন বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন এই অভিনেতা এক তরুণ সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বুলবুল আহমেদ শুধু ভদ্রলোকই নন, একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন। এখন তো তাঁকে সরাসরি পাওয়া যাবে না, তাঁর সিনেমা দেখো।’ এ সময় এটিএম শামসুজ্জামানের হাতে ছিল বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা পদক, চোখে ছিল অশ্রু।

বিটিভির আলোচিত নাটক দক্ষিণের জানালা, এই সব দিনরাত্রিতে বুলবুল আহমেদের সহশিল্পী ডলি জহুর প্রথম আলোকে দেওয়া স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘বেশ পরিপাটি মানুষ ছিলেন বুলবুল ভাই। সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেন। নিপাট ভদ্র লোক, কাজের ফাঁকে মজা করতেন, গল্প শোনাতেন।’

দেবদাস ছবির শুটিংয়ে বুলবুল আহমেদ ও কবরীকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন চাষী নজরুল ইসলাম।

হওয়ার কথা ব্যাংকার
নিপাট ভদ্রলোকটির হওয়ার কথা ছিল ব্যাংকার। কাজ শুরুও করেছিলেন ব্যাংক জগতে। সে গল্প জানার আগে আরেকবার শুনে আসি তাঁর বুলবুল আহমেদ হয়ে ওঠার গল্পটা। ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকার আগামসিহ লেনে বুলবুল আহমেদের জন্ম। এক ভাই ও ছয় বোনের পর তাঁর জন্ম। ভালো নাম রেখেছিলেন তাবারক আহমেদ। বাবা-মায়ের বড় আদরের সন্তান। তাই বাবা-মা আদর করে ডাকতেন ‘বুলবুল’।

বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সংস্কৃতিমনা ছিলেন। বাড়িতেই নাটকের মহড়া করতেন। বাবা খলিল আহমেদ একই সঙ্গে নাটকে অভিনয় করতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। আড়াল থেকে, কখনো জানালা কখনোবা দরজার ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এই মহড়া দেখতেন ছোট ছেলে বুলবুল আহমেদ। এই আসর থেকেই তিনি অভিনয়ের অনুপ্রেরণা পান। এই মহড়ার সুবাদে অনেক নামীদামি শিল্পীদের তিনি তাদের বাড়িতে আসতে দেখেছেন, যাদের সঙ্গে পরবর্তীতে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মাঝে কাজি খালেক, মহম্মদ আনিস, আয়েশা আক্তার, রানি সরকার, নারায়ণ চক্রবর্তীর নাম শোনা যায়।

পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় ছিল মাহবুব আলি ইনস্টিটিউশন, যেখানে খলিল আহমেদের নাটক মঞ্চস্থ হতো। বুলবুল আহমেদ এই নাটকগুলো দেখতে যেতেন সব সময়। বুলবুল আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘ছোটবেলায় অভিনেতা হব এটা ভাবিনি, কিন্তু আমার মনে হয় এসব বিষয় আমার অবচেতন মনে গভীর ছাপ ফেলে। এর ফলেই পরবর্তীতে অভিনেতা হিসেবে আমার পদচারণা। আমি মনে করি জন্মগত প্রতিভা না থাকলে অভিনেতা হওয়া যায় না। অনুকূল পরিবেশ ও পারিবারিক পরিমণ্ডলও অবশ্যই প্রভাব ফেলে।’

এই সব দিনরাত্রি নাটকে বুলবুল আহমেদ ও ডলি জহুরকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন মুস্তাফিজুর রহমান।

একসময় ঢাকায় কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘শ্যামলী শিল্পী সংঘ’ নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী গঠন করেন। নীহার রঞ্জন গুপ্তের ‘উল্কা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করার মধ্য দিয়ে এই সংঘের যাত্রা শুরু হয়। এই বিখ্যাত নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে, যেখানে বুলবুল আহমেদ ‘সুবীর’ চরিত্রে অভিনয় করেন। বুলবুল আহমেদ ছাড়াও সে সময় এই নাট্যগোষ্ঠীর হাত ধরে গৌরবের স্বাক্ষর রেখেছেন সৈয়দ আহসান আলি সিডনী, আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম, নাজমুল হুদা বাচ্চু, কেরামত মওলা প্রমুখ। নাজমুল হুদা বাচ্চু ও আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম এই দুজন প্রথিতযশা শিক্ষাগুরুর কাছে গভীর নিমগ্নতায় ডুবে থেকে একটু একটু করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন বুলবুল আহমেদ। অভিনয়ের আকুলতা নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন মঞ্চ থেকে মঞ্চে, এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে, ঢাকা কলেজ থেকে এমসি কলেজ সর্বত্র। একপর্যায়ে ষাট দশকের সাড়া জাগানো নাট্যদল ‘ড্রামা সার্কেল’-এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অভিনয়ের দক্ষতা আরও প্রসারিত হয় ‘ইডিপাস’ ও ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’ নাটক দুটির মধ্য দিয়ে।

লেখাপড়ায় বরাবরই সচেতন ছিলেন বুলবুল আহমেদ। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করে ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দেন। মাঝে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। জানা যায়, সিলেট এমসি কলেজে থাকাকালে মঞ্চনাটক চিরকুমার সভায় কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি। ব্যাংকের শাখা প্রধান হিসেবে চাকরি করেন টানা ১০ বছর।

অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ছোটপর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে। টেলিভিশনে বুলবুল আহমেদের প্রথম নাটক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘পূর্বাভাস’। ‘ইডিয়েট’ নাটকটির জন্য তিনি দর্শক হৃদয়ে আজও এক দুর্লভ স্থান অধিকার করে আছেন। যেকোনো নাটকে অভিনয়ের সময় বুলবুল আহমেদ নাটকের চরিত্রের ভেতর মিশে যেতেন।

স্ত্রীসহ দুই জনপ্রিয় নায়ক রাজ্জাক ও বুলবুল আহমেদ।

টেলিভিশনে বুলবুল আহমেদের নাট্যজীবন শুরু হয় নাট্যগুরু আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের হাত ধরে। অভিনেতা হিসেবে সত্যিকার অর্থে পথ চলা শুরু ১৯৬৮ সালে ‘পূর্বাভাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘ইডিয়ট’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘টাকায় কি না হয়’, ‘মালঞ্চ’, ‘হৈমন্তী’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘সারাদিন বৃষ্টি’, ‘রূপনগর’, ‘সারাবেলা’—এ রকম প্রায় তিন শতাধিক নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। জহির রায়হানের উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’-তে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন তিনি। ‘কায়েসের’ চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করায় পরবর্তীতে জহির রায়হানের উপন্যাস নিয়ে করা সব নাটকে তিনি সুযোগ পেতে থাকেন। ‘দূরদর্শিনী’ নাটকে বুলবুল আহমেদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ডেইজি আহমেদও সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী দিনে নাটকটি প্রচারিত হয়।

সে সময় একমাত্র বুলবুল আহমেদই ছিলেন এক নাটকে দুটি ভিন্ন সময়ে দুটি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয়কারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ নাটকটিতে শুরুতে অপুর ভূমিকায় এবং পরবর্তী জীবনে হৈমন্তীর বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’-তে অভিনয় করেও অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি, যা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। হুমায়ুন আহমেদের নাট্য গল্পে ‘শফিক’ চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তাঁর অভিনয় এত ভালো হয়েছিল যে দীর্ঘদিন দর্শকদের মুখে তিনি শফিক নামে ঘুরে ফিরে আসছিলেন।

আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম ছিলেন বুলবুল আহমেদের নাট্যগুরু। অভিনয়ের জানা-অজানা নানা বিষয়ে গুরুর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন তিনি। মঞ্চ থেকে মঞ্চে দৌড়ানোর সেই সময় গুরু তাঁর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, যদি কখনো তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তবে সেখানে বুলবুল আহমেদকে অভিনয় করতে হবে। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই ১৯৭৩ সালে ‘ইয়ে করে বিয়ে’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে রুপালি পর্দায় যাত্রা শুরু হয়।

স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বুলবুল আহমেদ।

মঞ্চ থেকে ছোট পর্দায় হয়ে বড় পর্দায়
টেলিভিশন নাটক ‘এপিঠ ওপিঠ’-এর চলচ্চিত্ররূপ ছিল এই ‘ইয়ে করে বিয়ে’। রুপালি পর্দায় প্রবেশের সময় শিষ্যের নাম পাল্টে ‘বুলবুল’ রাখলেন পরিচালক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অঙ্গীকার’-এ নায়ক হিসেবে অভিনয়ের পাশাপাশি কার্যনির্বাহী প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। এই চলচ্চিত্রেই কবরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই জুটি পরবর্তীতে আরও অনেকগুলো কাজ করে প্রশংসিত হয়।

শখের অভিনয়, নেশা থেকে পেশায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। ১০ বছরের ব্যাংকিং পেশা ছেড়ে দিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে অভিনয়ে নেমে পড়েন বুলবুল আহমেদ। সে সময় ‘জীবন নিয়ে জুয়া’ সিনেমাটির মধ্য দিয়ে ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই জুটি আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা করেন। ১৯৭৬ সালে আলমগীর কবির পরিচালিত ‘সূর্যকন্যা’ সিনেমাটিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জহির রায়হান পুরস্কার লাভ করেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো—‘রুপালি সৈকতে’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘মোহনা’, ‘মহানায়ক’, ‘পুরস্কার’, ‘সোহাগ’, ‘বৌরানী’, ‘ঘর সংসার’, ‘বধূ বিদায়’, ‘ছোট মা’, ‘আরাধনা’, ‘সঙ্গিনী’, ‘সময় কথা বলে’, ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’, ‘শেষ উত্তর’, ‘স্বামী’, ‘ওয়াদা’, ‘গাঙচিল’, ‘কলমিলতা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দেবদাস’, ‘ভালো মানুষ’, ‘বদনাম’, ‘দুই জীবন’, ‘দিপু নাম্বার টু’, ‘ফেরারি বসন্ত’, ‘দ্য ফাদার’, ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’ প্রভৃতি।

স্রোতে গা ভাসাননি বুলবুল আহমেদ
সে সময়টা বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ। একটার পর একটা হিট ছবি, একাধিক নায়কের জয়জয়কার। বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে নির্মাতারা অনেকেই দেশি-বিদেশি গল্পের ছবি করতে থাকলেন। তবে বুলবুল আহমেদ তথাকথিত কপিরাইট বা অনুকরণ করা গল্পের স্রোতে গা ভাসাননি। তিনি সব সময়ই মৌলিক ছবিকে প্রাধান্য দিতেন। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো তাঁর সমসাময়িক অন্য নায়কদের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাঁর চলচ্চিত্রগুলোতে দর্শক শুদ্ধ রুচির পরিচয় পেতেন, সমৃদ্ধ হতো বিনোদনের মানসিকতা। সেই ব্যতিক্রমী ভাবনার তৃষ্ণা নিয়ে নিজে চিত্রনাট্যও করতেন প্রায় সময়, নেমেছিলেন পরিচালনাতেও। আর পরিচালক বুলবুল আহমেদ সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী কয়েকটি চলচ্চিত্র।

অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৭ সালে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ১৯৭৮ সালে ‘বধূ বিদায়’, ১৯৮০ সালে ‘শেষ উত্তর’ ও ১৯৮৭ সালে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

হলো না যথাযথ মূল্যায়ন
২০০৮ সালের ১০ জুলাই প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেবদাস প্রসঙ্গে বুলবুল আহমেদ বলেছিলেন, ‘সত্যি বিয়োগান্তক এক কাহিনি। দেবদাসের জীবনের শেষ যে পরিণতি, আজ আমিও নিজের বেলায় সে রকমই অনুভব করছি অনেকটা। অভিনয়-অঙ্গনের চেনা-জানা মানুষের কারও দেখাই আর মেলে না।’

অভিনয়ের জন্য বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।

এখন বুলবুল আহমেদেরই দেখা মেলে না। তাঁকে পাওয়া যায় না কোনো আয়োজনে, প্রয়োজনে। ছবি হয়ে আছেন তিনি নিজ বাসভবনের দেয়ালে, অগণিত ভক্তদের অন্তরে। যদিও ভক্তদের মনে আফসোস থেকে যায়, আজ পর্যন্ত একুশে পদক বা এ ধরনের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি গুণী এই অভিনেতাকে। এফডিসিতে ঘুরে মেলেনি তাঁর কোনো স্মৃতিচিহ্ন। একজন সফল অভিনেতার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো স্মরণ করতে না পারার দৈন্য সত্যি হতাশার, এমনটাই বলছেন অনেকে।

যখন বুলবুল আহমেদ শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে ব্যাংকে চাকরি করতেন।