Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারত রঙ্গ মহোৎসবে দুই নাটক

ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি নাটকের দৃশ্য

ধসে পড়া কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে তারাভান। নড়ার উপায়টুকুও নেই। এই কি জীবনের শেষ সময়? জানে না সে। সেই সময়েই তার পুরো জীবন যেন ভেসে ওঠে চোখের তারায়। জীবনের পাওয়া না–পাওয়ার হিসাব মিলিয়ে নেয়। শুধু তারাভান তো নয়, তারই মতো শত শত তারাভানের স্বপ্ন জলাঞ্জলি হয়ে যায়। কেউ এভাবেই মরে যায়। কেউ বেঁচে থাকে মুনোফালোভী মালিকদের আজ্ঞাবহ দাস হয়ে।

ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি

গার্মেন্টস দুর্ঘটনার চিত্র নিয়ে নাটক ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি। ২০০৫ সালে সাভারের পলাশবাড়িতে ধসে পড়ে স্পেকট্রাম সোয়েটার অ্যান্ড নিটিং ফ্যাক্টরি। সে সময় রাতের শিফটে কাজ করা অনেক কর্মী মারা যান। এ ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে প্রাচ্যনাটের নাটকটি। সম্প্রতি প্রাচ্যনাট ঘুরে এল ভারতের বিখ্যাত নাট্যোৎসব ‘ভারত রঙ্গ মহোৎসবে’। ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার (এনএসডি) আয়োজনে ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে এই উৎসব। শেষ হবে আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি।

২১তম মহোৎসবে ৮ ফেব্রুয়ারি ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি মঞ্চায়িত হয়। শুধু মঞ্চায়ন নয়, নাটক নিয়ে আলোচনাও হয় সেখানে। নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম ও তারাভান চরিত্রের অভিনয়শিল্পী পারভীন সুলতানাও অংশ নেন দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে। এ ছাড়া ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তরখন্ডের দেরাদুনেও একটি প্রদর্শনী হয়। নাটকটি নিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘আপাত–আধুনিক এই স্থাপন দখল করা পাবলিক খাল-ডোবা রাতারাতি ভরাট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল, মেশিন বসল, রপ্তানিমুখী পোশাক তৈরি শুরু করে দিল। গভীর রাতে নির্মাণ ত্রুটির কারণে ইমারতটি এক দিকে হেলে হেলে অবশেষে এক ধ্বংসস্তূপ। ব্যাপক তথ্যের যুগে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদিতে শুধু লাগাতার ধ্বংস, মৃত্যু আর আহাজারির ছবি, তথ্যের বন্যা। তথ্য ঝড়ের ভেতর ছিল কিছু সযতনে রাখা “স্বপ্নমুষ্টি”। কেউ ছুটিতে বাড়ি যাবে, কেউ মাস গেলে মা হবে, হবে বাবা, কেউ সকাল হলেই হলুদবরন কন্যা সেজে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। এত সব মানুষের “স্বপ্নমুষ্টি” কেমন আদরে সঞ্চয় করেছিল হৃদয়ের গহিন মণিকোঠায়। এই নয়তলা কংক্রিট ধসে পড়া আদতে লোভী, কুৎসিত কিছু অর্থান্বেষী সারমেয়র বিপরীতে কিছু মানুষের স্বপ্নের অন্তিম যাত্রার প্রতীক হয়। অপূর্ণ সেই স্বপ্ন ধরার চেষ্টা ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি কি রচনা কি নির্মাণে।’

উৎসবে অংশগ্রহণ একটা ভিন্নমাত্রা দিয়েছে বলে মনে করেন নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে সত্যিকারের একটা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। ভারতেই নানা ভাষা, সংস্কৃতি ও নিজস্ব থিয়েটার আছে। এর বাইরেও শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আমেরিকান থিয়েটার, ইউরোপীয় থিয়েটার অংশগ্রহণ করে—এটা সত্যিকার অর্থে একটা বিরাট মিলনমেলা। প্রতিটি প্রদর্শনীর পরে ডাইরেক্টরস মিট বলে একটা আয়োজন হয়। সেখানে দর্শক, সাংবাদিক, নাট্যকর্মী, এনএসডির শিক্ষার্থী–শিক্ষকেরা আসেন। তাঁরা নানা প্রশ্ন করেন নাটকটি নিয়ে। ওঁদের মতামত ও দর্শন বলে, প্রযোজনা নিয়ে আরও জানতে চায়, আমরা বলি। এই আদান–প্রদানটা অদ্ভুত লাগে। আমরা দেরাদুনেও শো করেছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ওখানেও পাঁচজন লোক বাংলায় আমাকে প্রশ্ন করল। বাংলা ভাষী অনেক লোক ওখানে থাকে। ওখানে একজন রাশিয়ান নির্দেশকের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি সাইকোফিজিক্যাল থিয়েটার নিয়ে কাজ করেন। নাটকটি দেখে খুব আবেগাপ্লুত হয়ে যান। তিনি আমাদের বলছিলেন যে তিনি কী মেসেজ দেবেন দেশে গিয়ে। কারণ, তাঁরা তো “মেড ইন বাংলাদেশ” লেখা কাপড় পরেন। এ ধরনের ইন্টার​্যাক্টিং ব্যাপার ছিল।
শুধু তা–ই নয়, এই ধরনের উৎসবে গেলে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদেরও ভালো করার আগ্রহ তৈরি হয়।’

মৃত্যুঘর নাটকের দৃশ্য

নাটকটি রচনাও করেছেন আজাদ আবুল কালাম। অভিনয়ে ছিলেন মোহাম্মদ রফিক, পারভীন সুলতানা, পারভীন পারু, ফরহাদ আহমেদ, প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ, শাহরিয়ার রানা, তানজি কুন। ভিডিওতে ছিলেন সাইফুল জার্নাল, আলোতে মোখলেসুর রহমান এবং ইনস্টলেশনে এ বি এস জেম।

আরও ছিল মৃত্যুঘর

এ ছাড়া এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছে মৃত্যুঘর নামে একটি নাটক। আতিক রহমানের অনুবাদে এটি নির্দেশনা দিয়েছেন মুকুল আহমেদ। লন্ডনভিত্তিক মুকুল অ্যান্ড ঘেট্টু টাইগার্স নামের দলের বাংলাদেশি শাখা এই বাংলা প্রযোজনাটি তৈরি করেছে। দলটি বাংলা নাটককে গুরুত্ব দিয়ে থিয়েটার চর্চা করে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও নাটক নির্মাণ করে। তাদের উদ্দেশ্য থিয়েটারকে দেশের গণ্ডির বাইরে নিয়ে আসা। আমেরিকাতেও তাদের একটি শাখা খোলার কথা চলছে। তাদের উদ্যোগে সেখানে বাংলা নাটকের চর্চা করা হবে। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন কলকাতার কিছু অভিনয়শিল্পী, আর শব্দ ও আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন মির্জা শাখেছেপ সাকিব।