Thank you for trying Sticky AMP!!

'মনেই হয়নি শাবনূর নায়িকা হতে পারবে'

১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় শাবনূর অভিনীত প্রথম ছবি সেই `চাঁদনী রাতে`। ছবি সংগৃহীত।

নতুন ছবির জন্য পাত্রপাত্রী খুঁজছিলেন গুণী নির্মাতা এহতেশাম। একাধিক ছবিতে নতুন নায়ক–নায়িকার অভিষেক ঘটানো এই নির্মাতার অফিসে একদিন বাবাকে নিয়ে হাজির হন নূপুর নামের একটি মেয়ে। তাঁর ইচ্ছা ছবিতে অভিনয় করার। তাঁরা শুনেছেন এই নির্মাতা নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুটিং করেন। তাই এই অফিসে আসা। স্কুলে পড়া ১২ কি ১৩ বছর বয়সের মেয়েটিকে প্রথম দেখায়ই পছন্দ হয় নির্মাতার। নূপুরের মধ্যে গল্পের সেই মেয়েটিকে পেয়ে যান এহতেশাম। বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ানো। এ জন্য বাপের কাছে অভিযোগও কম আসে না, এমন পাণ্ডুলিপির দুরন্ত সেই কিশোরী মেয়েটিকে হিরোইন হওয়ার জন্য যা যা দরকার, নির্মাতা তার জন্য দুই বছরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে শুরু হয় 'চাঁদনী রাতে' ছবির শুটিং।

২৭ বছর আগে ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় শাবনূর অভিনীত প্রথম ছবি সেই 'চাঁদনী রাতে'। শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। এই ছবিতে চলচ্চিত্রনির্মাতা এহতেশাম তাঁর নাম বদলে রাখেন শাবনূর। এই অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন নায়ক শাব্বীর। সেই সময়ে বিভিন্ন কারণে আলোচিত ছবিটি মাছরাঙ্গা টিভির ঈদ আয়োজনের সপ্তম দিন আজ রাত ১১টায় প্রচারিত হবে।

শাবনূর। ছবি সংগৃহীত।

এহতেশামের পুত্রবধূ রাফাত রহমান বলেন, 'আমরা তখন নিউ ইস্কাটনের নূর নগরে থাকতাম। আমার শ্বশুর “চাঁদনী রাতে” ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। হঠাৎ একদিন বাসায় এসে খুব খুশি। পরে জানলাম, তিনি নতুন একটি মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন। আমরা আগ্রহ নিয়ে মেয়েটিকে দেখতে চেয়েছিলাম। একদিন আমাদের বাসায় এলেন সেই মেয়েটি। আমরা প্রথম দেখায়ই খুবই হতাশ হয়েছিলাম। স্কুলে পড়া সাধারণ একটা মেয়ে। বয়সে ছোট। হ্যাংলা–পাতলা। দেখে কোনোভাবেই মনে হতো না শাবনূর নায়িকা হতে পারবে। কিন্তু শাবনূরের একটা গুণ ছিল, ও যখনই কস্টিউম পরত তখন ওকে আর স্বাভাবিক মনে হতো না। একদমই নায়িকা মনে হতো। ওর চোখ, ড্রেসআপ দেখে আমরা সবাই সারপ্রাইজড হতাম। আমার শ্বশুর (এহতেশাম) বলতেন, “দেখো আমার চোখ ঠিক মুক্তা খুঁজে বের করেছে”।'

এই ছবির নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজা বলেন, 'শাবনূরকে এহতেশাম দাদু এই ছবির জন্য দুই বছর ধরে তৈরি করেছেন। ওর নাচ, অভিনয়, বাচনভঙ্গি সব গ্রুমিং করে শুটিং গিয়েছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দাদা সন্তুষ্ট না হতেন, ততক্ষণ শুটিংয়ে যেতেন না। শাবনূর আগে থেকেই ভালো নাচত। তাকে কোনো কিছুই একবারের বেশি দেখিয়ে দিতে হতো না। ও কষ্ট হলেও নাচ তুলত। কোনো কিছুতেই ওর মধ্যে না শব্দ ছিল না। আমরা যখন “চাঁদনী রাতে” ছবির শুটিংয়ে যাই তখনই এহতেশাম দাদু বলেছিলেন, “এই মেয়ে ভালো করবে”।' তিনি ছবির শুটিংয়ের সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে আরও বলেন, 'আমরা দুর্গাপুরের একটি গ্রামে শুটিং করেছি। তখন হাজার হাজার মানুষ শুটিং দেখত। সবাই শাবনূরের অটোগ্রাফ নিতেন। শাবনূরের মধ্যে কোনো বিরক্তি ছিল না। সে সবাইকে অটোগ্রাফ দিত। সবার সঙ্গে কথা বলত। সে কখনো নিজেকে হিরোইন ভাবত না। প্রতিদিন আমাদের বিকেলে নাশতা বানিয়ে খাওয়াত। ও এখনো খুবই ভদ্র।'

`চাঁদনী রাতে` ছবির পোস্টারে শাবনূর।

শুটিং সেট কিংবা বাসা বা বাইরে, যেখানেই দেখা হতো এহতেশামকে 'দাদু দাদু' বলে অস্থির করে ফেলতেন অভিনেত্রী শাবনূর। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হাজির হতেন দাদুর কাছে। শাবনূর বলেন, 'শুরুর দিকে আমি রোগাপাতলা ছিলাম। আমাকে নিয়ে ছবি বানালে ওই ছবি নাকি চলবে না, সে জন্য অনেকেই চাইছিলেন না দাদু আমাকে তাঁর ছবিতে নায়িকা হিসেবে নিক। কিন্তু আমার ওপর দাদু আস্থা রেখেছিলেন। সেই প্রথম ছবি “চাঁদনি রাতে” দিয়ে দাদু আমাকে ভক্তদের কাছে শাবনূর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন।'

শাবনূরের প্রথম এই 'চাঁদনী রাতে' ছবিটি সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। তবে এই ছবিই শাবনুরকে দিয়েছে সফল হওয়ার মন্ত্র। ব্যর্থতাকে হারিয়ে শাবনূর ক্রমে হয়ে ওঠেন বাংলা ছবির প্রথম সারির নায়িকা। অভিনয়গুণে সব ধরনের চরিত্রেই সহজে মানিয়ে নিতেন নিজেকে। অসংখ্য ছবিতে দর্শকদের কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এই নায়িকার ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল হয়। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন শাবনূর ও অনিক মাহমুদ। বিয়ের পরের বছরই ২৯ ডিসেম্বর এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে ছেলেসন্তান। তাঁর ছেলের নাম আইজান নিহান। চলতি বছরে বনিবনা না হওয়ার কারণেই সংসারে ইতি টানেন।