Thank you for trying Sticky AMP!!

মিনারের স্বপ্ন

মিনার ছবি: খালেদ সরকার

চোখে রোদচশমা, পায়ে কেডস, গায়ে খয়েরি রঙের শার্ট, শার্টের কিছুটা চলে গেছে জিনসের ভেতরে। এমন ধোপদুরস্ত আবরণে দুটো হাত পেছনে রেখে যখন খোলা মঞ্চে হেঁটে হেঁটে এলেন মিনার, তখনো ঠিক টের পাওয়া যায়নি একটু পর তাঁর গানে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে একাকার হবে সবাই। ‘আমি কী দেখেছি হায় একলা পথে দাঁড়িয়ে/ সে ছিল দূরে দূরে তাকিয়ে/ আহা রে আহা রে কোথায় পাব তাহারে’।
সত্যিই তাই। সেন্ট যোসেফ স্কুলমাঠে ‘কিশোর আলো’র দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শেষ বিকেলের আয়োজন। মঞ্চে মিনার গাইছেন। আর তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে পুরো মাঠজুড়ে আগত হাজার পাঁচেক কিশোর-কিশোরী।
শুধু কি এই গান! এরপর ‘তুমি চাইলে বৃষ্টি/ মেঘও ছিল রাজি/ অপেক্ষা শুধু বাঁধনের/ মাতাল হাওয়া বইছে/ দূরে পাখি গাইছে গান/ বৃষ্টি তোমার আহ্বান’। সবার যেন মুখস্থ এই গানও। মিনারের একক কণ্ঠের গান হয়ে গেল সমবেত সংগীত। এমন দৃশ্য চোখে ভেসে ওঠার পর একটু আগ্রহ নিয়েই কথা বলতে চাইলাম এই তরুণ তুর্কির সঙ্গে।
: আপনার গানগুলো কি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার ভাবনা নিয়েই তৈরি?
: মোটেই না। আমি নিজের জন্য গান করি। প্রজন্ম টার্গেট করে নয়। নিজেই লিখি, নিজেই সুর করি। যখন নিজে তৃপ্ত হই, তখনই গানটি রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেই। তারপর অ্যালবাম।
: কেমন লাগে, যখন আপনার সঙ্গে গাইছে দর্শক-শ্রোতা।
: জোশ চলে আসে। অনুভূতিটা অন্য রকম।
: গান-বাজনাটা কি বাড়ির মানুষদের কাছ থেকেই পাওয়া?
: ঠিক ওইভাবে বলা যায় না। তবে বাবা ছিলেন চাকরিজীবী। বাড়িতে অবসরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান গাইতেন। ছবিও আঁকতেন।
: তাহলে তো কিছুটা বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন বলা যায়। আপনি ছবি আঁকেন?
: আঁকি। ছোটবেলা থেকেই কার্টুন আঁকার দিকে ঝোঁক। ২০০৮ সাল থেকে মাসিক কার্টুন ‘উন্মাদ’-এ কার্টুন আঁকছি। প্রথম আলোর ‘রসআলো’তে ‘ডানপিটে’ সিরিজ কার্টুন এঁকেছি, লিখেছি। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় ‘গাবলু’ নামে একটি কমেডি কার্টুন বই বেরিয়েছে। স্টোরিবোর্ডও আমার। আগামী বই মেলায় ‘গাবলু-২’ বের করার ভাবনাও আছে।
: কার্টুনে নিয়মিত হবেন?
: হতে পারলাম কই। গানের কারণেই কার্টুনে নিয়মিত হতে পারিনি। তবে এটা ঠিক, গান না করলে কার্টুনই আঁকতাম।
: আর কোন কোন বিষয়ে আগ্রহ?
: যেহেতু লেখালেখি করছি। নিজের কার্টুনের স্টোরিবোর্ড নিজেই লিখি। তাই এখন একটা উপন্যাস লিখছি। বিমূর্ত প্রেমের গল্প। উপন্যাসের নাম এখনো ঠিক করিনি। বইটির অঙ্গসজ্জা আমিই করব। আর অনেক দিনের স্বপ্ন, একটা সিনেমা বানাব। থ্রিলারধর্মী সিনেমা। কাহিনি নিজেই লিখব।
: সিনেমা বানানোর প্রতি আগ্রহটা কীভাবে তৈরি হলো?
: আসলে ছোটবেলা থেকেই প্রচুর সিনেমা দেখেছি। হিস্ট্রি, মিসটেরি, হরর—সব ধরনের ছবি দেখা হয়েছে। এ কারণে সিনেমার পোকাটা মাথায় ঢুকে আছে। সিনেমা বানাবই।
: আবার গানের বিষয়ে ফিরে যাই। পরিবার থেকে গানের ব্যাপারে উৎসাহ পান?
: খুব একটা না। আমি পাঁচ বোনের এক ভাই। সবার স্বপ্ন ছিল আমি আর্কিটেক্ট হব। কিন্তু আমি পড়ছি সাংবাদিকতা নিয়ে আইইউবিতে। গান করছি। এ কারণেই হয়তো পারিবারিক সমর্থনটা কম।
মিনার তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন ২০০৬ সালে। ছেলের গান যে তরুণ প্রজন্ম পছন্দ করতে শুরু করেছে, সেটা বাবা দেখে যেতে পারেননি। এ নিয়ে মনে একটা দুঃখবোধ তো আছেই মিনারের। তবুও নানান স্বপ্নে রঙিন হয় তাঁর চোখ। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন মিনার প্রথম গান লিখেছিলেন। কথাটা ছিল এ রকম ‘যেখানে দুঃখ-কষ্ট নেই, সেখানেই বাঁচতে চাই’। ওই বয়সেই এই গানটির সুরও করেছিলেন তিনি। মিনার নিজেকে ঠিক এমন পরিবেশেই দেখতে চান। চান পৃথিবীর সব মানুষই একই স্বপ্ন নিয়ে বাঁচুক।