Thank you for trying Sticky AMP!!

লকডাউনের কবলে সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন, ফাঁকা রায়বাড়ি

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়। ছবি: ফেসবুক থেকে

দাদার শূন্য কাজের ঘর থেকে একটি কাঠের বাক্স পেয়েছিল ছেলেটি। সেখানে থাকত দাদার রং, তুলি আর তেলরঙের কাজে ব্যবহারের জন্য লিনসিড অয়েলের শিশি। উত্তরাধিকারের সেই ধারা পরবর্তীকালে প্রজন্মজয়ী হয়েছিল বালকের হাত ধরেই। ১০০ গড়পার রোডের বাড়ি থেকে।

এই গড়পার রোডের বাড়িতেই তাঁর জন্ম, ১৯২১-এর ২ মে। মায়ের আদরের সেই ‘মানিক’-এর ভালো নাম প্রথমে যা রাখা হয়েছিল, পছন্দ হয়নি নবজাতকের বাবার। পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় ‘সত্যজিৎ’।

সেই বাড়িটা আর পরে রায় পরিবারের ছিল না। বরং আজকের সত্যজিৎ রায় হয়েছেন, কলকাতা শহরের বিশপ লেফ্রয় রোডের প্রথম বাড়িটায়। ঠিকানাটা এমন, ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোড, কলকাতা-৭০০০২০। এই বাড়ি ছাড়িয়ে তিনি বিশ্বজনীন হয়েছেন।

আর এই বাড়িটি হলো রায় পরিবারের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়ের মূল বাসভবন। যেকোনো চলচ্চিত্র নির্মাতা বা জন্য চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এটি একটি তীর্থস্থানের চেয়ে কম নয়। শুধু চলচ্চিত্রই বা কেন, বাংলা সাহিত্যের ফেলুদা বা প্রফেসর শঙ্কুর জন্মও হয়েছিল এই বাড়িটিতেই। ১৯৭০ সালে বাড়িটি কিনেছিলেন সত্যজিৎ। তার আগে ভবনটি পরিচিত ছিল কলকাতা ম্যানশন নামে।

আজ সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনে বহু লোক আসেন এ বাড়িতে। ভিড় করেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন যাঁরা, তাঁর ভক্তরা, এই দিনে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি তাঁদের অবারিত দ্বার। ‘পথের পাঁচালী’র পরিচালককে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন তাঁর গুণমুগ্ধরা। ১০০ বছরের জন্মদিনে অনেক পরিকল্পনা ছিল। বড় করে উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু সময় এখন পক্ষে না! লকডাউনের দাপটে সব পরিকল্পনা মাটি। কলকাতা থেকে প্রচারিত স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলগুলো সকাল থেকে প্রচার করছে, কলকাতার রাস্তাঘাট ফাঁকা। ফাঁকা বিশপ লেফ্রয় রোড। যেখানে আজকের দিনে বসত চাঁদের হাট। আজ একাকী সেই বিখ্যাত রায়বাড়ি। শততম জন্মদিনে হলো না কোনো আয়োজন।

তবে সব মন্দেরও নাকি ভালো দিকও আছে। লকডাউনে থাকাকালে সত্যজিতের পরিবার খুঁজে পেয়েছে তাঁর বহু পুরোনো ছবি, নেগেটিভ। এ অনেক বড় পাওয়া। নিয়ে পড়ে প্রদর্শনী করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের। সে জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হয়, সেটা কারও জানা নেই। অপেক্ষা করতে হবে ভালো দিন, করোনামুক্ত দুনিয়ার জন্য।

আজ সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন। ছবি: ফেসবুক থেকে

আজ রায়বাড়িতে না হোক জন্মদিনের আয়োজন। তাতে কিছু আসে–যায় না অনুরাগীদের। বরং আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নানাজনের লেখায়, ছবিতে ফিরে এসেছেন। তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি আজ ডিজিটাল দুনিয়ায়, টেলিভিশনের পর্দায়। এভাবে ‘পথের পাঁচালী’, ‘গুপিগাইন বাঘাবাইন’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘সোনার কেল্লা’র স্রষ্টা চিরকাল থেকে যাবেন বাঙালির মননে।