Thank you for trying Sticky AMP!!

শুনতে পাওয়ার গল্প, আরও কিছু...

কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরীন। ছবি: খালেদ সরকার

এ বছরের শুরুর দিকের একটি ঘটনা। সেদিন খুব অনিচ্ছায় ঢুকেছিলাম জাতীয় গণগ্রন্থাগারের মিলনায়তনে। কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরীনের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র শুনতে কি পাও? -এর বিশেষ প্রদর্শনী। তত দিনে চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা পুরস্কার জিতে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেখতে বসেই মজে গেলাম! মুখে বলার যোগ্য কোনো ভাষা নেই, চোখজুড়ে বিস্ময়! কামার ও তাঁর চলচ্চিত্রজগৎকে চিনেছি তখন। এর মধ্যেই জেনে গেছি, তারেক মাসুদের শেষ জীবনে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন এই মানুষটি।
শুনতে কি পাও?-এর সূত্রে এর পর থেকে কামার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে একে বিভিন্ন স্বীকৃতি পেয়েই যাচ্ছেন। সম্প্রতি একটি সিনেমার পাণ্ডুলিপির জন্য পেলেন ‘এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার। এ সূত্রে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে ২১ ডিসেম্বর একরকম জোর করেই যাওয়া হলো তাঁর বনানী ডিওএইচএসের বাসায়। কামারের ভাষায়, এটা তাঁদের স্টুডিও।
বাসায় ঢোকার মুখে শিল্পী এস এম সুলতানের ছবি।
‘আমি প্রতিদিন এই ছবিকে সালাম দিই। সুলতানকে নিয়ে তারেক মাসুদের আদমসুরত দেখেছেন আপনি? ওই ছবিতে লাউয়ের মাচার দিকে তাকিয়ে থাকে এক কৃষক। আমি সেই কৃষকের উদ্দীপনা থেকে শক্তি পাই। কারণ, যে কৃষকের জমি উজাড় হয়, সে কিন্তু ত্রাণের অপেক্ষা করে না, ধ্বংসের পর খুঁজে দেখে তাঁর ঘরে কিছু বীজ আছে কি না।’—কামারের কথাগুলো শুনতে শুনতে এর মধ্যে আমরা এসে পড়েছি তাঁর কাজের ঘরে। ঘরের দুপাশের শেলফভর্তি ছবির সিডি, চলচ্চিত্রবিষয়ক বই। এক কোনায় ফ্রেমবন্দী হয়ে তাকিয়ে আছেন তারেক মাসুদ। সেদিকে তাকিয়ে বললেন কামার, ‘আমি তো তাঁর সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি।’ ততক্ষণে ওই ঘরে সারা আফরীনও হাজির—কামারের জীবনসঙ্গী ও ছবির সঙ্গী। আজ আমাদের কথা হবে এ দম্পতির সঙ্গে।
যেহেতু নতুন ছবি ও ছবির গল্প সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা, তাই কথা মূলত চলল শুনতে কি পাও?-কে ঘিরে। কেননা, ছবিটি এর মধ্যেই ফ্রান্সের সিনেমা দুঁ রিলে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ‘গ্রাঁপি’সহ নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। আমন্ত্রিত হয়েছে বিভিন্ন দুঁদে চলচ্চিত্র উৎসবে।
‘আমি ছিলাম তারেক ভাই (তারেক মাসুদ) পরিচালিত কাগজের ফুল ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক। ২০০৯ সালে ছবির কাজ স্থগিত করেন তারেক ভাই। এ সময় আইলা আঘাত হানল দক্ষিণ বাংলাজুড়ে। আমি সেখানে গেলাম। পেলাম ছোট ছোট গল্প। এরপর মোটামুটি একটি স্টোরি লাইন তৈরি করে ক্যামেরা নিয়ে বসে পড়লাম সুতারখালি গ্রামে—ধারণ করলাম সৌমেন, রাখী ও রাহুলের গল্প।’—কথা শেষে দম নিচ্ছেন কামার। এ মুহূর্তে সারার দিকে চোখ ফেরানো যাক, ‘আমরা দুজনেই পড়তাম বুয়েটে, স্থাপত্যবিদ্যায়। এরপর কখন যে সিনেমার নেশায় বুঁদ হয়ে গেছি, টেরও পাইনি। আমরা অচিরেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুনতে কি পাও?-এর দেশব্যাপী প্রদর্শনী করব।’
‘এখানেও আমাদের আদর্শ তারেক ভাই। রানওয়ে ছবিটির ক্ষেত্রে যেভাবে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রদর্শনী করেছেন, আমরাও একইভাবে প্রদর্শনী করব। দর্শকই যদি না দেখতে পায় পুরস্কার জিতে কী লাভ?’—সারার মুখ থেকে কথা তুলে নিয়ে কথা বলতে বলতে কামার ছুড়ে দিলেন আরও কিছু বাক্য।
শুনতে কি পাও?-এর বৃত্তান্ত শোনা হলো। এবার কামার তাঁর নতুন যে ছবির পাণ্ডুলিপির জন্য ‘এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার পেলেন সে সম্পর্কে জানা যাক। ‘না, এখানে জানার তেমন কিছুই নেই। মাত্র ছবিটির পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছে। নামও ঠিক হয়নি। প্রতিযোগিতায় জমা দেওয়ার সময় নামের ক্ষেত্রে ওয়ার্কিং টাইটেল করে এটি জমা দিয়েছিলাম। পরে পাণ্ডুলিপিটি পুরস্কার জেতে। পুরস্কার জেতার অনুভূতি কি কখনো মন্দ হতে পারে? এর বেশি আর কী বলব, বলুন? আসলে সিনেমা আমার কাছে কেবল পণ্য নয়, এটা এখন আমাদের জীবনযাপনের অংশ।’—কথা শেষে কামার তাকালেন সারার দিকে। ওদিক থেকে ততক্ষণে ফুটে উঠেছে সম্মতিসূচক হাসি।
কামার ও সারার সঙ্গে কথোপকথন সমাপ্তি পর্বে গড়ায়নি। এর পরও আমাদের মধ্যে টুকরো টুকরো অনেক কথা হয়েছে বটে; কিন্তু সেসব না লিখলেও এমন কোনো ক্ষতি নেই!